কী মজা তাদের by আসিফ আহমেদ

চার মাস আগে ১০ ও ১১ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সম্মেলনের সময়েই নির্বাচন করা হয়। এরপর থেকে অপেক্ষার পালা ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের। ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল বেশ আনুুষ্ঠানিকতার ঢঙে_ জুলাইয়েই কমিটি গঠিত হবে। দীর্ঘ সময় অতিক্রম করার পর ঘোষকরা বলতেই পারেন_ কোন জুলাই, সেটা কি বলা হয়েছিল? এটাও বলতে পারেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে


কিছু নেই। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে হলে 'বয়স ফ্যাক্টর' অতিক্রম করতে হয়_ ২৯ বছরের মধ্যেই থাকতে হবে। ছয় দশকেরও বেশি আগে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনের নিয়ম। কিন্তু নিয়ম আরও আছে_ কমিটির মেয়াদ হবে দুই বছর। অথচ ১০ ও ১১ জুলাই সম্মেলন হয়েছিল ৭ বছর পর। সে সময় যারা ২৯-এর ফাঁড়ায় পড়ে, তাদের অভিযোগ ছিল_ সময়মতো সম্মেলন না হওয়ায় আমাদের করুণ বিদায় নিতে হচ্ছে। দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায়। ক্ষমতার হাজারো সুফল পায়ের কাছে প্রতিনিয়ত লুটিয়ে পড়ছে। ছাত্র সংগঠনের মতো প্রভাবশালী সংগঠনের নেতৃত্বে থাকলে এ সুবিধার একটি অংশ নিজের জন্য তুলে নেওয়া কোনো ব্যাপারই নয়। অথচ সে সময়েই 'ট্রিকস' করে নেতৃত্বের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে দেওয়া হলো না!
বর্তমান কমিটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে সমস্যা কোথায়, সেটা সমকালকে বলেছেন সংগঠনের সভাপতি। তিনি বলেন, 'কর্মী মূল্যায়নে একেকজন একেক রকম মত দেওয়ায় কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। খুব দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।'
'দ্রুত' বলতে কী বোঝায়, আমরা জানি না। তবে মূল্যায়ন হওয়াটা জরুরি। মূল্যায়নের সংজ্ঞা কী, সেটাও প্রকাশ করা দরকার। এটা কি লাইসেন্সবাজি-ছাত্রাবাস দখলে পারদর্শিতা? নাকি ছাত্রছাত্রীদের আস্থা অর্জন? নারায়ণগঞ্জের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম ওসমান মেয়র নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন। এরপরও তার হুঙ্কার, দশ মিনিটের মধ্যে সব ভোটকেন্দ্র দখল করে নিতে পারতেন। কিন্তু করেননি একটি কারণে_ প্রধানমন্ত্রীর বদনাম হবে। তিনি আরও জানান, মাত্র ১৫ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ শহরে ৫ লাখ লোক সমবেত করার ক্ষমতা তার রয়েছে। অথচ নির্বাচনে তিনি এক লাখের বেশি ভোটে হেরেছেন_ ভোট পেয়েছেন ৭৮ হাজার। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরও নারায়ণগঞ্জে পশুর হাটগুলোর বেশিরভাগের ইজারা পেয়েছে তার সমর্থকরা। সমকালে ৬ নভেম্বর প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম : 'ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করায় ঠিকাদার শ্রীঘরে'। পিরোজপুরে একটি টেন্ডারে এক ঠিকাদার অংশ নেওয়ার 'অপরাধে' মিথ্যা মামলায় এখন কারাগারে। কমিটি গঠনের জন্য এ ধরনের যোগ্য লোকদেরই কি সন্ধান করা হচ্ছে? ছাত্রলীগ নেতৃত্ব কি নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে কমিটি গঠন করতে পারে না, যাদের বয়স সর্বোচ্চ ২৩-২৪ বছরের মধ্যে হবে? যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে দেখা যাবে যে এ বয়সের বেশি কোনো শিক্ষার্থী নেই। তাহলে ছাত্রলীগে কেন অধিক বয়স্করা স্থান পাবে? ছাত্রলীগের কমিটি গঠন যত বিলম্বিত হবে, নতুন সমস্যা কিন্তু দেখা দেবে। সম্মেলনের সময় যেসব নেতার বয়স ছিল ২৮ বছর ৮ মাস, তাদের বয়স এখন ২৯ বছর অতিক্রম করে গেছে। এ কারণে কি তাদের নতুন কমিটিতে স্থান হবে না? কমিটির মেয়াদ দুই বছর। এর গণনা কবে থেকে শুরু হবে সেটাও প্রশ্ন। সম্মেলন হয়েছে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সে সময়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ওই সময় থেকে কমিটির মেয়াদ ধরা হলে বিপদে পড়বেন পূর্ণাঙ্গ কমিটির বাদ-বাকি সদস্য ও কর্মকর্তারা। আর যদি তাদের 'মনোনীত হওয়ার' তারিখ থেকে মেয়াদ ধরা হয়, তবে বোনাস পাবেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ফাও সময় কাটছে_ কী মজা তাদের!
 

No comments

Powered by Blogger.