অন্য দেশ-আলজেরিয়া

ভূমধ্যসাগরের তীরে উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া। সুদান ভাগ হয়ে যাওয়ার পর আলজেরিয়া এখন আয়তনে আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে বড় দেশ। পাশাপাশি আরব বিশ্ব ও ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোর মধ্যেও আয়তনে আলজেরিয়া সবার বড়। আর বিশ্বের দশম বৃহত্তম দেশ আলজেরিয়া। এর উত্তর-পূর্বে তিউনিসিয়া, পূর্বে লিবিয়া, পশ্চিমে মরক্কো, দক্ষিণ-পশ্চিমে সাহারা মরুভূমির পশ্চিমাঞ্চল, মৌরিতানিয়া ও মালি।
দক্ষিণ-পূর্বে নাইজার এবং উত্তরে ভূমধ্যসাগর।ইতিহাসআলজেরিয়ার আরবি নাম আলজাজাইর (অর্থাৎ দ্বীপসমূহ); রাজধানীর তীরসংলগ্ন দ্বীপগুলোকে নির্দেশ করতেই এমন নাম। প্রত্নতাত্তি্বকদের মতে, আলজেরিয়ার ইতিহাস বহু পুরনো। খ্রিস্টপূর্ব ২০২ অব্দে আলজেরিয়া পরিচিত ছিল নামিদিয়া রাজ্য নামে। তাদের রাজত্ব ছিল ৪৬ অব্দ পর্যন্ত। এ অঞ্চলের আদিবাসীরা উত্তর আফ্রিকার বার্বার গোষ্ঠীর বংশধর। বার্বাররাই প্রথম উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় বসতি স্থাপন করেছিল। ৪৬ অব্দে রোমানরা আলজেরিয়ার দখল নেয়। সপ্তম শতকের শেষভাগে আরব মুসলিমরা আলজেরিয়াসহ উত্তর আফ্রিকা জয় করে এবং ইসলাম ও আরবি ভাষার প্রচলন করে। ১৯ শতকের মাঝামাঝি থেকে আলজেরিয়া ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। ১৯৬২ সালে ইতিহাসের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে তারা। আট বছর ধরে সংঘটিত যুদ্ধে দেশটির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। এরপর ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে সামরিক বাহিনী ও ইসলামী মৌলবাদীদের মধ্যে সংঘর্ষ দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। যদিও সরকারি উদ্যোগের ফলে শুরুতেই এ যুদ্ধ অনেকাংশেই দমন সম্ভব হয়েছে।
আলজেরিয়ার বেশির ভাগ লোক আরব, বার্বার কিংবা এ দুইয়ের মিশ্রণ। বর্তমানে জনসংখ্যা তিন কোটি ৬৪ লাখ ২৩ হাজার। বেশির ভাগ মানুষ মুসলমান ও আরবিভাষী। সংখ্যালঘু বার্বারেরা ইসলাম গ্রহণ করলেও নিজ ভাষা ও রীতিনীতি বিসর্জন দেয়নি। আলজেরিয়ায় ফরাসি ভাষাও বহুল প্রচলিত।

রাজনীতি
সংবিধান অনুযায়ী আলেজিরয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশ। তবে ২০১০ সালের গণতন্ত্র সূচকে সেখানকার শাসনব্যবস্থাকে কর্তৃত্ববাদী বলে অভিহিত করা হয়েছে। সরকারব্যবস্থা প্রেসিডেন্ট শাসিত। প্রেসিডেন্ট পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। পার্লামেন্ট দুই কক্ষবিশিষ্ট।

ভৌগোলিক চিত্র
আলজেরিয়ার আয়তন ২৩ লাখ ৮১ হাজার ৭৪১ বর্গকিলোমিটার। দেশটির নয়-দশমাংশজুড়ে সাহারা মরুভূমি। ভূমধ্যসাগরের তীরে উপকূলীয় সমভূমি রয়েছে। জনসংখ্যার বেশির ভাগ উত্তরাঞ্চল উপকূলের কাছে বাস করে।

অর্থনীতি
স্বাধীনতার সময় আলজেরিয়ার অর্থনীতি ছিল অনুন্নত ও কৃষিনির্ভর, তবে সরকার শিগগির এটি আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে আলজেরিয়া আফ্রিকার ধনী দেশগুলোর একটি। এর অন্যতম কারণ পেট্রোলিয়াম রপ্তানি। মোট রাজস্বের ৬০ ভাগই আসে পেট্রোলিয়াম রপ্তানি থেকে। পেট্রোলের মজুদের দিক থেকে আলজেরিয়ার অবস্থান বিশ্বে ১৪তম। উর্বর জমির জন্য বরাবরই আলজেরিয়ার সুনাম ছিল। আবাদযোগ্য জমিতে মূলত তুলা, জলপাই ও তামাক উৎপাদন হয়।

শহর
প্রদেশের সংখ্যা ৪৮। ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত আলজিয়ার্স বৃহত্তম শহর ও রাজধানী।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আরব দেশগুলোর মধ্যে আলজেরিয়াই প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৪ সালে লাহোরে আয়োজিত ওআইসি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য ব্যক্তিগত বিমান পাঠিয়েছিলেন আলজেরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোয়ারি বোমেদিন। আলজেরিয়ায় বাংলাদেশের আবাসিক কোনো মিশন নেই। মিসরে নিয়োজিত বাংলাদেশি দূতাবাস আলজেরিয়ায়ও প্রতিনিধিত্ব করে। আলজেরিয়ায় কী পরিমাণ বাংলাদেশি বসবাস করে সে ব্যাপারে বাংলাদেশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে নির্দিষ্ট কোনা তথ্য নেই। তবে সে সংখ্যা খুব বেশি না।

একনজরে আলজেরিয়া

রাষ্ট্রভাষা : আরবি
প্রেসিডেন্ট : আবদেল আজিজ বৌতেফ্লিকা
আয়তন : ২, ৩৮১, ৭৪১ বর্গকিলোমটিার
জনসংখ্যা (২০১০) : ৩৬, ৪২৩, ০০০
মুদ্রা : আলজেরীয় দিনার

No comments

Powered by Blogger.