শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা-সরকারের নতি স্বীকার প্রত্যাশিত নয়

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব কানাডার একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রদানের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করার ঘটনাটি উদ্বেগজনক। কানাডার একটি কম্পানি_ভিজ্যুয়াল ডিফেন্স ইনকরপোরেশনকে কাজ দেওয়ার জন্য কারা চাপ প্রয়োগ করছে, তা সংবাদে স্পষ্ট না হলেও প্রভাবশালী মহল যে এর পেছনে কাজ করছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।


আর তাদের ক্ষমতাও যে বিশাল, তাও বোঝা যায়। সুতরাং অপ্রয়োজনীয় কিংবা বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রতীয়মান হলে এই চেষ্টা রোধ করতে সরকারের সর্বোচ্চ মহলেরও হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হতে পারে। পত্রিকার সংবাদে বলা হয়েছে, কানাডার ওই প্রতিষ্ঠানটি প্রথম বছরেই তাদের বিনিয়োগের টাকা তুলে নেওয়ার পরও ৬৫৪ কোটি টাকা মুনাফা করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, তারা এভাবে ২৫ বছর পর্যন্ত টোল আদায় করে যাবে। সংগত কারণেই বোঝা যাচ্ছে, বিমানবন্দরে যাত্রীদের কাছ থেকে সমুদয় অর্থ আদায় করা হবে_যার পরিমাণ মাথাপিছু ৩৫ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দরে নিরাপত্তার জন্য অর্থ আদায় নতুন কিছু নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একজন যাত্রীর কাছ থেকে ৩৫ মার্কিন ডলার আদায় করার মতো কোনো উদাহরণ কোথাও নেই। যদি এই প্রস্তাব মানা হয়, তাহলে বাংলাদেশই নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ অর্থ আদায়কারী দেশ হিসেবে গণ্য হবে। বাংলাদেশকে এখনই ভাবতে হবে, এই নিরাপত্তা ফি আদায় করা হলে বিদেশগামী শ্রমিকদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদেরও তা ক্ষতির মুখে ফেলবে। এমনিতেই বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ হচ্ছে না, সেখানে এই ফি আরোপের বিষয়টি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আলোচনা চলছে, তাদের স্বচ্ছতা এবং সততা সম্পর্কেও কথা থেকে যায়। প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রদান করেনি। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ অথচ কোনো টেন্ডার হবে না_এ ব্যাপারটিকেও স্বাভাবিক বলা যায় না। আর নিরাপত্তার জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, তার অনেক কিছুই বাংলাদেশ নিজে সম্পন্ন করতে পারে। তার পরও এত বড় প্রকল্পটি কোন কারণে বিদেশি এই কম্পানিকে প্রদান করা হচ্ছে, তাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এমন অবস্থায় সরকারকে অতি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে। কারো চাপে কিংবা অনুরোধে সরকার নতিস্বীকার করবে_এটা প্রত্যাশিত নয়।

No comments

Powered by Blogger.