শেষ পর্যনত্ম দুর্বিষহ স্মৃতি হয়েই রইল মিরপুর টেস্ট- দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে উল্টো বিপর্যয় টাইগারদের by আরিফুর রহমান বাবু

 কত হিসেব-নিকেশ। কত আলোচনা-পর্যালোচনা। কত জল্পনা-কল্পনা। সব ভুল-সব মিথ্যা। তামিম ইকবালের অতিমানবীয় উইলোবাজি হঠাৎই আশা জাগিয়েছিল। ভাবা হচ্ছিল, চট্টগ্রামের পর মিরপুরেও টাইগাররা পেছন থেকে ভারতের কাছাকাছি চলে আসবে।
ধোনি বাহিনীকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে। সে সম্ভাবনা জেগেছিল। তামিম ও জুনায়েদের গড়ে দেয়া শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে সত্যিই ভারতকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ পেয়েছিল শাকিবের দল। কিন্তু শেষ পর্যনত্ম সে সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। ঘুরিয়ে বললে সুযোগের অপব্যবহার করেছে শাকিবের দল। আবার যাচ্ছেতাই ও দায়িত্বহীন ব্যাটিং করে উল্টো বিপর্যয় ডেকে এনেছে। ভারতকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে গিয়ে নিজেরাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। ১০ উইকেটের অনায়াস জয়ে মাঠ ছেড়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল।
আগের দিন মঙ্গলবার তামিম-জুনায়েদ দ্বিতীয় উইকেটে দারম্নণ শক্ত ভিত গড়ে দেয়ায় অনেকটা পেছনে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশ পায় সামনে আগানোর পথ। কিন্তু দুর্ভাগ্য অনেকদূর এগিয়েও শেষ পর্যনত্ম তামিম-জুনায়েদের কেউই তৃতীয় দিন শেষ করতে পারেননি। ২০০ রানের বিশাল জুটি ভেঙ্গে গিয়েছিল একদম পড়নত্ম বিকেলে। তাতে কিন্তু ভিত নড়বড়ে হলেও সম্ভাবনার সবটুকু শেষ হয়ে যায়নি। বাকিটুকু নির্ভর করছিল আশরাফুল, রকিবুল, শাকিব, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদ উলস্নাহ রিয়াদের ওপর। ওরা ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারলেই ম্যাচ আবার জমে উঠত। খুব বড় ও কঠিন না হোক, ভারতের সামনে অনত্মত একটা মাঝারি ল্য এঁটে দেয়া যেত। গোটা দেশ ও জাতি সে আশায়ই ছিল। দৈনন্দিন জীবনের হাজারো কাজের মধ্যেও বুধবার সকাল থেকে টিভির সামনে বসেছিল কোটি বাঙালী। কিন্তু দুপুর গড়ানোর আগেই সে স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার। মাঝারি টার্গেট বহুদূরে, আবার ইনিংস পরাজয়ের লজ্জায় ডোবার সম্ভাবনাই জেগেছিল। মুশফিকুর রহিমের এক বাউন্ডারিতে সে লজ্জাটুকু নিবারণ হয়েছে মাত্র। এতে করে ভারতের সামনে ২ রানের ছোট্ট টার্গেট দাঁড়ায়, যা ছোঁয়ার জন্য নামা না নামা আসলে একই কথা। কিন্তু নিয়ম, নিয়মই। ওই নিয়মরার জন্যই নামতে হলো সেবাগ ও গৌতম গাম্ভীরকে। শাকিবের করা প্রথম ওভারের প্রথম বলকে কভারের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন সেবাগ। পরের বলেই চালালেন। কিন্তু ব্যাটে-বলে হলো না। কীপার মুশফিকুর রহিমও ধরতে পারলেন না। বল চলে গেল থার্ডম্যানে। ফিল্ডার দৌড়ে ধরে থ্রো করতে করতেই দুবার প্রানত্মবদল হয়ে গেল। বাই রান থেকেই জয়সূচক রান পেল ভারত।
এরই সঙ্গে একটা সম্ভাবনাময় ম্যাচের অন্যরকম সমাপ্তি ঘটল, যা হতে পারত জমজমাট লড়াই, তা দারম্নণ একপেশে ও ম্যাড়মেড়েভাবে শেষ হলো। ইতিহাসে লেখা থাকবে, স্কোরকার্ড ঘেঁটেও মিলবে, জহির খানের বিধ্বংসী বোলিংয়েই মিরপুরের দ্বিতীয় টেস্টে ১০ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। জহির খান ভাল বোলিং করেছেন ঠিক। সুইং পেয়েছেন যথেষ্টই। রিভার্স সুইংও হয়েছে। কিন্তু তা আর যাই হোক, বিধ্বংসী ছিল না। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যাকে বলে 'আনপেস্নয়েবল', আর যাই হোক, তা ছিল না। বাসত্মবতা হচ্ছে_ আশরাফুল, রাজিব, রকিবুল, শাকিব ও রিয়াদরা চরম দায়িত্বহীন ব্যাটিং করে বিপর্যয় ডেকে এনেছেন। না হয়, ভারতকে অনত্মত দেড়-দু'শ' রানের টার্গেট দেয়া যেত। তাহলে বাংলাদেশ জিতে যেত, এমন নয়। ভারতকে কঠিন চাপে ফেলা যেত তাও বলার উপায় নেই। তবে খেলাটা হয়ত শেষ দিনে গড়াত।

No comments

Powered by Blogger.