নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন-অভিযোগ আমলে নিয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা নিন

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা রোববার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। তিনি তাঁদের বক্তব্য শুনেছেন এবং নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
সিইসি নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, তা সফল করতে কমিশনের এখনো অনেক কিছু করণীয় আছে। প্রথমত, মতবিনিময় সভায় একাধিক প্রার্থী ভোট কারচুপির যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তা আমলে নিয়ে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই যাতে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
শুরু থেকে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে। কমিশন সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করার পরও কীভাবে একজন মেয়র পদপ্রার্থীর পোস্টার বিভিন্ন স্থান থেকে গায়েব হয়ে যায়? কারা এসব করেছেন, তা কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অজানা? রাতের বেলায় কেবল একজন প্রার্থীর পোস্টার বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার গল্পও বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে কমিশন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া দুঃখজনক। প্রার্থীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। কার অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং কার অভিযোগের পেছনে সত্যতা আছে, তা বিচারের দায়িত্ব কমিশনেরই।
সিইসি বলেছেন, সন্ত্রাস হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমরা একমত; কিন্তু তার চেয়েও জরুরি হলো ভোটের আগে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা, যাতে কেউ ভোটের দিন কিংবা তার আগে ও পরে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে সাহস না পায়। বিভিন্ন স্থানে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে যে অভিযোগ এসেছে, আশা করি কমিশন সে ব্যাপারে ত্বরিত ব্যবস্থা নেবে। বিশেষ করে, সংখ্যালঘু ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভোটারদের এমন অভয় দিতে হবে যে তাঁরা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবেন। কয়েকটি থানার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে একজন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার যে অভিযোগ এসেছে, তা সত্য হলে তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে তাঁদের বদলি করতে হবে। অনুরূপ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন প্রশাসনের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও।
প্রশাসনের ওপর সব প্রার্থীর আস্থা না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করা কঠিন হবে। একজন প্রার্থী নির্বাচনের দিন একজন নির্বাচন কমিশনারকে এলাকায় থাকার যে অনুরোধ করেছেন, তা-ও যুক্তিসংগত। তাঁর উপস্থিতি সুষ্ঠু পরিবেশের সহায়ক হবে। সিইসি শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর পাশাপাশি সেনাসদস্য মোতায়েনের কথাও বলেছেন। কেবল টহলদারি নয়, প্রয়োজনে যাতে তারা কেন্দ্রের ভেতরেও দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে ব্যবস্থাও করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করা নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ তারা কীভাবে মোকাবিলা করে, সেটাই দেখার বিষয়।

No comments

Powered by Blogger.