গোপালগঞ্জে দিনভর নানা কর্মসূচি-যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা সফল হবে না : প্রধানমন্ত্রী by পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য ও প্রসূন মণ্ডল

বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি 'যুদ্ধাপরাধীদের' বাঁচানোর চেষ্টা না করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে খালেদা জিয়ার চেষ্টা সফল হবে না। এ দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই হবে।'গতকাল বুধবার বিকেলে নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।


শেখ হাসিনাকে দেখতে এবং তাঁর বক্তব্য শুনতে দুপুর থেকেই অসংখ্য মানুষ আসতে থাকে শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে। শেখ হাসিনা সমাবেশে পেঁৗছানোর আগেই নির্ধারিত মাঠ ও মাঠ-সংলগ্ন রাস্তা মানুষে সয়লাব হয়ে যায়।
জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আন্দোলন করতে চান। বাংলাদেশের মানুষ বিরোধী দলের এই আন্দোলনে সাড়া দেবে না। মানুষ বিএনপি আমলের লুটপাট ও দুর্নীতির কথা ভুলে যায়নি। এই ক্ষত ভুলে যাওয়ার নয়।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি এ দেশের মানুষের প্রাণের দাবি। মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে এ বিচারের জন্য। খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করে কোনো লাভ হবে না। এ দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই হবে।'
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর মেয়ে কারো কাছে মাথা নত করে না। যত ঝড়-তুফান আসুক না কেন, আপনাদের
শক্তিতে আমি সেগুলো মোকাবিলা করব।'
বিএনপি আমলের দুর্নীতি, লুটপাটের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত যে লুটপাট করেছিল, যে অত্যাচার হয়েছিল তার চিহ্ন এখনো রয়ে গেছে। বাড়ি দখল, হত্যা, লুণ্ঠন, নির্যাতনের কথা মানুষ ভোলেনি। এই ক্ষত ভুলে যাওয়ার নয়।
শেখ হাসিনা তাঁর নিজ নির্বাচনী এলাকা টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ায় ভাষণ দিতে গিয়ে বারবার আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। বারবার বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, 'টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ার মানুষ আমাকে সাহস ও শক্তি জোগায়। আমি আপনাদের আত্মার আত্মীয়। যত দূরেই থাকি না কেন, আমি আপনাদের কাছেই আছি। আমি বাবা-মা-ভাইহারা। কিন্তু আপনাদের কাছে আমি এই ভালোবাসা পাই। আপনারাই আমার আপনজন।'
নিজ এলাকায় বারবার আসতে না পারার কথা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'প্রত্যেক সংসদ সদস্যের একটা নির্বাচনী এলাকা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। কিন্তু আমাকে ৩০০ আসনের উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করতে হয়, ব্যস্ত থাকতে হয়।'
এলাকার মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজে দ্রুত অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করার আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ক্ষমতায় থাকাকালে খালেদা জিয়া দুর্নীতি করে কালো টাকা অর্জন করেছেন। বিদেশে পাচার করেছেন এবং কালো টাকা সাদা করেছেন। সরকারের কাছ থেকে ছেলেদের শিক্ষার জন্য টাকা নিয়ে খালেদা জিয়া তাঁর ছেলেদের শিক্ষা দেননি। খালেদার দুই ছেলের একজন ড্রাগ খাওয়ায় এবং অন্যজন মানি লন্ডারিংয়ের ডিগ্রি নিয়েছে।'
কোটালীপাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি সুভাষ জয়ধরের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য দেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, ধর্ম সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, দলীয় সংসদ সদস্য তালুকদার মোহাম্মদ ইউনূস, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরন, মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন মোল্লা, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ইমদাদুল হক ও কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।
জনসভায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতির উদ্দেশ্য দুই সন্তান ও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো এবং নিজের বাড়ি উদ্ধার। লুটপাট ছাড়া খালেদা কিছুই উপহার দিতে পারেননি। তিনি বলেন, খালেদা মানি লন্ডারিং করে বিদেশে টাকা পাচার করতে আবার ক্ষমতায় আসতে চান।
কয়েক দিন ধরে ঢাকাসহ সারা দেশে তাঁর পদত্যাগের গুজব রটে গেলেও গতকাল সারা দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। বিভিন্ন সময়ে দলীয় সভাপতির সঙ্গে পরামর্শও করেছেন। নিজ মন্ত্রণালয় এবং দলীয় সব অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।
সকালে হেলিকপ্টারযোগে গোপালগঙ্গে আসেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভায় যোগ দেওয়ার আগে তিনি বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন (বাপার্ড) একাডেমী এবং কোটালীপাড়া পৌর ভবন উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। জনসভা শেষ করে বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন।

No comments

Powered by Blogger.