ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে প্রস্তাব তৈরির ঘটনা তদন্তের নির্দেশ-বিমানবন্দরের নিরাপত্তা প্রস্তাব শর্ত সাপেক্ষে প্রত্যাহারের কথা বলছে কানাডীয় কম্পানিটি

ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়ানো-সংক্রান্ত কানাডীয় কম্পানি ভিজ্যুয়াল ডিফেন্স ইনকরপোরেশনের (ভিডিআই) প্রস্তাব তৈরির ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) এ নির্দেশ দেয়। এদিকে ভিডিআই গত মঙ্গলবার রাতে শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব শর্ত সাপেক্ষে প্রত্যাহার করার কথা জানিয়েছে।


বেবিচক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়াতে ভিডিআইয়ের প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করে প্রস্তাব তৈরি করে। পরে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তা বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এ প্রস্তাবে ভুয়া তথ্য ও কাগজপত্র ছিল বলে জানা গেছে।
বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদের গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ইস্যুতে পাঠানো প্রস্তাবে কিছু তথ্যগত বিভ্রাট রয়েছে। এসব তথ্যগত বিভ্রাটের নেপথ্য কারণ খুঁজে বের করার জন্য তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, 'ভিডিআই তাদের প্রস্তাব প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আমরা অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে নিয়ে যাব। কারণ একটা প্রস্তাব মাঝামাঝি পর্যায়ে প্রত্যাহারের সুযোগ নেই।
গত মঙ্গলবার ভিডিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট ই গ্রেসটিন শর্তসাপেক্ষে তাদের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন। যতক্ষণ পর্যন্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এ বিষয়ে সন্তুষ্ট না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের প্রস্তাব প্রত্যাহার হিসেবে বিবেচনা করার জন্য বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদেরকে অনুরোধ জানান তিনি। একই সঙ্গে তিনি আগামী সপ্তাহে তাঁর দক্ষিণ এশিয়া সফরের সময় বাংলাদেশে এসে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ইস্যুতে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করেন। ভিডিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট তাঁর চিঠিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের কঠোর সমালোচনা করেন।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম কানাডীয় কম্পানিটির সমালোচনা করে সংবাদ প্রকাশ করে। কারণ ভিডিআই তাদের প্রস্তাবে বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশগামী যাত্রীদের কাছ থেকে নিরাপত্তা বাবদ ৩৫ ডলার করে আদায়ের পরিকল্পনা পেশ করে। অদায় করা অর্থের মধ্যে ১৫ ডলার পাবে বাংলাদেশ, অবশিষ্ট ২০ ডলার নিয়ে যাবে কম্পানিটি। এভাবে ২৫ বছর তারা অর্থ আদায় করবে। ২৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেরিয়ে যাবে। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে কর্তৃপক্ষ পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ২০১০ সালের নভেম্বরে বেবিচকে প্রস্তাব জমা দেয় ভিডিআই। প্রস্তাবটি গত ২৭ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়। কম্পানিটি নিরাপত্তার জন্য ২৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। ভিডিআই সরকারকে জানায়, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য তারাই আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার (ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন-আইএটিএ) একমাত্র কৌশলগত অংশীদার। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কানাডিয়ান কম্পানি ভিডিআই আইএটিএর একমাত্র কৌশলগত অংশীদার নয়।
এদিকে আইএটিএ বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, বহির্গামী যাত্রীদের কাছ থেকে ৩৫ মার্কিন ডলার করে আদায় করা হলে সেটা হবে বিশ্বে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ফি। এতে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে, এ বিষয়ে ভিডিআই এবং বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের কোনো চুক্তি হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.