শেষ সময়ে গাদ্দাফি ছিলেন ক্ষুব্ধ বিষণ্ন

লিবিয়ার বিদ্রোহী সেনারা যার বিরুদ্ধে লড়ছিলেন সেই মুয়াম্মার গাদ্দাফি তার নিজের বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন না। কোনো পরিকল্পনায়ও ছিলেন না তিনি। বিদ্রোহী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন তার ছেলেরা। এমন তথ্যই জানিয়েছেন গাদ্দাফির অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত তার সঙ্গে থাকা লিবিয়ার রেভ্যুলিউশনারি গার্ডের সাবেক প্রধান মনসুর দায়ো। ত্রিপোলির পতনের পরও গাদ্দাফির বিশ্বাস ছিল, লিবীয়রা তাকে ভালোবাসে। যুদ্ধের দিনগুলোতে তিনি ছিলেন ক্ষুব্ধ, বিষণ্ন; কখনও পাগলপ্রায়। খবর ওয়াশিংটন পোস্টের।


গত বৃহস্পতিবার মৃত্যুর দিন নিজ জন্মশহর সিরতে ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন গাদ্দাফি। সেদিন তার সঙ্গে একই বহরে ছিলেন মনসুর দায়ো। গাদ্দাফির সঙ্গে তিনিও আহত অবস্থায় ধরা পড়েন। তাকে বন্দি করা হলেও হত্যা করা হয় গাদ্দাফিকে। গাদ্দাফির বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনাকারী জাতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের (এনটিসি) মিসরাতার সদর দফতরে দায়োকে আটকে রাখা হয়। সেখানে গত সোমবার দায়ো যুদ্ধের দিনগুলোতে গাদ্দাফির অবস্থার বর্ণনা দেন। তিনি জানান, নিজের বাহিনীর নেতৃত্ব বা যুদ্ধ সংক্রান্ত কোনো পরিকল্পনা প্রণয়ন বা ভাবনায়ও ছিলেন না গাদ্দাফি। নেতৃত্ব দিয়েছেন তার ছেলেরা। তিনি বরং সময় কাটিয়েছেন বই পড়ে, নোট লিখে, কয়লার স্টোভে তৈরি চা পান করে। জীবনের শেষ সপ্তাহটি নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে সিরতের এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে পালাক্রমে অবস্থান করেছেন তিনি। দায়ো জানান, গাদ্দাফি, তার ছেলে মুতাসিম ও দুই ডজনের মতো বিশ্বস্ত বাহিনী ওই দিনগুলোয় একরকম বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করেছেন। পরিত্যক্ত বাড়িগুলোতে ফোন, টেলিভিশন, এমনকি বিদ্যুৎ সুবিধা ছাড়া থাকতে হয়েছে তাদের। দায়ো বলেন, প্রতি চারদিন পর আশ্রয়স্থল পরিবর্তন করতেন গাদ্দাফি। সিরতে ওই সময় প্রায় ৩৫০ সেনার নেতৃত্বে ছিলেন মুতাসিম। তাদের অনেকেই পালিয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বাহিনীতে ছিল মাত্র ১৫০ জন। দায়ো জানান, বিদ্রোহী বাহিনী ত্রিপোলি প্রবেশের আগমুহূর্তে আগস্টের ১৮ কি ১৯ তারিখ বাসভবন ত্যাগ করেন গাদ্দাফি। সোজা সিরতে চলে যান। তার সঙ্গে ছিলেন মুতাসিম। গাদ্দাফির উত্তরাধিকারী বলে ভাবা হতো যে ছেলেকে, সেই সাইফ আল ইসলাম আশ্রয় নেন বনি ওয়ালিদে। ত্রিপোলির পতনের পরও বনি ওয়ালিদ, সিরতে ও সাবা_ এ শহর তিনটি ছিল গাদ্দাফি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। এক সপ্তাহ পর গাদ্দাফির সঙ্গে মিলিত হন দায়ো। অন্যদিকে গাদ্দাফির গোয়েন্দা প্রধান আবদুল্লাহ আল সেনুসি সিরতে ও সাবায় যাতায়াত করে বেড়িয়েছেন। গাদ্দাফিকে তার ঘনিষ্ঠজনরা ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে দেশ ছাড়ার জন্য বারবার তাগাদা দিয়েছিলেন। কিন্তু গাদ্দাফি বলেছিলেন, তিনি তার পূর্বপুরুষদের দেশেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চান।
দায়ো বলেন, গাদ্দাফি পরিস্থিতি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। দেশ ছেড়ে গেলে হয়তো তিনি সুখে জীবনযাপন করতে পারতেন।

No comments

Powered by Blogger.