জলস্নাদরা খুনীদের বলে রাসেলের কান্নায় তো তোমাদের মায়া জাগেনি- অনত্মিম মুহূর্তে by গাফফার খান চৌধুরী

 বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনীর মধ্যে এক খুনী চিৎকার করে জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়ে ছিল। বলেছিল আমাকে মাফ করে দেন। আমাকে জেল থেকে ছেড়ে দেন। আমাকে আপনারা মাফ করে দেন। আমি দূরে কোথাও চলে যাব।
আর কোন দিন এদেশে আসব না। তাতে কেউ কর্ণপাত না করলে হুকুমের সুরে ওই খুনী বলেছিল। আমাকে জেল থেকে ছেড়ে দে। ঠিক এ সময় দু'জলস্নাদ বলেছিল, রাসেলও এভাবে চিৎকার করেছিল। তখন কই ছিল তোর দয়ামায়া। আজ কেঁদে লাভ নেই! কনডেম সেলে মাথায় কালো জমটুপি ও দু'হাতে হ্যান্ডকাফ পরানোর পর কনডেম সেল থেকে ফাঁসির মঞ্চ পর্যনত্ম যেতে যেতে এভাবেই চিৎকার করছিল খুনী মহিউদ্দিন আর্টিলারি।
দুপুর থেকে খুনীদের পরিবারের আত্মীয়স্বজন কারাগারে খুনীদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে সাৰাত করতে থাকেন। সন্ধ্যার আগে যাদের মেজর (অব) বজলুল হুদার আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সাৰাত শেষ হয়। এরপর বজলুল হুদার সেলে প্রবেশ করেন ডা. রথীন্দ্রনাথ কু-ুু ও শামসুদ্দিনসহ সঙ্গীয় এ্যাসিটেন্টরা। যথারীতি শারীরিক চেকআপ হয়। এরপর একে একে বাকি ৪ খুনীর সঙ্গে আত্মীয়স্বজনদের সাৰাত পর্বের ইতি ঘটে।
এরপর আসত্মে আসত্মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে খুনীদের সেলে গরম গরম গরম্নর মাংস, খাসির মাংসের তরকারি, ডাল, সবজি ও সাদা ভাত পেঁৗছে দেয়া হয়। খুনীরা অন্যান্য দিনের মতো যথারীতি রাতের খাবার খেয়ে কেউ বসে থাকে; কেউ বা দেয়ালে ঠেস দিয়ে ঝিমোতে থাকে। আবার কেউ আধো কাঁত হয়ে আবার কেউ বা শুয়ে ঝিমুতে থাকে। রাত ১০টার পর পুরো চেহারা পাল্টে যায় সেলগুলোর। রাত ১০টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উর্ধতন কর্মকর্তারা হঠাৎ করেই খুনীদের সেলে প্রবেশ করেন। এরপর এলান জারি করা হয়। খুনীদের জানিয়ে দেয়া হয় আজ তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মহামান্য আদালতের রায় কার্যকর করা হবে। এ সময় কারা কর্মকর্তারা খুনীদের কাছে তাদের শেষ ইচ্ছা কি জানতে চায়। দ্রম্নত শেষ ইচ্ছা জানাতে বা সময় নিয়ে ভেবে শেষ ইচ্ছা কারা কর্মকর্তাদের জানাতে বলা হয়। খুনীরা তাদের শেষ ইচ্ছার কথা জানায়নি। এ সময় খুনীরা নীরব হয়ে যায়। কারা কর্মকর্তারা সেল ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে শুরম্ন হয় করম্নণ আর্তনাদ।
ঠিক এ সময় পুরো সেলের পরিবেশ পাল্টে যায়। আলস্নাহ আলস্নাহ যিকির শুরম্ন হয়ে সেলে সেলে। কেউবা কলেমা, কেউবা দোয়া দরূদ পড়তে থাকে। এ অবস্থা চলতে থাকে রাত ১২টা পর্যনত্ম। এরপর লে. কর্নেল (অব) ফারম্নক রহমান ও লে. কর্নেল (অব) শাহরিয়ার রশিদ খানের সেলে প্রবেশ করে ৪ জলস্নাদ। চার জলস্নাদ একসঙ্গে এসে দু'জন করে দু'ভাগ হয়ে যায়। এ সময় খুনীদের দৃষ্টি ছিল জলস্নাদের দিকে। ভয়ে খুনীরা শিউরে ওঠে। জলস্নাদের হাতে সেই জমটুপি। দু'জলস্নাদ একটি কালো জমটুপি হাতে নিয়ে প্রবেশ করে ফারম্নক রহমানের সেলে। বাকি দু'জলস্নাদ একটি কালো জমটুপি হাতে প্রবেশ করে সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানের সেলে। জলস্নাদরা সেলে প্রবেশ করেই খুনীদের কয়েদির পরিষ্কার পোশাক পরতে বলে। এতে রাজি না হলে জলস্নাদরা নিজহাতে খুনীদের সেলে জেল কর্তর্ৃপৰের দেয়া কয়েদির পরিষ্কার পোশাক পরিয়ে দেয়। এরপর তাদের মাথায় পরিয়ে দেয়া হয় কালো জমটুপি। এরপর একে খুনীদের দু'হাত পিছনে হ্যান্ডকাফ দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়। তারপর দু'জন করে ৪ জলস্নাদ খুনীদের দু'হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে ফাঁসির মঞ্চের দিকে। এভাবেই খুনী একেএম মহিউদ্দিন ও বজলুল হুদাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। সবশেষে পালা মহিউদ্দিন আহমেদ আর্টিলারির।
গভীর রাতে দু'জলস্নাদ একটি কালো যমটুপি হাতে মহিউদ্দিনের সেলে প্রবেশ করে। মহিউদ্দিন জলস্নাদদের দেখে ভয়ে কান্নাকাটি শুরম্ন করে। সে সেলের ভিতরে খাঁচার পাখির মতো ছটফট করতে থাকে। খাঁচা ভেঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জলস্নাদরা সামনে খাঁড়া। জলস্নাদরা ঢুকেই মাথায় কালো জমটুপি পরিয়ে দেয়। পরে নতুন কয়েদি পোশাক পরানো হয়। মাত্র কয়েক সেকেন্ড পরেই দু'হাত হ্যান্ডকাফ দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয়া হয় পিছনে। এরপর জলস্নাদরা ফাঁসির মঞ্চের দিকে জোর করে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। যখন সেল থেকে বের করে জলস্নাদরা মহিউদ্দিনকে নিয়ে হাঁটা শুরম্ন করে তখনই বিকট শব্দে চিৎকার করে ওঠে মহিউদ্দিন। বলে আমাকে মাফ করে দেন। আমাকে জেল থেকে ছেড়ে দেন। আমি দূরে কোথাও চলে যাব। আর এদেশে আসব। তাতেও জলস্নাদরা কর্তব্য পালনে অটল থাকলে ধমকের সুরে মহিউদ্দিন বলেছিল_ আমাকে ছেড়ে দে! ফাঁসির মঞ্চে গিয়ে হাঁউমাউ করে কেঁদে কালো জমটুপি মাথায় নিয়েই যাকে কাছে পেয়েছে তার পায়ের কাছেই লুটিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। মহামান্য আদালতের হুকুম বলে কথা।

No comments

Powered by Blogger.