ডিসেম্বরে বাজারজাত-বাজারে আসছে ভিটামিন 'এ' সমৃদ্ধ ভোজ্যতেল by শেখ আবদুল্লাহ

দেশের সাধারণ জনগণের ভিটামিন 'এ'-এর অভাব পূরণে ভোজ্যতেলের সঙ্গে ভিটামিন 'এ' মিশিয়ে বাজারজাত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য 'ফর্টিফিকেশন অব এডিবল অয়েল ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয় দেশের তিনটি বেসরকারি ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে।
এসব কোম্পানিকে বুধবার ভিটামিন উপাদান ও ডোজিং পাম্প সরবরাহ করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া আরও তিনটি পরিশোধনকারী কোম্পানির সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভিটামিন সমৃদ্ধ এসব ভোজ্যতেল বাজারজাত শুরু হবে বলে আশা করছে শিল্প মন্ত্রণালয়। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বেশ আগে নেওয়া হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে যথাসময়ে শুরু করা যায়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোস্তফা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, এস আলম গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এসব কোম্পানিকে ভিটামিন উপাদান এবং তেলে ভিটামিন উপাদান সম্পৃক্ত করার মেশিন ডোজিং পাম্প সরবরাহ এখন সম্পন্ন হলো। যদিও এ কাজ আরও ছয় মাস আগে শেষ হওয়ার কথা ছিল। আগামী সপ্তাহ থেকে এসব কোম্পানির বোতলজাত তেলে ভিটামিন সম্পৃক্ত করার কাজ শুরু হবে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাজারজাত শুরু হতে পারে। এ ছাড়া নূরজাহান গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড ও ইলিয়াচ ব্রাদার্সের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ২৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা খরচ হবে। ইউনিসেফের মাধ্যমে গ্গ্নোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন প্রকল্পের এই অর্থ সরবরাহ করছে। প্রকল্পটির মেয়াদ আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রয়োজনে আরও এক বছর বাড়তে পারে মেয়াদ।
জানা গেছে, এই তেল মানুষ যাতে খায় সে জন্য সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাবে শিল্প মন্ত্রণালয়। ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ সম্পৃক্ত করতে প্রতি লিটারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আট পয়সা খরচ হবে। এ কারণে তেলের দাম বাড়ানো যাবে না। ইতিমধ্যে ৩ দশমিক ৩ টন ভিটামিন এ এবং রিফাইনারি কোম্পানিগুলোর জন্য ৭টি ডোজিং পাম্প আমদানি করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এসব ভিটামিন ও ডোজিং পাম্প রিফাইনারি কোম্পানিগুলোতে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সরকার ভিটামিন 'এ' ঘাটতি পূরণে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তাতে উদ্দেশ্য সফল হবে না। কারণ দেশে ভিটামিনের অভাব মূলত দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে বেশি। বর্তমানে বোতলজাত তেলের মাধ্যমে ভিটামিন 'এ' সরবরাহ করা হচ্ছে। দরিদ্ররা বোতলজাত তেল খায় না। শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে বলা হয়েছে, সরকার ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে দেশে ৫ বছর বা তার কম বয়সের এক কোটি ৬১ লাখ শিশুর ভিটামিন 'এ' এর চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়েছে। ৬ থেকে ১৯ বছরের ৪ কোটি ২০ লাখ ছেলেমেয়ে এবং ৩ কোটি ২০ লাখ মহিলা যারা গর্ভধারণে সক্ষম তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন 'এ' পাচ্ছে না।

বিশ্বের অন্যান্য দেশে চাল, আটা ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মাধ্যমে ভিটামিন 'এ' সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশের সব জনগণ কোনো না কোনো উপায়ে ভোজ্যতেল খাচ্ছে এবং ভোজ্যতেলে সহজে ভিটামিন সম্পৃক্ত করা যায়। এ জন্য সরকার ভোজ্যতেলের মাধ্যমে ভিটামিন 'এ' এর ঘাটতি দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.