ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ভিন্নধারার ক্লাব মনন by ইমদাদ হক

প্রতিনিয়ত পরির্তন ঘটছে আমাদের সমাজে। স্বাভাবিক জীবনধারা যেন হ্রাস পাচ্ছে। বাড়ছে অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা। ঘটছে ইভ টিজিং, বিয়ে বিচ্ছেদ, এমনকি খুনের মতো ঘটনা। এর প্রভাব পড়ছে তারুণ্যের ওপর। হাসি-আনন্দ আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। যা কিছু হচ্ছে তা অধিকাংশই মেকি ও কৃত্রিম। আমরা চাই জীবনটাকে প্রকৃত অর্থেই আনন্দময় করতে। পড়ালেখার পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনের জন্য প্রয়োজন সৃজনশীল বিনোদন।


সুন্দর কিছুু করার জন্য মনন কাজ করছে_ বলছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ক্লাব মনন সভাপতি ফারজানা সামরিন রহমান।
নিজে খুশি থাকা, অন্যকে খুশি রাখার সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার জন্যই ২০০৭ সালে 'নিজেকে জানো' প্রতিপাদ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে এ ক্লাবটি। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, নির্বাহী পরিষদ আর সাধারণ সদস্যদের নিয়ে পরিচালিত হয় ক্লাবটির কার্যক্রম। প্রতি বছর ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে ক্লাবের সদস্য সংগ্রহ করা হয়_ জানালেন জায়েদ আশরাফ। তিনি বলেন, সদস্যদের সম্পর্কটি যেন আত্মার বাঁধন। ক্লাবের সদস্যদের আন্তরিকতা আর কাজের প্রতি আগ্রহ যে কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে। এতে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা। এ জন্য ক্লাবের কর্মসূচি বাস্তবায়ন কিংবা নতুন কোনো পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না_ জানালেন মননের উপদেষ্টা প্রভাষক মাহবুবা নাসরিন সানি।
তারুণ্যদীপ্ত সদস্যদের সরব উপস্থিতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে এর কর্মপরিধিও। সময় ব্যবস্থাপনা, দক্ষতা উন্নয়ন, দৈনন্দিন জীবনে আচরণ, ব্যবহার, সৌজন্যতা, ভদ্রতা, মাদক, মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য, বন্ধুত্ব, সামাজিক উন্নয়ন এবং আচরণ, মানসিক ও শারীরিক সমস্যা, হীনম্মন্যতা, আত্মবিশ্বাস, শিশুদের সঙ্গে আচরণ, নাগরিকের অধিকার-কর্তব্য সম্পর্কে আরও একবার মনে করিয়ে দেয় মনন। এটি সহায়তা করে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা দূর করার জন্য। এর অংশ হিসেবে পালিত হয় বিভন্ন কর্মসূচি। পূর্ণ ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী উৎসব, কুইজ প্রতিযোগিতা, শিক্ষা সফরসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এ ফিল্ম ক্লাবটি। ক্লাবের সদস্য এবং বিবিএর শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম সীমু জানান, আসলে ক্লাবের প্রতি সবার এক ধরনের ভালোবাসা ও মায়াই এর উন্নতির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন আত্মউন্নয়নমূলক কর্মসূচির আয়োজন করছে এ ক্লাব। মেডিটেশনের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস তৈরি, কর্মশালা, অটিস্টিক শিশুদের সঙ্গে আড্ডা ও খেলাধুলা, বৃদ্ধাশ্রমে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে শেখার ব্যবস্থা করে মনন। নিজেরা ছাড়াও ক্লাবটির এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন_ জানালেন ক্লাবের সদস্য ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সায়েদা নাবিলা মাহবুব। মননের সঙ্গে কাজ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাহসিন ওয়ারা খন্দকার। তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তকের বাইরে এসব আয়োজন শিক্ষার্থীদের অজানা জ্ঞানের সরবরাহ করে। চিন্তার জগৎকে করে প্রসারিত। প্রতি সেমিস্টারে তাদের আরেকটি অনন্য আয়োজন এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম অথবা অনাথ শিশুদের আশ্রম পরিদর্শন। দক্ষতা উন্নয়নের জন্যই এ আয়োজনটি বিশেষভাবে করা হয়ে থাকে। আনন্দের পাশাপাশি অবহেলিত শিশু ও বৃদ্ধদের সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেওয়াই এর অন্যতম উদ্দেশ্য বলে জানান ক্লাবের সদস্য আবদুস সাকিব। পাস্পরিক সহযোগিতা ও আন্তরিকতার মাধ্যমেই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ক্লাব মনন কাজ করে সামাজিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রক্ষা এবং সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন যাপনে।

No comments

Powered by Blogger.