কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পুনর্দাখিল-সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৭৭টি অভিযোগ উপস্থাপন

বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৭৭টি অভিযোগ উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গতকাল রোববার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ এগুলো উপস্থাপন করে।


বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আসামিপক্ষের বক্তব্যের জন্য ২৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো. কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গতকাল পুনর্দাখিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
শুনানি থাকায় গতকাল সাকা চৌধুরীকে কাশিমপুর কারাগার থেকে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুরুতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে শুনানি মুলতবির আরজি জানান আইনজীবী আহসানুল হক। তিনি গত ১২ জানুয়ারি সাকা চৌধুরীর পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য ওকালতনামা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে জমা দেন। তিনি সাকা চৌধুরীর পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবী প্রত্যাহার করে তাঁকে মামলার নথিপত্র সরবরাহের আরজি জানান।
পরে অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জেয়াদ আল-মালুম। তিনি বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৫টি ঘটনায় নয় ধরনের অপরাধের ৭৭টি অভিযোগ রয়েছে। একাত্তরের ১৩ এপ্রিল সাকা চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে চট্টগ্রামের রাউজান থানার মধ্য গহিরা, গহিরা বিশ্বাসপাড়া, জগৎমল্লপাড়া, কুণ্ডেশ্বরী, সুলতানপুরের বণিকপাড়া ও ঊনসত্তরপাড়ায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেন।
জেয়াদ আল-মালুম শুনানিতে একাত্তরের ১৩ এপ্রিল নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, নিরস্ত্র হিন্দু জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে নির্মূল করার জন্য ওই দিন মধ্য গহিরা ও বিশ্বাসপাড়ার গণহত্যার ধারাবাহিকতায় সকাল নয়টার দিকে সাকা চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে গহিরা গ্রামের শ্রীকুণ্ডেশ্বরী লিমিটেড নামক ঔষধালয়ে যান। তাঁরা ওই ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মৃত অখিল চন্দ্র সিংহের ছেলে নূতন চন্দ্র সিংহের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে চলে যান। ১০-১৫ মিনিট পর সাকা চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে আবার সেখানে যান এবং মন্দিরে প্রার্থনারত নূতন চন্দ্র সিংহকে টেনে-হিঁচড়ে মন্দিরের সামনে এনে হত্যার নির্দেশ দেন। ‘একে হত্যা করার জন্য বাবার (ফজলুল কাদের চৌধুরী) নির্দেশ আছে’—সাকা চৌধুরী এ কথা বললে পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে ‘ব্রাশফায়ার’ করে। গুরুতর আহত নূতন চন্দ্র যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকলে সাকা চৌধুরী তাঁকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
জেয়াদ আল-মালুম পরে সাংবাদিকদের বলেন, সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আটটি হত্যা, নয়টি অপহরণ, সাতটি বাস্তুচ্যুত করে নির্বাসিত জীবন যাপনে বাধ্য করা, ১০টি বন্দী করে রাখা, একটি ধর্ষণ, আটটি লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ, ১৫টি গণহত্যা, ১১টি নির্যাতন এবং গুরুতর আহত করার আটটি অভিযোগ এনে অভিযোগ গঠনের আরজি জানানো হয়েছে।
দুপুরে এক ঘণ্টা বিরতির পর ট্রাইব্যুনালে এই মামলা থেকে সাকা চৌধুরীকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদনের শুনানি করেন তাঁর পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. বদিউজ্জামান। অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে দাখিলকৃত আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ও মামলার অন্যান্য নথিপত্র পর্যালোচনা করে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য পর্যাপ্ত উপাদান পাওয়া যায় না।
শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল আদেশে বলেন, সাকা চৌধুরী তাঁর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ায় ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. বদিউজ্জামানকে প্রত্যাহার করছেন। বদিউজ্জামানকে রোববারের (গতকাল) মধ্যে মামলার নথিপত্র রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে ফেরত দিয়ে সোমবারের (আজ) মধ্যে ওই নথিপত্র সংগ্রহের জন্য আহসানুল হককে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পুনর্দাখিল: গতকাল কার্যক্রমের শুরুতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ ট্রাইব্যুনালকে জানান, সকালে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পুনর্দাখিল করা হয়েছে।
১১ ডিসেম্বর কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছিল। ২৮ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল তা রাষ্ট্রপক্ষকে ফেরত দেন এবং সুবিন্যস্ত করে ১২ জানুয়ারির মধ্যে পুনর্দাখিলের আদেশ দেন। তবে দাপ্তরিক সময় শেষ হওয়ায় ১২ জানুয়ারি তা জমা নেয়নি রেজিস্ট্রারের কার্যালয়।
১৩তম সাক্ষীর জবানবন্দি হয়নি: সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শেষ হতে বেলা সাড়ে তিনটা বেজে যায়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের অনুরোধে ট্রাইব্যুনাল আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কার্যক্রম মুলতবি করেন। ফলে সাঈদীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সকালে হাজির করা হলেও তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ১৩তম সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা হয়নি। আজ ১৩তম সাক্ষী জবানবন্দি দিলে তাঁকে জেরা করবেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

No comments

Powered by Blogger.