সেনাবাহিনীর কর্মপরিধি-এক কম্পানি নিয়ন্ত্রণকক্ষের পাশে, বাকিরা তিন থানায়

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে সেনাবাহিনীর কর্মপরিধি নির্ধারণ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চার কম্পানি সেনা সদস্যের মধ্যে এক কম্পানিকে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে রিজার্ভ রাখা হবে এবং রিজার্ভ সেনা সদস্যরা ভোটগ্রহণের দিন সকাল থেকে রিটার্নিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণকক্ষের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলবে। তারা সেখানে অননুমোদিত ব্যক্তির প্রবেশ ঠেকাবে এবং যেকোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করবে।


অন্য তিন কম্পানি নারায়ণগঞ্জ সিটি এলাকার তিন থানায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে। তাদের দায়িত্ব হবে নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে টহল দেওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নির্বাচন কমিশন গত ২৪ অক্টোবর এই কর্মপরিধি নির্ধারণ করে তা সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের কাছে পাঠানো নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মো. আবদুল বাতেন স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার উদ্দেশ্যে 'স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯'-এর ২ (১) ধারা মোতাবেক চার কম্পানি সেনা নিয়োগ করা হয়েছে। সেনা সদস্যরা আগামী ২৮ অক্টোবর সকাল থেকে ১ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটগ্রহণের আগের দুদিন তাঁরা নিজেদের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে টহলে থাকবেন এবং যেকোনো ধরনের বিরূপ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মোকাবিলা করবে। ভোটগ্রহণের দিন প্রতি ওয়ার্ডে টহল ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা দেবে। একই সঙ্গে সেনা সদস্যদের পাঁচ ধরনের বিষয়ে নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। এগুলো হচ্ছে : এক. কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলামূলক কিংবা সহিংস ঘটনা যেন সংঘটিত না হতে পারে। দুই. ভোটকেন্দ্রে যেতে পারা যায়নি, গিয়ে থাকলেও ভোট দিতে পারা যায়নি কিংবা ভোট প্রদানের পর হিংসা ও বিদ্বেষের শিকার হতে হয়েছে_এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে। তিন. দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় প্রিসাইডিং অফিসারদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে এবং প্রয়োজনে ভোটকেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করতে হবে। চার. সব ভোটকেন্দ্রে নির্ধারিত সময়সূচি অনুসারে ভোটগ্রহণ, ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণার কাজে সহায়তা দিতে হবে এবং পাঁচ. ভোট গণনার পরবর্তী পর্যায়ে রিটার্নিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণকক্ষের ভোটকেন্দ্রগুলোর ফলাফল সংগ্রহ ও ঘোষণার সময় কন্ট্রোলরুমের ভেতরে ও বাইরে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আর ভোটগ্রহণের পরের দুই দিন নির্বাচনী এলাকায় যাতে কোনো প্রকার সহিংস ঘটনা না ঘটে এবং জনজীবন যাতে স্বাভাবিক থাকে, তার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে।
ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তাবলয় : এ নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, র‌্যাব ও কোস্টগার্ড সদস্যরা মোতায়েন হওয়ার পর পরই নির্বাচনী এলাকায় এবং ভোটকেন্দ্রগুলোতে টহল দেবেন। ভোটগ্রহণের দিন ভোটকেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থান নেবেন এবং ভোটগ্রহণ শেষে ও ভোট গণনার প্রাক্কালে গণনা কক্ষের চারপাশে নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করবেন। প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ভোটকেন্দ্র তাঁরা কর্ডন করে রাখবেন। ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজ ব্যাসার্ধের ভেতরে প্রয়োজনে ১০০ গজ ব্যাসার্ধের একটি বলয় সৃষ্টি করে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের প্রবেশ সুশৃঙ্খল করার ব্যবস্থা নেবেন। কোস্টগার্ড সদস্যরা এ দায়িত্ব পালন করবেন বন্দর এলাকায়। আর পুলিশের মূল দায়িত্ব হবে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে শান্তি-শৃঙ্খলা বিধান করা। পুলিশ বাহিনীর নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুসারেই ব্যাটালিয়ন আনসার, অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবে। র‌্যাব ও ব্যাটালিয়ন আনসার আগামী ২৮ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের দিন স্থাপন করা হবে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল। রিটার্নিং অফিসারের নেতৃত্বে এ সেল গরিচালিত হবে এবং এর কার্যক্রম চলবে ভোটগ্রহণের পরদিন পর্যন্ত।

No comments

Powered by Blogger.