মেয়েদের ক্রিকেটে 'আগামীর শেন ওয়ার্ন' by কামরুল হাসান

প্রথম দেখায় মনে হবে 'দ্য গার্ল নেঙ্ট ডোর' সিনেমার সেই মেয়েটি। যার হাসিতে দোলে পাশের বাসার কিশোরের হৃদয়!ভুলটা ভাঙল এলেনা টাইসকে বোলিং করতে দেখার পর। নেটে ঘেরা মিরপুরের অনুশীলন উইকেটে বেশ কয়েকটা বল এত ভালো টার্ন নিল যে পাশে দাঁড়ানো এক সহকর্মী বলেই ফেললেন, এ যে রীতিমতো বিষ মাখানো বল! বাংলাদেশের বিপক্ষে এমন বল করলে তো...


করলে কী হবে সেটা পরের ভাবনা। সত্যি কথা হচ্ছে, বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে এখন পর্যন্ত যে দুটি ম্যাচ খেলেছে তাতে আসল সময়ে তার বলে এমন ধার দেখা যায়নি, যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে। আমাদের সালমা-শুকতারাদের জন্য এটা নিঃসন্দেহে সুখবর। এর পরও তাকে ঘিরে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে এর কারণ, হাসি-বিষের এমন মিশেল যে মেয়েটির মধ্যে সেই এলেনা টাইস এরই মধ্যে বিশ্বরেকর্ড করেছে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে। পুরুষ ও মহিলাদের ক্রিকেট মিলিয়ে তার চেয়ে কম বয়সে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে কেবল সাজিদা খান নামে এক পাকিস্তানি কিশোরীর। ১২ বছর ২৭১ দিন বয়সে সাজিদা তার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচটা খেলেছিল টাইসেরই দেশ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। মাস কয়েক আগে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে যখন অভিষেক হয়, সেদিন এলেনা টাইসের বয়স ১৩ বছর ২৭১ দিন!
কারণ আরো একটা আছে এবং সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দুই ম্যাচে আহামরি কিছু করতে না পারলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে আগামীকালের ম্যাচে আইরিশ এই লেগ স্পিনার থাকছে এবং কোচ-অধিনায়ক দুজনেরই ধারণা, এই মেয়েটাই যে কোনোদিন তাঁদের তুরুপের তাস হয়ে উঠবে। এমনকি তার মধ্যে মেয়েদের ক্রিকেটের শেন ওয়ার্ন হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও দেখছেন কেউ কেউ!
শেন ওয়ার্ন! সে তো যেনতেন ব্যাপার নয়। কথা বলতে গিয়ে তাই শুরুতেই সেই প্রসঙ্গটা এল। টাইসও স্বীকার করলেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি লেগ স্পিনারই এখন তার ধ্যান-জ্ঞান, বড় হয়ে সে ওয়ার্নের মতো স্পিনারই হতে চায়! দারুণ ব্যাপার। কিন্তু একটু দূরে দাঁড়ানো টাইসের এক সতীর্থ সেটা শুনে বলল, 'তুমি সাংবাদিককে গ্রায়েম সোয়ানের কথাটা বললে না?'
সোয়ানের ব্যাপারটা কী? জিজ্ঞেস করতেই মুচকি হেসে এলেনা জানাল, 'ওকেও আমার ভালো লাগে।'
তার মানে ওয়ার্ন, সোয়ান দুজনেই তোমার প্রিয় স্পিনার?
নাহ, সোয়ানকে ভালো লাগে অন্য কারণে।
কারণটা যে ক্রিকেটীয় নয়, সেটা বোঝা গেল এলেনার মুখে রক্তিম আভা দেখে। সেদিকে না গিয়ে তাই আবারও প্রসঙ্গ পাল্টাতে হলো।
জানা গেল গতকাল চৌদ্দতে পা দেওয়া এই কিশোরীর ক্রিকেটে হাতেখড়ি সেই পাঁচ বছর বয়স থেকে। ইংল্যান্ডের হ্যাম্পশায়ারে জন্ম নেওয়া টাইসের বাবা-দাদা দুজনেই ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন। তবে উৎসাহটা বেশি পেয়েছে বড় ভাই প্যাট্রিকের কাছ থেকে। প্যাট্রিক নিজেও আয়ারল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেন উইকেটরক্ষক হিসেবে। এরকম গল্প অবশ্য শুধু টাইস কিংবা আয়ারল্যান্ড দলের ক্রিকেটারদের নয়, মহিলা বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব খেলতে আসা আরো অনেক দেশের অনেক মেয়ের আছে। এলেনা টাইস একটু আলাদা; কারণ অন্য অনেকের মতো সে শুধু ছুটির দিনে খেলে খেলে ক্রিকেটার নয়, নিজে নিয়মিত খেলে এবং বিশ্ব-ক্রিকেটের অনেক খবরই তার নখদর্পণে। শচীন টেন্ডুলকার শততম সেঞ্চুরির অপেক্ষায় আছেন, স্পট ফিঙ্ংিয়ের জন্য পাকিস্তানের তিন ক্রিকেটারের জেল হয়েছে, তার দল আয়ারল্যান্ডের হয়ে কেভিন ও'ব্রায়েন বিশ্বকাপে দারুণ খেলেছেন_সবই জানে সে। বাংলাদেশের কাছে বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের হারের ব্যাপারটাও তার জানা!
খুব কষ্ট পেয়েছিলে নিশ্চয়ই? আগামীকাল কি তোমরা সেই হারের শোধ নিতে চাও?
না সেটা কী করে হবে! সেটা তো বিশ্বকাপ আর এটা বাছাই পর্ব। বাংলাদেশ যদি হারেও তাহলেও শোধ নেওয়া হবে না। বরং আমাদের লক্ষ্য আগে বিশ্বকাপের মূল পর্বে যাওয়া এবং তারপর আমার ইচ্ছা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটা ম্যাচ জেতা। কেভিনরাও (ও'ব্রায়েন) তো ছেলেদের বিশ্বকাপে জিতেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
আরেক দফা বোলিং করতে কোচ ট্রেন্ট জনস্টন ডেকে নেওয়ায় কথা শেষ করা হলো না। কিন্তু যেটুকু হলো তাতে বোঝা গেল, আইরিশ এই কিশোরীর স্বপ্ন অনেক বড়।
আমাদের সালমা-শুকতারারা কি পারবেন এলেনার সেই স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে?

No comments

Powered by Blogger.