পিংকির আত্মহনন by মোমিন মেহেদী

নিজ হাতে জীবন দেয়ার ঘটনা বাংলাদেশের অনেক জায়গায় অহরহ ঘটেছে। পিংকিও নিজের জীবন নিজে দেন। এর মুল কারণ হিসেবে আমি বলব, স্বাধীন দেশেও আমরা প্রকৃত যুক্তিশীল সমাজ গড়ে তুলতে পারিনি।
যুক্তিশীল সমাজ গড়ে তোলা হলে সমাজে প্রতিটি নাগরিকের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার প্রকাশ ঘটতে থাকবে। সমাজে যুক্তিহীনতার বিকাশ হলে সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ার ভিত্তি তৈরি হবে। এটা তখনই সম্ভব যখন বাংলাদেশের অভ্যনত্মরে ছোট ছোট জনকতর্ৃত্বের সরকার গড়ে উঠবে। এমন স্থানীয় সরকারের নকশা আমাদের সংবিধানে দেয়া আছে। বাসত্মবে আমাদের এখানে লোকের সামাজিক আচরণের ওপর সামাজিক কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। একমাত্র পুলিশ ফোর্স দিয়ে সব সমস্যার সমাধান হবে এটা ভাবলেও লাভ নেই। কারণ পুলিশ ফোর্স যে যুক্তিশীল হবে তার গ্যারান্টি কি ? তাই আমি বলব, পিংকির আত্মহত্যার প্রধান কারণ সংবিধানের ৬৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদে স্থানীয় সরকারের যে নকশা দেয়া আছে তা কার্যকর না হওয়া। হলে এরকম অঘটন ঘটত না।"_ বিচারপতি গোলাম রব্বানীর এই চির সত্য, চির প্রয়োজনীয় কথাগুলো আমাদের সমাজের দেশের পরিবর্তন আনতে সম। যদি তা বাসত্মবায়ন হয়। পিংকি বখাটেদের উৎপাতে একানত্ম বাধ্য হয়েই বেছে নেয় মৃতু্যর পথ। এই পথ বেছে নিয়েছিল সিমি রম্নমাসহ আরও অনেক মেধাবী শিার্থী। যারা বেঁচে থাকলে দেশ ও জাতি মেধার এক টুকরো আলো বেশি পেত। "জীবন সে তো পদ্ম পাতার শিশির বিন্দু"_ কথাটিকে সত্য প্রমাণ না করলে শ্যামলী আইডিয়াল টেকনিক্যালে স্কুল এ্যান্ড কলেজের মেধাবী শিাথর্ী নাসফিয়া আনন্দ পিংকিকে পেতাম একজন প্রকৌশলী হিসেবে। স্বপ্নময় জীবনের দিকে এগিয়ে চলতো পিংকি নামক সুখ তরীটি। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাসত্মবায়ন সংস্থার প থেকে এ্যাডভোকেট এলিনা খান জানান, আমাদের দেশের বিষয়টি হচ্ছে এমন, এ দেশে যথেষ্ট আইন আছে, এজন্য কঠিন সাজাও আছে, তবে প্রয়োগ নেই। এজন্য আমি আমাদের মেয়েদের অভিভাবকদেরও একটু দোষ দেব। কারণ, একটি মেয়ে নির্যাতনের শিকার হতে থাকলেও তারা চুপ থাকেন। আবার অনেক সময় এ নিয়ে মেয়েদের বকাবকি করেন ও গালমন্দ করেন। কিন্তু তাকে যে জ্বালাতন করে তার বিরম্নদ্ধে কোন ধরনের পদপে নেয়া হয় না। এতে মেয়েরা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এজন্য আমি বলছি, এসব ব্যাপারে মা বাবাদের অথবা অভিভাবকদের অনেক সচেতন হতে হবে। উত্ত্যক্ত করে কোন ঘটনা ঘটলে সরাসরি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানাতে হবে। আবার শুধু জানালেই হবে না, যদি তারা কোন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে তাদের বিরম্নদ্ধেও আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। এই কথার মাধ্যমেই বোঝা যায় উত্ত্যক্তকারীকে যথেষ্ট শায়েসত্মা করার ব্যবস্থা থাকলেও আমরা তা ব্যবহার না করার মুরাদদের মতো অসংখ্য যুবক গড়ে উঠছে দেশের আনাচে কানাচে। এইসব ইভটিজিং এর সাথে জড়িতদের বিরম্নদ্ধে আমাদের সবাইকেই সচেতন হতে হবে।
এেেত্র একটি কথা না বললেই নয়, নাসফিয়া আখন্দ পিংকি বখাটেদের উত্ত্যক্ততার কারণে বেছে নিয়েছে আত্মহননের পথ। কিন্তু আরও অজস্র পিংকিকে অসংখ্য মুরাদদের ইভটিজিং এর মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতিদিন। অনেকেই মুখ বুজে সহ্য করছে। আবার অনেকেই সেই ইভটিজিং এর সূত্র ধরে হচ্ছে গৃহবন্দী।
কাজীপাড়ায় ভাড়া থাকেন আশরাফুল সাহেব। তার একটি মেয়ে আর একটি ছেলে। স্ত্রী সনত্মান সংসার নিয়ে ভালই চলছিল তার জীবনযাপন। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর স্ত্রী বললেন সুমনাকে পাশের বাসার ছেলেটি উত্ত্যক্ত করে। প্রেমের প্রসত্মাব দেয়। আশরাফুল সাহেব খুবই উদার মানুষ। স্বভাবগতভাবেই একটা হাসি দিয়ে বললেন, ও কিছু না। ক'দিন গেলে এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। তারও দু'মাস পরের ঘটনা। মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন আশরাফুল সাহেব। কারণ ইভটিজিং বন্ধ হয়নি। বন্ধ হয়নি ছেলেটির প্রতিনিয়ত প্রেম প্রসত্মাব। তাই সহজ সরল বাবা হিসেবে তিনি চাননি ঘটনাটা জানাজানি হোক বা মেয়ের কোন তি হোক। আর তাই যথারীতি স্কুল বন্ধ। এই হলো আমাদের চারপাশের চিত্র। আর তাই এক পিংকিকে হারানোর মধ্য দিয়ে আমাদের সবার সচেতন হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। যাতে আর কোন যুবকের ফেলা মৃতু্যদড়িতে আত্মহননের ঘটনা না ঘটে।
এই যে মুরাদ, একবারের জন্যও ভাবে নি তারও তো বোন আছে। তার বোনকেও তারই মতো কেউ না কেউ উত্ত্যক্ত করতে পারে। ভাবা উচিত। বিশেষ করে পরিবারের থেকে বাবা মার কাছ থেকে ছেলেরা যাতে এইসব কিছু থেকে বিরত থাকে সেই শিা দিতে হবে। এই দেশ আমাদের এই সমাজ আমাদের এখানে কোন আত্মহননের সুযোগ থাকবে না। থাকবে অবারিত হাসি খুশি আনন্দ। কিশোরী তরম্নণী কেউ এ পথে যাবে না। যে পথে গিয়েছে পিংকি বা অন্যরা। তবে এজন্য আমাদেরকে গড়তে হবে সামাজিকভাবে সচেতন একটি সমাজ। যেখানে মা বাবা দু'জনেরই সমান মতায়ন হবে। বাবা মা দু'জনেরই থাকবে সমান অধিকার। আর এই অধিকার শুধু মুখে নয় বাসত্মবে রূপায়িত হলে মুরাদরা ভয়েও না, আবার সাহসেও না, সচেতনতায় শুদ্ধ হবে। পিংকিকে মনে হবে তারই মতো মানুষ। তার গায়ে হাত তোলা তো অনেক দূরের কথা হয়তো শ্রদ্ধা, নয়তো স্নেহ। দুটির যে কোন একটি থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে। সেই সমাজ গড়ে উঠুক। সংসদ হোক নারী পুরম্নষের সম সম্মিলনের, দেশ হোক পুরম্নষ-নারী সম অধিকারের...। ম

No comments

Powered by Blogger.