গ্রামের বাড়ির কমপেস্নক্সটি উদ্বোধন করা হলো না জ্যোতি বসুর- বারদীতে শোকের ছায়া by রম্নমন রেজা

 নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও উপজেলার বারদী ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামের বাড়িতে কমপেস্নক্স উদ্বোধন করতে আসা হলো না ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কিংবদনত্মি রাজনীতিক, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর।
বর্তমান মহাজোট সরকার মতায় আসার পরপর জ্যোতি বসুর শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত এ বাড়িতে জাদুঘর, সংগ্রহশালা ও লাইব্রেরি স্থাপনের সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়। জ্যোতি বসুকে দিয়েই এ কমপেস্নক্স উদ্বোধন করার চিনত্মাভাবনা ছিল সরকারের। এদিকে জ্যোতি বসুর মৃতু্যতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বারদীতে। মৃতু্যর খবর পাওয়ার পর গ্রামের অনেকেই বাড়িটিতে ভিড় জমায়।
পশ্চিমবঙ্গের বর্ষীয়ান এ রাজনৈতিক নেতার জীবনের শৈশবের একটা অংশ কেটেছে মেঘনা নদীর তীরে সোনারগাঁওয়ের বারদী চৌধুরীপাড়া গ্রামে। বারদী চৌধুরীপাড়া গ্রামে আজও জ্যোতি বসুর স্মৃতিবিজড়িত পুরনো আমলের কারম্নকার্যময় দোতলা বাড়িটি এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জ্যোতি বসুর বাড়িতে শহীদুলস্নাহ (৭৫) তাঁর পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। মূলত শহীদুলস্নাহ বাড়িটির তত্ত্বাবধায়ক। শহীদুলস্নাহর মা আয়াতুন নেছা শৈশবে জ্যোতি বসুর দেখাশোনা করতেন।
জানা গেছে, সোনারগাঁওয়ের বারদী চৌধুরীপাড়া গ্রামে ২ একর ৪ শতাংশ জমিতে দোতলা বাড়িটি জ্যোতি বসুর। দোতলা বাড়ির নিচতলায় রয়েছে দু'টি রম্নম ও একটি বৈঠকখানা, ওপরতলায় দু'টি রম্নম ও একটি ড্রয়িংরম্নম। এছাড়া বিশাল বাড়িতে রয়েছে পুকুরসহ বিভিন্ন প্রকার গাছপালা। ১৯৪০-৪২ সাল পর্যনত্ম জ্যোতি বসুর পরিবারের লোকজন সোনারগাঁওয়ের এ বাড়িতে থাকতেন। এরপর তাঁরা কলকাতা চলে যান। জ্যোতি বসুর বাবা নিশিকানত্ম বসু পেশায় ডাক্তার ছিলেন। এছাড়া তাঁর ব্যবসাও ছিল। তিনি কলকাতা থেকে প্রায়ই সোনারগাঁওয়ের বারদীতে বেড়াতে আসতেন। ডা. নিশিকানত্ম বসু সোনারগাঁওয়ের বারদী চৌধুরীপাড়া গ্রামের খিরোধা সুন্দরীর মেয়ে হেমালতাকে বিয়ে করেন। এ বাড়িটি ছিল জ্যোতির বসুর নানি খিরোধা সুন্দরীর। ছোটবেলায় জো্যতি বসুর মা হেমলতা বসু মারা গেলে জ্যোতি বসুকে দেখভালের জন্য শহীদুলস্নাহর মা আয়াতুন নেছাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সোনারগাঁওয়ের বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্বে দেয়া হয় আয়াতুন নেছার ছেলে শহীদুলস্নাহকে।
জ্যোতি বসু সমাজকল্যাণ পরিষদের সভাপতি শহীদুলস্নাহর ভাতিজা ইউসুফ আলী জানান, সোনারগাঁওয়ের বারদীতে চৌধুরীপাড়া গ্রামের এ বাড়িটি জ্যোতি বসুর নানা শরৎচন্দ্র দাসের। জ্যোতি বসুর বাবা নিশিকানত্ম বসু পেশায় ডাক্তার ছিলেন। তিনি এলাকায় এনকে বসু নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ছুটিতে প্রায়ই সোনারগাঁওয়ে বেড়াতে আসতেন। বেড়াতে এসে বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা করতেন। বাবার সাথে জ্যোতি বসু প্রায়ই বারদীতে আসতেন। জ্যোতি বসুর ভাই সুরেন্দ্র কিরণ বসু ও বোন সুধা দত্ত বসু। জ্যোতি বসু ছিলেন সবার ছোট। ছোটবেলার একটা অংশও কাটে এ বাড়িতে। বর্তমানে সোনারগাঁওয়ে জ্যোতি বসুর কোন আত্মীয়স্বজন নেই।
তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে তিনি প্রথমে ১৯৮৭ সালের ৩০ জানুয়ারি ও পরে ১৯৯৭ সালের ১১ নবেম্বর জ্যোতি বসু দু'বার বাংলাদেশে এসে তিনি তাঁর শৈশব স্মৃতিবিজড়িত স্থান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের বারদী চৌধুরীপাড়া গ্রামে এসে বেশকিছু সময় কাটান।
বর্তমান মহাজোট সরকার মতায় আসার পর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জ্যোতি বসুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতায় নিয়ে এটাকে জাদুঘর, সংগ্রহশালা ও লাইব্রেরি স্থাপনের সিদ্ধানত্ম নেয়। ২০০৯ সালের ১৫ জুলাই সংস্কৃতি জাতীয় সংসদের তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রানত্ম স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগরে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বারদী জ্যোতি বসুর বাড়ি পরিদর্শন করতে গিয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, কিংবদনত্মি রাজনীতিবিদ সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে দিয়েই এ জাদুঘর কমপেস্নক্সটি উদ্বোধন করা হবে। এ বাড়িটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ড রয়েছে। বাড়িটি সংরণ, সংস্কার, জাদুঘর, গ্রন্থাগার স্থাপন করা ছাড়াও জ্যোতির বসুর নামে রাসত্মার নামকরণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলে জানানো হয়।
জ্যোতি বসুর মৃতু্যতে বারদীতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বারদী বাজার এলাকার ব্যবসায়ী স্বদেশ চন্দ্র দাস জানান, জ্যোতি বসু আমাদের গর্ব। জ্যোতি বসুর কারণেই দেশে-বিদেশে বারদীর নাম আলোচিত হচ্ছে। তাই আমাদের দাবি, জ্যোতি বসুর স্মৃতি রার্থে বারদীর বাড়িতে দ্রম্নত কমপেস্নক্স নির্মাণ করা হোক। এ কমপেস্নক্স নির্মাণ করা হলে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা এখানে আসবেন। তবেই তাঁর প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে।

No comments

Powered by Blogger.