ইউনিসেফের প্রতিবেদন-বয়ঃসন্ধি থেকে মেয়েদের বৈষম্যের কাল শুরু

বাংলাদেশে বয়ঃসন্ধিকালে পেঁৗছানোর পর মেয়েরা সামাজিকভাবে বৈষম্যের শিকার হয়। তবে পঞ্চম জন্মদিন পর্যন্ত মেয়ে শিশুরা নিজ গৃহে বৈষম্যের শিকার হয় না। 'এ পারসপেকটিভ অন জেন্ডার ইকুয়ালিটি ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।প্রতিবেদনে বলা হয়, মেয়েদের এসব বৈষম্যের মধ্যে রয়েছে মাধ্যমিক পর্যায়ে পেঁৗছানোর পর স্কুল ছেড়ে দেওয়া, সঙ্গী ছাড়া মেয়েদের বাড়ির বাইরে যেতে না দেওয়ার প্রচলন, যৌন হয়রানি (ইভ টিজিং) এবং শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার শিকার হওয়া।


প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী মেয়ে শিশুর মৃত্যুহার ওই বয়সী ছেলে শিশুর তুলনায় ২০ শতাংশ কম। তবে বাংলাদেশে এক বছরের কম বয়সীদের মধ্যে ১০৭ দশমিক ৫ জন ছেলের বিপরীতে মেয়ে রয়েছে ১০০ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য অনুকূল শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্যন্ত। বয়ঃসন্ধিকাল এবং আইনসংগতভাবে সাবালকত্ব (১০-১৯ বছর) প্রাপ্তির পর মেয়েদের বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি পায়। এর কারণ হচ্ছে সামাজিক বিভিন্ন বিধিনিষেধ ও নিয়ম, যার একটি বড় উদাহরণ হলো বাল্যবিবাহ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে প্রতিবেদনটি উন্মুক্ত করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ইকবাল মাহমুদ, ইউএন উইমেনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাহিদ এম আহমেদ, ইউনিসেফের শিশু অধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা আরিফা জামান মৌসুমী ও ইউনিসেফের দেশীয় প্রতিনিধি ক্যারল ডি রয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ইউনিসেফের পরিকল্পনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লুজমা মোনতানো এবং ইউনিসেফের কনসালট্যান্ট ড. ডির্ক ওয়েস্টহফ।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে বাংলাদেশে এখন প্রায় ৫০ লাখ নারী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনুক্ত (মিসিং) রয়েছে। এ সংখ্যা মোট নারীর ৭.১ শতাংশ। প্রতিবেদনে এ পরিস্থিতিকে 'উদ্বেগজনক' বলে উল্লেখ করা হয়।
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন প্রথম ধারণা দিয়েছিলেন 'মিসিং উইম্যান' (অনুক্ত নারী) সম্পর্কে। তিনি বলেছিলেন 'মিসিং উইম্যান' হচ্ছে নারীর সেই সংখ্যা যারা বেঁচে আছেন, কিন্তু হিসাবে নেই। এর কারণ সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার অবদানের হিসাব না থাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নারী-পুরুষ অনুপাতের ক্ষেত্রে পুরুষের হার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এ পার্থক্য বান্দরবান, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা, হবিগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার জেলায় আরো বেশি দেখা যায়।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশে এক বছরের কম বয়সীদের মধ্যে অনুপাত হলো ১০৭ দশমিক ৫ জন ছেলের বিপরীতে ১০০ জন মেয়ে। আর প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১০৫ জন পুরুষের বিপরীতে রয়েছে ১০০ জন নারী।
প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্যানুযায়ী চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবানে এক বছরের কম বয়সী ১০০ মেয়ে শিশুর অনুপাতে ছেলে শিশু রয়েছে ১১৮, পাঁচ বছরের কম বয়সী ছেলে ও মেয়ের অনুপাত ১১৪ ঃ ১০০। কুমিল্লায় এক বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এ অনুপাত ১১৭ ঃ ১০০, পাঁচ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে ১১২ ঃ ১০০। আবার চুয়াডাঙ্গায় এক বছরের কম বয়সী ছেলে ও মেয়ের অনুপাত ১২৮ ঃ ১০০, পাঁচ বছরের কম বয়সীদের অনুপাত ১১২ ঃ ১০০। হবিগঞ্জে এক বছরের কম বয়সীদের অনুপাত ১১৭ ঃ ১০০, পাঁচ বছরের কম বয়সীদের অনুপাত ১১৫ ঃ ১০০। মৌলভীবাজারে এক বছরের কম বয়সীদের অনুপাত ১১৭ ঃ ১০০ এবং পাঁচ বছরের কম বয়সীদের অনুপাত ১১২ ঃ ১০০।
সাধারণ নিয়মে এ লিঙ্গভিত্তিক অনুপাত এক বছরের ছেলে ও মেয়ের ক্ষেত্রে ১০৫ ঃ ১০০ থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশে রয়েছে ১০৭.৫ ঃ ১০০ এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ছেলে ও মেয়ের অনুপাত ১০৪ ঃ ১০০ হওয়ার কথা থাকলেও দেশে এ অনুপাত হচ্ছে ১০৬ ঃ ১০০।

No comments

Powered by Blogger.