দেড়শ কোটি টাকার ফুলবাণিজ্য

একদিন পর (১৩ ফেব্রুয়ারি) পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্ত বরণে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ আনন্দে মেতে উঠবে। বাসন্তী রঙের শাড়ির সঙ্গে তরুণীরা সাজবে বাহারি রঙের ফুল দিয়ে। এর ঠিক একদিন পর ১৪ ফেব্রুয়ারি। ভালোবাসার বার্তা নিয়ে হাজির হবে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’। বর্ণিল ফুলের রঙে বাঙালি মাতবে ভালোবাসার উৎসবে। এ দিন প্রেমিক প্রেমিকাকে উপহার দেবে লাল গোলাপ। বাদ যাবে না রক্তের সম্পর্কও। শহর থেকে গ্রামে বিরাজ করবে উৎসবের আমেজ। বাহারি রঙের ফুলে ভরে উঠবে চারদিক। শুধু ভালোবাসায়ই সীমাবদ্ধ নয়, আসছে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সে দিন শহীদদের স্মরণ করতে সবার হাতে থাকবে ফুল। বাঙালি জীবনে প্রতিবছর এ তিন দিবসে ফুল অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সময় ফুলের চাহিদা সারা বছরের চেয়ে বেশি থাকে। আর এ দিবসগুলো ঘিরে জমজমাট হয়ে ওঠে ফুলের বাণিজ্য। এ সময় ফুলের ব্যবসার সবচেয়ে বড় সুযোগ বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এ বছর সারা দেশে এই তিন দিবসকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য হবে। তাই মাঠ পর্যায়ে চাষী থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা ফুলের বাজার এখন পুরোদমে প্রস্তুত। কয়েক বছর আগেও দেশে ফুলের বাজারে হাতেগোনা কয়েক ধরনের ফুল পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ বেশি হওয়ায় ও আমদানি করায় বাহারি রঙের ফুল পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে জারবেরা, গ্লাডিওলাস, অর্কিড, কসমস, ডালিয়া, টিউলিপ, কালো গোলাপ, ঝুমকা লতা, গাজানিয়া, প্লামেরিয়া, চন্দ্রমল্লিকা অন্যতম। দামও হাতের নাগালে। কিন্তু এই বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের চাহিদা থাকায় অতি মুনাফার লোভে বেশি দামে ফুল বিক্রি করছে বিক্রেতারা। সারা দেশের খুচরা বিক্রেতারা রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেট ও আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ফুলের পাইকারি মার্কেট থেকে ফুল কিনে থাকেন। রাজধানীর এসব বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্য দিনের চেয়ে শুক্রবার ও শনিবার বিক্রি অনেক বেশি হয়। প্রতিদিন শুধু রাজধানীর পাইকারি বাজারে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ফুল কেনাবেচা হয়। আর বিশেষ দিবস যেমন পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। এ ছাড়া রাজধানীর শাহবাগে সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার।
এখানে ফুলের দোকান ১২০টি এবং খুচরা বিক্রেতা আছে আরও শতাধিক। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এবারের ভালোবাসা দিবসে রাজধানী ঢাকায় যে কয়েক কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে তার সিংহভাগই হবে শাহবাগে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম যুগান্তরকে বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দেশে ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তাই বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কৃষক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দেশে মোট ১৫০ কোটি টাকা বা তারও বেশি ফুল বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে যশোরের গদখালি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এ দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য হবে। এ ছাড়া বাকিটা রাজধানীর শাহাবাগ ফুলের বাজারসহ দেশের অন্যান্য স্থান পূরণ করবে। সরেজমিন রাজধানীর শাহবাগের পাইকারি ও খুচরা ফুলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের ফুল দোকানে তুলেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের স্থায়ী ও ভাসমান ফুল ব্যবসায়ীরা ভিড় করছেন শাহবাগের ফুলের দোকানে। ব্যবসায়ী ছাড়াও সাধারণ মানুষ আগে থেকে ফুল কিনতে চলে এসেছেন। এর মধ্যে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাহবাগের অনন্যা পুষ্প বিতানের মালিক লোকমান হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীর শাহবাগসহ অন্যান্য ফুল বাজারে ট্রাক ভর্তি ফুল আসতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে তিন দিবসকে ঘিরে ফুল বেচাকেনাও জমে উঠেছে। এ বছর খুচরা ও মৌসুমি ফুল বিক্রেতারা আগেভাগে ফুল কিনতে এসেছেন। যার কারণে এখন থেকেই ফুলের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ বছর হঠাৎ করে সাভারের সাদুল্লাপুর ফুল বাগান অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় সেখানে ফুল উৎপাদন কম হয়েছে। যার কারণে এবার ফুলের দাম গত বছরের তুলনায় বাড়বে। শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে প্রতিটি গোলাপ মান ভেদে ৫ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জারবেরা ১৫ থেকে ১৮ টাকা, গ্লাডিওলাস ৮ থেকে ১২ টাকা ও রজনীগন্ধা ৬ থেকে ৮ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। এ ছাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার গাঁদা ফুল। তবে খুচরা বাজারে একই ফুল বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। খুচরা ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিটি গোলাপ ২০ থেকে ৩০ টাকা, জারবেরা ২০ থেকে ৪০ টাকা, গ্লাডিওলাস ২০ থেকে ৩০ টাকা ও রজনীগন্ধা প্রতি স্টিক ১০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। আর গাঁদা ফুলের মালা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে সাজানো তোড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে দুই হাজার টাকায়। যা অন্য সময়ের চেয়ে দাম একটু বেশি। মৌসুমি ফুল ব্যবসায়ী মো. জহিরুল আলম যুগান্তরকে বলেন, ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আগে থেকেই ফুল সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ ওই দিন ফুলের দাম আকাশছোঁয়া থাকে। তিনি বলেন, বাজার ঘুরে দেখছেন দামে পছন্দ হলে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ফুল কিনবেন।

No comments

Powered by Blogger.