অর্থহীন ও অসমাপ্ত-২-মাসখানের আগে মুঠোফোনে রিলিজ হয়েছিল অর্থহীনের ষষ্ঠ একক অ্যালবাম 'অসমাপ্ত-২'। অ্যালবামটি ডেডলাইন মিউজিকের ব্যানারে সিডি আকারে বাজারে আসছে চলতি মাসেই। অর্থহীন ও তাদের নতুন অ্যালবাম নিয়ে এই প্রতিবেদন। by রবিউল ইসলাম জীবন

মরা সব সময়ই অল্প সময় নিয়ে অ্যালবাম করে থাকি। এই অ্যালবামটি করেছি মাত্র ৯৬ ঘণ্টায়। এতে মূলত দুই ধরনের গান আছে। মেলোডি ও হেভি মেটাল। তবে সুর ও সংগীতে বরাবরের মতো এবারও আমরা ভিন্নতা রাখার চেষ্টা করেছি।' ব্যান্ডের ষষ্ঠ একক অ্যালবাম 'অর্থহীন-২' সম্পর্কে বলছিলেন অর্থহীনের সুমন। এত অল্প সময়ে অ্যালবাম করার রহস্যটা কী! বলেন, "অ্যালবাম করার জন্য আমরা সব সময় কম সময় নিই।


এটা আমার একক অ্যালবামের ক্ষেত্রেও। আমার একক অ্যালবাম 'স্বপ্নগুলো তোমার মতো' করেছিলাম মাত্র ছয় দিনে। এ ছাড়া অর্থহীনের 'বিবর্তন' অ্যালবামটি করেছি ১৫ দিনে। সেই হিসাবে এটাই সবচেয়ে কম সময়ে করা।
আমার মতে, গান করার জন্য বেশি সময় দরকার নেই। কাজ করার সময়টায় শতভাগ মনোযোগ রাখলেই হলো। একটানা স্টুডিওর মধ্যে থেকেই আমরা এ অ্যালবামটি শেষ করেছি। এতে একসঙ্গে গান লেখা, সুর করা ও সংগীতায়োজনের কাজ হয়েছে। তা ছাড়া একই সময়ে কাজটি শেষ করে ফেললে পুরো অ্যালবামটি একই মুড এবং সাউন্ডে করা যায়।" পরের অ্যালবাম কি আরো কম সময়ে করা হবে? এবার হেসে উঠলেন বেজ বাবাখ্যাত এই গায়ক। 'সেই রকম ইচ্ছা কিন্তু আছে। প্রতিবারই আমরা নিজেদের রেকর্ড নিজেরা ভাঙছি। এভাবে কাজ করাটা আমরা উপভোগ করি। কাজে আনন্দ পাই, মজা পাই।'
'অসমাপ্ত-২' অ্যালবামটিতে মোট গান রয়েছে ১১টি। ১০টি গানের কথা লিখেছেন সুমন নিজেই। একটি গানের কথা লিখেছেন রাজীব হাসান। গানগুলোর শিরোনাম 'উড়ু উড়ু মন', 'আলো আর আঁধার', 'আনমনে-টু', 'সূর্য-টু', 'নিকৃষ্ট-টু', 'গল্পের শুরু' (অদ্ভুত সেই ছেলেটির দ্বিতীয় ভার্সন), 'মাঝে মাঝে', 'আবার', 'আকাশের তারা', 'যাক না' ও 'ক্যান্সার'। এবারই প্রথম ক্যান্সার নিয়ে গান করেছে অর্থহীন। গানটি তৈরির গল্প জানাতে গিয়ে সুমন বলেন, 'ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন আমাদের বন্ধু সারাহ হাফিজ। তাঁর মৃত্যু আমাদের বেশ ভাবিয়েছে। তা ছাড়া এ ব্যাধিটি এখন সারা বিশ্বেই বড় আকার ধারণ করছে। এসব বিবেচনা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই গানটি করেছি। গানটি আমরা উৎসর্গ করেছি সারাহ হাফিজকে। অ্যালবামটি করার সময় অসুস্থ ছিলেন কমল। ফলে কাজ এগিয়ে নেন সুমন, রাফা ও শিশির। তবে শেষ দিকে দু-তিনটি গানে বাজিয়ে নিজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন কমল।
১৯৯৯ সালের ১৭ অক্টোবর যাত্রা শুরু করেছিল অর্থহীন। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে একযুগ। এর আগে অর্থহীন প্রকাশ করেছে 'ত্রিমাত্রিক' (২০০০), 'বিবর্তন' (২০০১), 'নতুন দিনের মিছিলে' (২০০২), 'ধ্রুবক' (২০০৩) এবং 'অসমাপ্ত-১' (২০০৮)। শেষ অ্যালবামের পর এবারেরটিও এসেছে পাঁচ বছর পর।
এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে কোনো অনুষ্ঠান করবেন না? প্রশ্নটা শুনে খুশির আবীর অর্থহীন সদস্যদের। বিষয়টি যে তাঁরা খেয়ালই করেননি। শুরুতে হাসির তোড়ে বিষয়টি উড়িয়ে দিতে চাইলেন সুমন_'ব্যান্ডের এক যুগ হয়ে গেছে। মানে তো আমরা বুড়ো হয়ে যাচ্ছি।' পরক্ষণেই উত্তর দিলেন গিটারিস্ট কমল_'যুগপূর্তি উপলক্ষে এ বছর সময়-সুযোগ বুঝে একটা একক কনসার্ট করব।' আরেক গিটারিস্ট ও কিবোর্ড বাদক শিশির বলেন, 'আমরা আসলে সব কিছুই হুটহাট করে ফেলি। এবারও সে রকম কিছুই হবে। তবে নিশ্চয়ই শ্রোতার পছন্দ হবে।' যে স্বপ্ন নিয়ে অর্থহীন পথচলা শুরু করেছিল, তার কতটা পূরণ হয়েছে। সুমন জানান, 'আমাদের পরিকল্পনা ছিল এক বছরের মধ্যে এমন পর্যায়ে পেঁৗছানো, যাতে সবাই আমাদের ভালোভাবে চিনতে পারে। প্রথম অ্যালবাম দিয়েই আমরা সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছি। এর পরও যতটুকু এসেছি, সেটাকে বলতে পারেন বোনাস। তবে এখানে থেমে না থেকে আমরা আরো সামনে এগিয়ে যেতে চাই।'
কমল বলেন, 'নিজেদের মধ্যে একতা বজায় রেখে শ্রোতাদের আরো কাছাকাছি পেঁৗছতে চাই আমরা।' তাঁর কথার সঙ্গে সায় দিলেন বাকিরাও।
উল্লেখ্য, মাসখানেক আগে 'বাংলালিংক মিউজিক স্টেশন'-এ গানগুলো দেওয়া হয়েছে। যেকোনো বাংলালিংক গ্রাহক ৫৮৫৮ নম্বরে ডায়াল করে শুনতে পারছেন অর্থহীনের নতুন অ্যালবামের গানগুলো। ২৫ নভেম্বর ডেডলাইন মিউজিকের ব্যানারে 'অসমাপ্ত-টু' সিডি আকারে বাজারে আসবে।
অর্থহীনের সদস্যরা হলেন_সুমন (ভোকাল ও বেজ), রাফা (ভোকাল ও ড্রামস), কমল (গিটার) ও শিশির (গিটার ও কিবোর্ড)।

No comments

Powered by Blogger.