বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমাচার by প্রাণ গোপাল দত্ত

The word 'university' is derived from the Latin universitas magistrorum et scholarium, which roughly means 'community of teachers and scholars.'
The original Latin word 'universitas' refers in general to 'a number of persons associated into one body, a society, company, community, guild, corporation, etc.'
'An institution of higher education offering tuition in mainly non vocational subjects and typically having the power to confer degrees,' with the earlier emphasis on its corporate organization considered as applying historically to Medieval universities.’ অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় হলো ছাত্র, শিক্ষক ও পণ্ডিত শিক্ষাবিদদের এক মহান কর্মস্থল, যেখান থেকে উচ্চশিক্ষা প্রদান করা হয়। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় একজন শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত শিক্ষাদান করে, যাচাইয়ের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ডিগ্রি প্রদান করে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে শুধু যে পত্রপত্রিকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে তা নয়, খোদ ইউজিসির চেয়ারম্যান, শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় এবং রাষ্ট্রের অভিভাবক মহামান্য রাষ্ট্রপতিও অনেক নির্দেশনা প্রদান ও অনুরোধ করেছেন, উষ্মাও প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান শুধু একজন সজ্জন বা ভালো শিক্ষক নন, একজন পণ্ডিত ব্যক্তিও। আমার শ্রদ্ধার পাত্র এবং অনেক দিন ধরে তাকে একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে চিনি। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আপ্রাণ চেষ্টা করেও কিছু করতে পারছেন না। না পারছেন প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে, না পারছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বাড়াতে। এ কথা বলা নিশ্চয়ই অত্যুক্তি হবে না যে, সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানও বেশ ঊর্ধ্বমুখী নয়। এমনকি সত্তরের দশকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নামিদামি শিক্ষকরা ছিলেন, যাদের শুধু শিক্ষক হিসেবে খ্যাতি নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর কাছে তারা ছিলেন নমস্য। আমরা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় ঘুরেছি একনজর MAC স্যার অর্থাৎ মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী স্যারকে দেখার জন্য। আবদুল মতিন চৌধুরী স্যারকে দেখার জন্য কত যে চেষ্টা করে দর্শন পেয়েছি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখনও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে খ্যাতিমান শিক্ষক নেই আমি বলব না, তবে সংখ্যায় তারা অনেক কম। গোবিন্দ দেব স্যারকে দেখলে শুধু দার্শনিক মনে হতো না, মনে হতো আরও বেশি কিছু। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষাবিদ-পণ্ডিত প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল মান্নান, আপনাদের সমীপে বিবেচনার জন্য আমার সামান্য নিবেদন। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত আয়-ব্যয়ের হিসাব দিচ্ছে না, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসির আইন-কানুন মেনে চলছে না, তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ করা কঠিন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, শিক্ষামন্ত্রী এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে বিনীত অনুরোধ, যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কনভোকেশন অনুষ্ঠিত হয়, দয়া করে ওইসব জটিল অর্থাৎ নিয়ম না মানা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে যাবেন না। কী হবে, একদিন না হয় সংবাদমাধ্যমে আপনাদের দেখানো হবে না। ওইসব তৃতীয় ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে গিয়ে আপনারাও দ্বৈত বিশ্বাসের আশ্রয় নেন। আপনাদের ওইসব অনুষ্ঠানে দেখে ভবিষ্যৎ ছাত্ররাও মনে করে, নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয়টি খুবই ভালো, নতুবা এরকম স্বনামধন্য ব্যক্তিরা কী করে আসেন?
কিছুদিন আগে আমার কাছে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এসেছিলেন Convocation Speaker হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। তাদের Campus, নাম-ধাম বিস্তারিত শুনে আমি অপারগতা প্রকাশ করলে আবারও বিনীত অনুরোধ করে অন্য কাউকে সুপারিশ করে ঠিক করে দেয়ার জন্য। তখন বিনীত জবাব দিয়েছি, আমি যে কারণে যাব না, ঠিক একই কারণে অন্যকে অনুরোধ আমি করতে পারব না। অত্যন্ত বিরক্ত, রাগান্বিত হয়ে চলে যাওয়ার সময় তারা হাসিমুখে কোনো কথাও বলেননি। আমি মনে করি, জীবনে সবচেয়ে উচিত কাজটি আমি করতে পেরেছি। সাড়ে সতেরো বছর বয়সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ক্যাম্পাস না পেলেও হতাশা ছিল না। কারণ বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর এবং বিশাল আকৃতির হাসপাতাল ছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সেই হাসপাতালটি। হোস্টেলে সিট পেতে অসুবিধা হয়নি, সর্বোপরি পাহাড় ঘেরা একটি খেলার মাঠ, সন্ধ্যায় শেয়ালের ডাক- সবই ছিল আকর্ষণীয়। তারপর সোভিয়েত ইউনিয়নের অদেসা স্টেট মেডিকেল ইন্সটিটিউটের রিজিওনাল হাসপাতালের বিশাল ক্যাম্পাস, পরবর্তী সময়ে ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির সেই বিরাটাকার ক্যাম্পাস, সর্বশেষ জার্মানির টিউবিনগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস- একই সঙ্গে কত শিক্ষক, কত শিক্ষার্থীর সমাবেশ। কী অসাধারণ শৃঙ্খলা। ক্লাসের সময় কেউ বাইরে নেই। বিরতির সময় দলবদ্ধ হয়ে উন্মুক্ত মাঠে বসে লেখাপড়া, খেলাধুলা- সে যে কী অসাধারণ দৃশ্য! প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, ক্যাম্পাস সবকিছু দেখে মনে হয় এগুলো উচ্চশিক্ষার কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, অবাক হওয়ার কিছুই নেই, যদি কেউ এগুলোকে কোনো ডিপার্টমেন্টাল শপের সঙ্গে তুলনা করেন। কোনো বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী অথবা স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যায় আক্রান্ত বিশেষ শিশু বা Gifted Child যদি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতর ৫ বছর ঘুরেফিরে আসে, তাহলে সেও একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে বের হয়ে আসবে- কথিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা সম্ভব কি? এ কথাও সত্য, কিছু কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সার্বিক বিবেচনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে অথবা প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছে, তাদের শিক্ষার মান ও পরিবেশ বিবেচনায়।
পুনশ্চ: যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শর্ত পূরণ করেনি, অডিট অ্যাকাউন্টস সময়মতো দাখিল করে না, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু কনভোকেশন গাউন পরার জন্য বা টেলিভিশনে প্রদর্শিত হওয়ার জন্য আপনারা যাবেন না, তাহলে নিশ্চিতভাবেই ছাত্ররা ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যাবে না।
অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক; সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.