খাপছাড়া ফন স্যান্ট by পিপ্পলি কেয়ারি

সাধারণ পরিচালকদের কাছে চলচ্চিত্র মানেই নিয়মের ছড়াছড়ি। ধরুন, কোনো ব্যক্তি তাঁর বন্ধুর বাড়িতে যাবেন। তিনি গাড়িতে উঠলেন। গাড়ির ইঞ্জিন চালু হলো। চাকা ঘুরল। বন্ধুর বাড়ির সামনে থামল গাড়ি। এরপর দ্রুত বন্ধুর বাড়িতে ঢোকার পরই শুরু হলো সংলাপ। বেশির ভাগ পরিচালক কিংবা চিত্রনাট্যকার তাঁদের অবচেতন মনে ছোটেন সংলাপের পেছনে। তবে সবাই একভাবে চিন্তা করেন না। মার্কিন পরিচালক গাস ফন স্যান্ট ব্যতিক্রমী একজন।


তিনি খুঁজে বেড়ান চরিত্রের প্রাণ-তারুণ্য। প্রাণ যেখানে সেদিকেই তাক করা থাকবে ক্যামেরা। তাঁর হাতেই তৈরি হয়েছে 'গুড উইল হান্টিং', 'গ্যারি', 'ড্রাগস্টোর কাউবয়', 'এলিফ্যান্ট' ও 'মিল্ক'-এর মতো অন্য ব্যাকরণের ছবি। কিছুদিন হলো মুক্তি পেয়েছে তাঁর সর্বশেষ ছবি 'রেস্টলেস'। গাস ফন স্যান্ট বরাবরই নিজেকে আবিষ্কার করতে চেয়েছেন এঙ্পেরিমেন্টের ভেতর দিয়ে। পানি কোন দিকে গড়াচ্ছে, বাকিরা কোথায় ক্যামেরা ধরছে তা পাত্তা দেননি। আশি থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত আপনমনে বানিয়েছেন ছবি। ধার ধারেননি স্টুডিওর। অনেকে বলত খ্যাপাটে। কিন্তু আসল ঘটনা জানা গেল ১৯৯৭ সালে, যে বছর বের হলো 'গুড উইল হান্টিং'। প্রথম অস্কার মনোনয়ন আসে তাতে, যদিও বাতির তলায় আসার মতো ছবিটা বানিয়েছেন ১৯৮৯ সালে_'ড্রাগস্টোর কাউবয়'। এরপর 'মালা নোশে' ও 'মাই ওন প্রাইভেট আইডাহো'। সিনেমার পোকারা পেয়ে যায় ফন স্যান্টের স্বাদ। এরপর ২০০২ ও ২০০৩ সালে গাস ফন স্যান্টের নবম সিম্ফনি হয়ে দেখা দেয় 'এলিফ্যান্ট' ও 'গ্যারি'। ২০০৮ সালে 'মিল্ক'। কয়েক দিন আগে ইয়াহুর মুভি টককে দিয়েছেন সাক্ষাৎকার। ফন স্যান্টকে চেনা গেল তাঁর কথাতেই।

'রেস্টলেস'-এ আগ্রহী হলেন কিভাবে?
চিত্রনাট্যই আমাকে টেনেছে। সব সময় চিত্রনাট্যই সব নয়। অনেক সময় বই নিয়েও কাজ করেছি। আসলে গল্পটাই আমাকে টানে। তবে এ চিত্রনাট্যটা ২৫ পৃষ্ঠা পড়ার পরও আপনি থামতে পারবেন না।

আপনার সব গল্পেই হয় মৃত্যু, নয়তো তারুণ্য। এ দুটো কি আপনার কল্পতরঙ্গের সঙ্গে মিলে যায়? ('রেস্টলেস' ছবির কাহিনীতেও আছে তা-ই_ক্যান্সারে আক্রান্ত এক তরুণীর হাতে আর কটা দিন বাকি)।
আমার থিম হলো অন্য রকম পরিবার ও মৃত্যু। প্রেম কিংবা বন্ধুত্বের গল্পগুলো একই ধাঁচের। 'মালা নোশে' ও 'ড্রাগস্টোর কাউবয়'তে মৃত্যু পাওয়া যাবে।

আর 'গ্যারি', 'এলিফ্যান্ট', 'লাস্ট ডেজ'_
হ্যাঁ, এগুলোতেও মৃত্যুকে আরো ভালো মতো পাওয়া যাবে। তবে 'রেস্টলেস' হলো যতক্ষণ পারা যায় বেঁচে থাকার গল্প। গল্পের মেয়েটা জেনে যায়, একটা সময় সে এখানে থাকবে না। তাই সে বলে, 'যতক্ষণ আমরা এখানে আছি, ততক্ষণ থাকা যাক।'

'এলিফ্যান্ট'-এর নেপথ্যে ছিল একটি সংবাদ। কিন্তু 'রেস্টলেস' একেবারে রেডিমেড স্ক্রিপ্ট।
হ্যাঁ, 'এলিফ্যান্ট'-এ হাই স্কুল জীবন ও হাই স্কুলের অস্তিত্ব দেখাতে চেয়েছি। হাই স্কুলে ঘটে যাওয়া সহিংসতা, নির্যাতন ও বন্দুকবাজির সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরেছি। এরপর দর্শককে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছি। যে যার মতো করে সেই সব ঘটনার ব্যাখ্যা দাঁড় করাবে। অন্যদিকে 'রেস্টলেস'-এ তা হয়নি। এ ছবির পুরো রোডম্যাপ আমাদের জানা ছিল। প্রতিটি দৃশ্য একেবারে জীবন্ত করাই ছিল মূল লক্ষ্য।

সব ছবিকে কি বড় কাজ হিসেবে দেখেন? নাকি প্রতিটি ছবি একটি করে স্তর?
এগুলো একেকটি স্তর। 'গ্যারি' তৈরির পর আমি হয়তো একই ধাঁচে আরেকটি ছবি তৈরি করতে চেয়েছিলাম। 'রেস্টলেস' হয়তো আমার সেই প্রচেষ্টার প্রথম ছবি।

শোনা যায়, টোয়াইলাইটের পরিচালক হিসেবে নাকি আপনার নাম উঠেছিল।
হ্যাঁ, একটি সাক্ষাৎকারে রবার্ট প্যাটিনসনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, 'পরবর্তী টোয়াইলাইটের জন্য কে আসবে?' তারা নাকি তাকে প্রশ্নটা হাজারবার করেছিল। শেষে নাকি প্যাটিনসন বলেই বসে, 'পরেরটা বানাতে আমাদের গাস ফন স্যান্টের মতো কাউকে দরকার।' এটা শোনার পর বেশ চমকে উঠেছিলাম। আমাকেই ভাবছে নাকি ওরা! আমি আমার এজেন্টকে ব্যাপারটা টুকে রাখতেও বলেছিলাম। নির্মাতারা চেয়েছিল হুবহু বইটা অনুসরণ করতে। তা না হলে ভক্তদের হাতে কঠিন ধরা খেতে হতো। ব্যাপারটা আমাকে নার্ভাস করে তুলেছিল। তবে হ্যাঁ, অন্য পরিচালকরা তাঁদের প্ল্যান ঠিকই দেখাতে পেরেছেন। আমিই শুধু গুবলেট পাকিয়ে ফেলেছিলাম।

No comments

Powered by Blogger.