পাকিস্তান ব্যর্থরাষ্ট্র হওয়ার দ্বারপ্রান্তে! মূল : আত্তা-উর রহমান অনুবাদ : by এনামুল হক

পাকিস্তান আজ ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্ত্।ে রেন্টাল বিদ্যুত প্রকল্পে দুর্নীতি কেলেঙ্কারির কারণে দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আজ বিধ্বস্ত। এই দুর্নীতির বদৌলতে কতিপয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি শত শত কোটি রুপী করায়ত্ত করে বিদেশে গচ্ছিত রেখেছে।
সরকার দুর্নীতিপূর্ণ এক ব্যবস্থার অধীনে পুরনো ও বাতিলপ্রায় বিদ্যুতকেন্দ্রের মালিকদের কাছ থেকে ইউনিটপ্রতি ৫০ রুপীর ক্ষমার অযোগ্য হারে বিদ্যুত কিনছে। ঘুষ-দুর্নীতির বিস্তারিত বিবরণ আবদুল সাত্তার খান গত ৩১ মার্চ দ্য নিউজ পত্রিকায় প্রকাশ করে দিয়েছেন। বর্তমান সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী বলেছেন, শুধুমাত্র ফেডারেল রেভিনিউ বোর্ডের দুর্নীতির কারণে বছরে ৫০ হাজার কোটি রুপী লোকসান হয় (গত চার বছরে এই লোকসানের পরিমাণ ছিল আড়াই লাখ কোটি রুপীরও বেশি)। এর সঙ্গে পাকিস্তান স্টিল, পিআইএ, পাকিস্তান রেলওয়ে, এসএসজিসি ও এসএনজিসির বিপুল অঙ্কের ঘুষ দুর্নীতি যা অনুরূপ পরিমাণ লোকসানের জন্য দায়ী, সেটা ধরা হলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল পাকিস্তানের এই হিসাবটা বোধগম্য হবে যে, এ বছরের প্রথমদিকে পূর্ণ হওয়া বর্তমান সরকারের ক্ষমতার চার বছরে দুর্নীতির কারণে প্রায় সাড়ে আট লাখ কোটি রুপী লোকসান হয়েছে। সেই লোকসান এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ কোটি রুপীতে।
গণতন্ত্রের বর্তমান ব্যবস্থা ব্যর্থ হওয়ার পিছনে সরকারের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন কার্যকারণ রয়েছে : যেমন ফেডারেল ব্যবস্থার শ্বাসরুদ্ধকর নিষ্পেষণ এবং ব্যাপক নিরক্ষরতা। এই তালগোল পাকানো অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ কি?
প্রথমত, দেশকে যারা লুটপাট করেছে তারা যে রাজনৈতিক দলেরই হোক না কেন তাদেরকে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যাতে করে এর পর যারা ক্ষমতায় আসবে তারা লুটপাটে লিপ্ত হবার সাহস না পায়। আমরা আমাদের স্বাভাবিক বিচার ব্যবস্থাকে অতীতে অপরাধী ধরতে ও শাস্তি দিতে অকার্যকর প্রমাণিত হতে দেখেছি বিধায় এ কাজটা একমাত্র সামরিক আদালতের মাধ্যমেই সম্ভব। দ্বিতীয়ত, বর্তমানের সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদের পরিত্যাগ করতে হবে। যতদিন আমাদের উপর সামন্তভূস্বামীদের শাসন থাকবে ততদিন এই ব্যবস্থা স্রেফ কোন কাজ করতে পারবে না। এরা ক্ষমতায় আসার ও নির্বাচনে জয়ী হবার জন্য ৪০ কোটি রুপী কি তারও বেশি বিনিয়োগ করে থাকে। ক্ষমতায় এসে তারা শত শত কোটি রুপী চুরি করে এবং সেই অর্থ বিদেশী এ্যাকাউন্টে রূপান্তরিত করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়। এটা একটা দুঃখজনক বাস্তবতা যে, সবরকমের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সামরিক শাসন দেশ পরিচালনার গুণগতমানের বিচারে আমাদের পরম আকাক্সিক্ষত ‘গণতন্ত্রের’ চেয়ে হাজার গুণে ভাল; অবশ্য সামরিক শাসন আমাদের সমস্যাবলীর সমাধান নয়। আমাদেরকে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার আরেক উপায় খুঁজে বের করতে হবে। ব্রিটিশ সংসদীয় পদ্ধতির সরকার পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকার চালু করতে হবে, যেখানে এক ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট ও সরকারপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত হবেন। তিনি তখন তার ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে প্রতিটি বিভাগে সেরা সেরা বিশেষজ্ঞদের বেছে নেবেন। এদেরকে কোন নির্বাচন করতে হবে না। পার্লামেন্টের সদস্যও হতে হবে না।
তৃতীয়ত, হাইকোর্ট ও সুপ্রীমকোর্টের স্বনামধন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও অন্যান্য গুণী নাগরিকদের নিয়ে জ্যেষ্ঠদের বিচার বিভাগীয় কাউন্সিল গঠন করতে হবেÑযা প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে সবার কাজকর্ম পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে খতিয়ে দেখবে।
চতুর্থত, গণতন্ত্র সার্থকভাবে কাজ করতে পারার পূর্বশর্ত হলো ভোটারদের সাক্ষরতা, যাতে তারা বিভিন্ন দলের মেনিফেস্টোর মধ্যে পার্থক্য টানতে পারে। সেজন্য শিক্ষার হার বাড়াতে হবে এবং ভোটাধিকার শুধু তাদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে যারা মাধ্যমিক স্কুল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
পঞ্চমত, বর্তমান ব্যবস্থায় সচিবদের হাতে সকল ক্ষমতা ন্যস্ত; অথচ তারা সাধারণত নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ নন। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
ষষ্ঠত, সামরিক বাহিনী দেশের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান। একে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার ভূমিকা দেয়ার কথা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। অতীতে তুরস্কে এই ব্যবস্থা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছে।
সপ্তমত, জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতিতে উত্তরণ ঘটলে তখনই কেবল পাকিস্তানের অগ্রগতি ঘটতে পারে। কাজেই শিক্ষা বিস্তারের জন্য জিডিপির ৮ শতাংশ শিক্ষা খাতে এবং ২ শতাংশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ব্যয় করা প্রতিটি সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে।
অষ্টমত, বিচার বিভাগের সংস্কার করতে হবে, যাতে ৬০ দিনের মধ্যে সকল মামলার নিষ্পত্তি করা যায়। এসব সংস্কার কখনই বর্তমান পার্লামেন্টের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যাবে না। সে কাজটা বিচার বিভাগ ও সামরিক বাহিনীর সমর্থনে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বারা করতে হবে। যদি কোন কিছুই না করা হয় এবং বর্তমান ব্যবস্থা আরও পাঁচ বছর চলতে দেয়া যায়, তাহলে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বেতন দেয়ার মতো অর্থ কোষাগারে থাকবে না। দেশ দুর্নীতি ও ঋণে জর্জরিত হয়ে ডুবতে বসবে। পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে ব্যর্থ হয়ে যাবার আগে সুপ্রীমকোর্টকে অবশ্যই স্বউদ্যোগে কোন পদক্ষেপ নিতে হবে।
লেখক : পাকিস্তানের সাবেক ফেডারেল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী

No comments

Powered by Blogger.