খুনীদের ফাঁসি এত দ্রুত কার্যকর হলো যে কারণে- নেপথ্য কাহিনী by গাফফার খান চৌধুরী

নিরাপত্তার কারণে বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনীর ফাঁসি সময়মতো কার্যকর করা হয়েছে। খুনীদের সেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কারারৰীদের নানা প্রসত্মাব দেয়ার চেষ্টা করেছিল খুনীরা। অন্যদিকে জীবিত অবস্থায় খুনীদের মৃতু্যযন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়ার বিষয়টিও সময়মতো ফাঁসি কার্যকর হওয়া অন্যতম কারণ।
পাশাপাশি খুনী পরিবারের সদস্যদের উৎকণ্ঠা থেকে পরিত্রাণ দেয়ার বিষয়টিও প্রাধান্য পেয়েছে এৰেত্রে। তবে উচ্চ আদালত আইনানুযায়ী দ্রম্নত খুনীদের ফাঁসি কার্যকর করতে কারা কতর্ৃপৰকে নির্দেশ দেয়। এজন্য আদেশের দিনেই খুনীদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কারা সূত্র জানায়, মূলত আদালতের নির্দেশেই বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনীর ফাঁসি সময়মতো কার্যকর করা হয়েছে। দীর্ঘ বন্দী জীবনে খুনীদের মানসিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। তাদের চেহারায় অপরাধবোধের মারাত্মক ছাপ পড়ে। গত ১৯ নবেম্বর ফাঁসির আদেশ বহাল থাকার ঘোষণা দেয় উচ্চ আদালত। এরপর থেকেই খুনীদের বিরাট মানসিক পরিবর্তন লৰ্য করে কারা কতর্ৃপৰ। প্রায় রাতেই নানা ধরনের চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ পাওয়া যেতে থাকে ৫ খুনীর সেল থেকে। ঘুমের ঘোরে নানা ধরনের উদ্ভট উদ্ভট আওয়াজ করতে থাকে খুনীরা। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কারারৰীদের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে উর্ধতন কারা কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হতো। নিয়মিত প্রতিটি খুনীর সেলের সার্বিক পরিস্থিতি লিপিবদ্ধ করা হতো। এছাড়া খুনীদের আচার-আচরণের ওপর উর্ধতন কারা কর্মকর্তারাও নজর রাখতেন। শেষ দিকে খুনীরা সেলের ভেতরে নানা অস্বাভাবিক কাজকর্ম করত। মানসিক যন্ত্রণায় অস্থির খুনীরা এ ধরনের আচরণ করতে পারে বলে কারা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কারারৰীদের নানা প্রসত্মাব দেয়ার চেষ্টাও করেছে খুনীরা। শেষ পর্যনত্ম কারা কতর্ৃপৰ ৫ খুনীর সেলে ৫টি সিসি ক্যামেরা বসিয়ে দেয়। এছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। দায়িত্বরত কারারৰীদের খুনীদের সেল থেকে অনত্মত ১০ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করার আদেশ জারি করা হয়। এছাড়া খুনীদের সঙ্গে দায়িত্বরত কারারৰীর আলাপ-আলোচনা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। দায়িত্ব পালনের আগে ও পরে নিরাপত্তাকর্মীদের দেহ কয়েক দফায় তলস্নাশি করা হতো। সর্বশেষ ফাঁসি কার্যকরের আগে খুনীরা ঘন ঘন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাৰাতের চেষ্টা করে। দেখা-সাৰাতের আড়ালে গোপন কোন যড়ষন্ত্র হচ্ছিল কি-না তা বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল কারা কর্তৃপৰকে। আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে আবার কোন গোপন ষড়যন্ত্র হচ্ছিল কিনা তাও ভাবিয়ে তুলেছিল কারা কর্তর্ৃপৰকে।
গোয়েন্দারা ফাঁসি কার্যকরকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কা করেছিল। যে কোন সময় নাশকতা বা হামলার মতো ঘটনা ঘটানো হতে পারে। এজন্য জঙ্গীরা তৎপরতা চালাচ্ছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে বেশকিছু এলাকায় জঙ্গীদের তৎপরতা ছিল। কারাগারের আশপাশের কয়েকটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের আড়ালে জঙ্গী ও একটি বিশেষ গোষ্ঠী তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করেছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার তৌহিদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, নিরাপত্তা একটি বড় ইসু্য ছিল। গত ৩ জানুয়ারি খুনীদের ওয়ারেন্ট অব এক্সিকিউশন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পেঁৗছে। ওই দিন থেকেই ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃতু্যদ-ের দিনৰণ গণনা শুরম্ন হয়। বিধি মোতাবেক ২১ দিনের আগে ফাঁসি কার্যকরের বিধান নেই। তবে অবশ্যই ২৮ দিনের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। সে হিসেবে ২৭ জানুয়ারিতে ২৪ দিন হয়। রাত ১২টার পর ২৫ দিনের শুরম্ন। এছাড়া ওই দিনই রিভিউ পিটিশনের বিষয়ে আদালত আদেশ দেয়। অর্থাৎ খুনীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃতু্যদ- কার্যকর করতে আর কোন বাধা নেই।
তিনি বলেন, অপেৰা খুবই অস্বসত্মিকর বিষয়। আর তা যদি হয় নিশ্চিত মৃতু্যর। তা হলে তো কথাই নেই। যে কোন মানুষের মৃতু্যর জন্য অপেৰা করা সবচেয়ে কষ্টের। যত দিন পর ফাঁসি কার্যকর করা হবে তত দিন দ-িতরা জীবিত থেকেও মৃতু্যর যন্ত্রণা ভোগ করবে। সেৰেত্রে যত দ্রম্নত সম্ভব ফাঁসি কার্যকর করা। এতে দ-িতকে মৃতু্যর যন্ত্রণা থেকে অনত্মত কিছু সময়ের জন্য মুক্তি দেয়া যায়। রায় কার্যকর করতে যত দেরি করা হবে দ-িত ব্যক্তি তত মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়বে। সেৰেত্রে অনেক সময় দ-িত ব্যক্তি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থতার কারণে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃতু্যদ- কার্যকর জটিল হয়ে পড়তে পারে। মহামান্য আদালতের রায় অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে খুনীদের মৃতু্যদ- কার্যকর করতেই হবে। সে আজ হোক আর কাল হোক। এজন্য যত দ্রম্নত সম্ভব কারা কতর্ৃপৰ মৃতু্যদ- কার্যকর করে থাকে। দ- দ্রম্নত কার্যকর হলে দ-িত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদেরও মানসিকভাবে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে নিষ্কৃতি মেলে। আইনানুযায়ী আর কয়েক দিন পর খুনীদের ফাঁসি কার্যকর করতে আইনগত কোন বাধা ছিল না। কিন্তু যে কয়েক দিন পরে খুনীদের ফাঁসি দেয়া হতো সে কয়েকটি দিন খুনী পরিবারের সদস্য ও সংশিস্নষ্টরা অত্যধিক মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতেন। যা কারা কতর্ৃপৰ বা দ-িত ব্যক্তির দ- কার্যকরের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিরা কামনা করেন না। বিষয়টি অনেকটাই অলিখিত আইনের মতো। এসব কারণে এ ধরনের দ- দ্রম্নত কার্যকর করা হয়ে থাকে।

No comments

Powered by Blogger.