উচ্চ মূল্যস্ফীতি উদ্বেগজনকঃ বিশ্বব্যাংক

চ্চহারে মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেছে বিশ্বব্যাংক। তবে এই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মুদ্রা সরবরাহের রাশ টেনে ধরার জোরালো সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর হালনাগাদ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক এসব কথা বলেছে। এতে চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির বিষয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, যদি রপ্তানির প্রবৃদ্ধি জোরালো থাকে ও সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত শীর্ষ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুসারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি লাভবান হয়, যদি প্রবাসী-আয়ের প্রবাহ ভালো থাকে এবং যদি অবকাঠামো, বিশেষত, বিদ্যুৎসুবিধা পেয়ে বিনিয়োগ জোরদার হয়, তবেই প্রবৃদ্ধি ভালো হবে। মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, চাহিদা ও জোগান উভয় দিক দিয়েই মূল্যস্ফীতিজনিত চাপ তৈরি হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মূল্যস্ফীতিজনিত প্রত্যাশা, যা মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ১২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি অভ্যন্তরীণভাবে খাদ্যমূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি অন্য সব ভোগ্যপণ্যের মূল্য বাড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।
এর পাশাপাশি শিথিল মুদ্রানীতিও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়িয়ে মূল্যস্তরের ওপর চাপ তৈরি করেছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বিগত দুই অর্থবছরে গণভোগ বৃদ্ধির গড় হার ছিল আট শতাংশ, যেখানে তার আগের দুই বছরে এই হার ছিল ছয় শতাংশ। এ থেকে মূল্যস্তরের ওপর চাহিদাজনিত চাপ বোঝা যায়।
অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান পার্থক্যের বিষয়টি গত অর্থবছরের উচ্চহারে আমদানি বৃদ্ধির (৪০ শতাংশ) মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এটি খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
বিশ্বব্যাংক মনে করে, চলমান মূল্যস্ফীতি এ সংক্রান্ত প্রত্যাশা বাড়িয়ে তুলতেও ভূমিকা রাখছে।
মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমনে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করার পক্ষে মত দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই বছর ধরেই বাংলাদেশের মুদ্রানীতির উপাদানগুলোর প্রবাহ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, এটি হয়েছে মূলত বেসরকারি ঋণপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে। এ ছাড়া গত অর্থবছর বাজেট ঘাটতি মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের সরাসরি ঋণ গ্রহণও ভূমিকা রেখেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছর বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে সাত শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে, রিজার্ভ মুদ্রা ও মুদ্রা সরবরাহের বর্তমান লক্ষ্যমাত্রা তা অর্জনে সহায়ক হবে না।
বিশ্বব্যাংক মুদ্রানীতি পরিচালনায় চীন ও ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছে। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া গত ১৮ মাসে ১২ বার নীতিনির্ধারণী সুদের হার বাড়িয়েছে। ব্যাংক অব চায়না এ বছর দুই ধরনের সুদের হার বাড়িয়েছে নয়বার। আর তাই বাংলাদেশ ব্যাংককেও আগ্রাসীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক।

No comments

Powered by Blogger.