যা চেয়েছিলেন তার প্রায় সবই পেলেন মুশফিক

রিসংখ্যানের পাতায় লেখা থাকবে, এই টেস্ট ড্র। মাঠের লড়াইয়ে কেউ কাউকে হারাতে পারেনি, কাজেই বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের সহাবস্থান। তাই কী? ফল বিবেচনায় যুদ্ধজয় কেউ করেনি বটে, তবে ছোট ছোট লড়াইগুলোর বিজয়ী তো বাংলাদেশই। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাস্যোজ্জ্বল-ফুরফুরে মেজাজের স্বাগতিকদের বিপরীতে নেটে ক্যারিবিয়ানদের ঘাম ছোটানো অনুশীলন সে চিত্রটাই তো দিচ্ছে!টেস্ট শুরুর আগে বাংলাদেশ ক্যাম্পের চাহিদাপত্রে লাল দাগ দেওয়া ছিল একটি জায়গায়। দল হিসেবে সম্মিলিত পারফরম্যান্স।


অনেকা বৃক্ষ মিলে অরণ্য তৈরির তাগিদ। ঠিক সেই কাজটি চট্টগ্রামে করতে পেরেছে বাংলাদেশ। অধিনায়কের তৃপ্তিটা তাই প্রত্যাশিত, 'প্রথম ইনিংসে আমাদের ব্যাটসম্যানরা প্রায় সবাই ভালো শুরু পেয়েছে। পরের টেস্টে কেউ হয়তো বড় ইনিংস খেলবে। অভিষেক হওয়া দুজন নাসির-সানি খুব ভালো করেছে। শেষের দিকে সাকিব অনেক ভালো বোলিং করেছে। এ রকম অনেক ইতিবাচক দিকই আছে চট্টগ্রাম টেস্টে। হতাশা শুধু রয়ে গেল বৃষ্টির কারণে দুটো দিন চলে যাওয়ায়। আর সেটি স্বীকারে অকপট মুশফিক, 'প্রথম দিন আমরা খুব ভালো শুরু করেছিলাম। জানতাম এই উইকেটে চতুর্থ-পঞ্চম, এমনকি তৃতীয় দিনে ব্যাটিং করাই কঠিন হবে। বৃষ্টির কারণে দুই দিন খেলা না হওয়ায় আফসোস তাই লাগছেই।'
এ আফসোস আনন্দের। এ আক্ষেপ গৌরবের। ৬৯ টেস্ট ইতিহাসে হাতে গোনা কয়েকবার ছাড়া এমন দর্প নিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচ করেছে কবে! একটা পরিসংখ্যান দেখলেই ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন। প্রথম ৬৯ টেস্টে মাত্র তিনবার ইনিংস ঘোষণার সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়করা। আর এই চট্টগ্রামে দুই ইনিংসই কিনা ডিক্লেয়ার করলেন মুশফিক! এর মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসের ডিক্লেয়ারেশন তো ম্যাচের মরা গাঙে এনেছিল খানিক উত্তেজনার ঢেউ। নিজেদের দিনের পরিকল্পনা ব্যাখ্যায়ও তাই তৃপ্তি খেলে গেল মুশফিকের চোখে-মুখে, 'আজ প্রথম লক্ষ্য ছিল ওদের ২০০-এর নিচে কিংবা ২১০-২২০ এর মধ্যে অল আউট করা। এরপর আমরা দ্রুত ব্যাটিং করে ডিক্লেয়ার করব। কিন্তু ওরা প্রায় আড়াই শ করার পর আমরা একটু রয়েসয়ে খেলেছি। চেয়েছি, শুরুতে স্বাভাবিক ব্যাটিং করতে। এরপর ম্যাচটি ওদের ধরাছোঁয়ার বাইরে যাওয়ার পর যদি ওদের চার-পাঁচ উইকেট তুলে নিতে পারি, সেটি পরের টেস্টের জন্য অনুপ্রেরণা।'
অধিনায়ক মানছেন, এই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেতার সম্ভাবনা ছিল খুব কম। বাংলাদেশের হারের আশঙ্কা আরো কম। এ কারণেই শুরুতে ক্যারিবীয়রা মেরে খেললেও ভড়কাননি মুশফিক। ৩৭ ওভারে ২২৬ রানের লক্ষ্য ছোঁয়া যে প্রতিপক্ষের সাধ্যাতীত বলে দাবি তাঁর, 'এই উইকেটে রান করা খুব কঠিন। প্রথম ইনিংসে সাকিব, সানি ভাই ভালো বোলিং করেছে। আমার তাই কখনোই মনে হয়নি ডিক্লেয়ার করে ভুল হয়েছে। বরং মনে হয়েছে, ওরা যত শট খেলবে, ওদের ভুল করার সুযোগ থাকবে।' অভিষিক্ত বোলার হিসেবে ইনিংসে ৬ উইকেট এবং ম্যাচে ৭ উইকেট নেওয়া ইলিয়াস সানির প্রশংসায় অকুণ্ঠ অধিনায়ক। যদিও এ বাঁহাতি স্পিনারের কাছে তাঁর প্রত্যাশার পরিধিটা আরো বড়, 'দুই বছর আমি সানি ভাইয়ের সঙ্গে বিমানে খেলেছি। জাতীয় লিগেও আমি তাঁর বোলিং দেখেছি। সেই অভিজ্ঞতায় বলব, সানি ভাই এর চেয়ে অনেক ভালো বোলিং করার সামর্থ্য রাখেন। তার পরও কোনো সন্দেহ নেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রথম ম্যাচে এমন বোলিং করা এক কথায় অসাধারণ।'
আর শুধু ইলিয়াস নন, পুরো দলের পারফরম্যান্সেই সন্তুষ্ট মুশফিক। ঢাকায় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে আরেকটি স্পিনসহায়ক উইকেট চান তিনি। সে ক্ষেত্রে ফলটা আরো ইতিবাচক হবে বলে আশাবাদের গান অধিনায়কের কণ্ঠে, 'এই টেস্টে বোলার-ব্যাটসম্যানরা যেমন খেলেছে, ঢাকায় সেটি হলে ইতিবাচক ফল পাব বলে আশাবাদী। দ্বিতীয় টেস্ট ওদের জন্য হবে বাঁচা-মরার লড়াই। সিরিজ জয়ের জন্য টেস্টটি ওদের জিততেই হবে। আমাদেরও তাই। আমরাও জেতার জন্য খেলব।'
টেস্টে অধিনায়কত্বের অভিষেকে দল ড্র করেছে ঠিক। কিন্তু বিজয়ীর আনন্দ আঁকা ছিল পুরো দলের অভিব্যক্তিতে। এবার শেষ টেস্টে চাই সত্যিকারের জয়। ক্রমে অরণ্য হয়ে ওঠা বাংলাদেশ দল কি তা পারবে না!

No comments

Powered by Blogger.