বিদেশি বিনিয়োগে দেশি স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না

দেশে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে মুনাফা ও অন্যান্য উপায়ে তার চেয়ে বেশি অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। তাতে দেশের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না। তাছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পুনর্বিনিয়োগের হার খুবই কম। এতে যে লক্ষ্যে বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা পূরণ হচ্ছে না। এ জন্য বিদেশি বিনিয়োগ থেকে দেশের স্বার্থ রক্ষায় নতুন করে ভাবতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।গতকাল মঙ্গলবার 'বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের প্রসারণ' শীর্ষক এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ কম।


পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব, দুর্নীতি, অদক্ষ সরকারি আমলাতন্ত্র, নীতির অস্থিরতা ও শিক্ষিত জনশক্তির স্বল্পতার কারণে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মূলধন প্রক্রিয়াকরণ (ফরমেশন), কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জ্বালানির উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তির উন্নয়ন এ বিনিয়োগে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। পিপিপির আওতায় এক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। সরকার পরিবর্তন হলে পিপিপি প্রকল্প অব্যাহত থাকবে কি-না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় উদ্যোক্তারা এ খাতে বিনিয়োগেও সতর্ক। জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ পেতে হলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে।
রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম), এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ইস্টার্ন ব্যাংকের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত ওই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এসএ সামাদ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ ছাড়া শেভরন বাংলাদেশের সভাপতি জিওফ্রে স্ট্রং ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ফারুক চৌধুরী আলাদা দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স নিকোলাস ডিন। ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি ও সিইও আলী রেজা ইফতেখার, এশিয়া ফাউন্ডেশনের দেশীয় প্রতিনিধি হাসান মজুমদার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। সেমিনার পরিচালনা করেন অ্যামচেমের সভাপতি আফতাব উল ইসলাম। বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এসএ সামাদ দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ কম স্বীকার করে বলেন, ২০১০ সালে দেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ইতিহাসের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বছরে দুই থেকে তিন বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ গ্রহণ করার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। দেশের মোট বেসরকারি বিনিয়োগের মাত্র ৪ শতাংশ এফডিআই। জিডিপিতে এফডিআইর অংশ এক শতাংশেরও কম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে কেউ এ পর্যন্ত লোকসান করেননি। বরং অনেক সুবিধা পান বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। রয়ালিটি, টেকনিক্যাল নো হাউ ফি, কলসালট্যান্সি ফি, মুনাফা এবং মূলধন নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য টাকা সম্পূর্ণ কনভারটেবল। যে সুযোগ স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা পান না।
মূল প্রবন্ধে ড. দেবপ্রিয় বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ দেশি বিনিয়োগের হার প্রায় প্রায় তিন শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। আর দেশি বিনিয়োগ বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়ে। তিনি আরও বলেন, দেশে যে পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে সেখান থেকে অর্জিত মুনাফা নিজ দেশে পাঠানোর (রি-প্যাট্রিয়েশন) পরিমাণ তার চেয়ে বেশি। বিশেষ করে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এটা হয়। তিনি বলেন, পাঁচটি বড় সমস্যার কারণে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এগুলো হলো_ পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব, দুর্নীতি, অদক্ষ সরকারি আমলাতন্ত্র, নীতির অস্থিরতা ও শিক্ষিত জনশক্তির স্বল্পতা।
শেভরন বাংলাদেশের সভাপতি জিওফ্রে স্ট্রং তার প্রবন্ধে বলেন, জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ পেতে হলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। সেমিনারে এশিয়া ফাউন্ডেশনের এদেশীয় প্রতিনিধি হাসান মজুমদার বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাবে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। মূলধন প্রক্রিয়াকরণ (ফরমেশন), কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জ্বালানির উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রাযুক্তিক সমৃদ্ধিতে এ বিনিয়োগ বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আফতাব উল ইসলাম সুশাসনের অভাব, ব্যবসা পরিচালনার উচ্চ ব্যয়সহ কিছু কারণে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ তেমন বাড়ছে না বলে মন্তব্য করেন।

No comments

Powered by Blogger.