ইসলামী ঐক্যজোটের সমাবেশে ফখরুল : আমিনী নয় জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছে সরকার

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ও নানারকম ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে— ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী তার সমালোচনা করেছেন। এ জন্য সরকার তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেছে। অথচ একই ধরনের সমালোচনা ড. কামাল হোসেন, শাহদীন মালিকসহ আরও অনেকে করলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি।


নির্ভীক রাজনীতিক, বিজ্ঞ ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি আমিনী সত্য কথা স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করেন বলেই তার বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানার জারি করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমিনী যে কথা বলেছেন তাতে কখনও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হতে পারে না। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা মানেই গোটা জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা। তিনি অবিলম্বে তার এই পরোয়ানা প্রত্যাহার এবং গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তির দাবি জানান।
গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ইসলামী ঐক্যজোট ঢাকা মহানগর আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। দলের চেয়ারম্যান মুফতি আমিনীর গৃহবন্দিত্বের অবসান, মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারি
পরোয়ানা প্রত্যাহারের দাবিতে মাওলানা আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনপিপি সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নীলু, বিজেপি মহাসচিব শামীম আল মামুন, খেলাফত আন্দোলন মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, এনডিপি মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ ভাসানী মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, মহিউদ্দিন চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোট নেতা অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকিব ও মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা দ্বীন মোহাম্মদ কাসেমী, মাওলানা নোমান মাজহারি, আবদুল আজিজ, ইলিয়াছ আতহারী প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে রাষ্ট্রদ্রোহ হয়। কিন্তু আমিনী কি করেছেন যে তার নামে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তার কাজেকর্মে আমরা রাষ্ট্রদ্রোহ পাইনি। তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী এনে সরকার দেশের প্রতিটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমরা জানি জিয়াউর রহমান পবিত্র সংবিধানে বিসমিল্লাহ্ সংযোজন করেছিলেন। এই সরকার যে প্রতারক সরকার তার উদাহরণ এই সংবিধান সংশোধন। তারা একদিকে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম রাখলেও তার অর্থ বিকৃত করেছে। তারা একদিকে বলছে ধর্মনিরপেক্ষ, অন্যদিকে আল্লাহর ওপর আস্থা তুলে দিয়েছে। এটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বর্তমানে দেশ গভীর সঙ্কটে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, এর আগে এত গভীর সঙ্কট কখনও সৃষ্টি হয়নি। ভোটে নির্বাচিত সরকারই এখন সবচেয়ে বেশি নির্যাতন ও নিপীড়নকারী সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা বলছেন খালেদা জিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু আমি বলতে চাই, যার স্বামী মুক্তিযুদ্ধ শুরু করলেন, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিলেন তারা কখনও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান না। তারা দাঁড়ান আপনাদের মতো সেই সব লোকের বিরুদ্ধে, যারা স্বাধীনতা ও দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন। তিনি বলেন, যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দেশ, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্য, নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে। গণতন্ত্র ও দেশ রক্ষায় দেশনেত্রীর এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার বিকল্প নেই। তিনি সবাইকে এই যুদ্ধে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, শুধু মুফতি আমিনী নয়, মিথ্যা মামলা দিয়ে চারদলের নেতাদের হয়রানি করা হচ্ছে। সরকারের অপকর্ম ও ভারতের বিরুদ্ধে যাতে প্রচারণা না হয়, সে জন্যই এটা করা হচ্ছে। মাওলানা ইসহাক বলেন, এ সরকার মুফতি আমিনীকে পুলিশ দিয়ে গৃহবন্দি করে রেখেছে অথচ তাকে পলাতক দেখিয়ে তামাশা করছে। এ সরকারকে হটাতে হবে।
শফিউল আলম প্রধান বলেন, শেখ হাসিনা দেশ নয়, বিদেশপ্রেমিক। আসলে তিনি পুতুল। তার বিরুদ্ধে লড়াই করে লাভ নেই। যারা পুতুল নাচাচ্ছে, সেই দিল্লি ও আধিপত্যবাদীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.