গো. আযমের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিলেন ছেলে আমান আযমী- যুদ্ধাপরাধী বিচার

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের পক্ষে প্রথম সাফাই সাক্ষী সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্তকৃত তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর সাক্ষ্য গ্রহণ মঙ্গলবার থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষে তাঁর আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। আজ আবার যুক্ততর্ক শুরু হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ এই ুদুটি মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ৩ জানুযারি গোলাম আযম সহ চার শীর্ষ নেতার পুনর্বিচারের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। এর পর গোলাম আযমের পুনরায় সাফাই সাক্ষী শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই জবানবন্দী গ্রহণ করা হচ্ছে।
জবানবন্দী পেশ অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। এর আগে তিনি পাঁচ দিন জবানবন্দী পেশ করেছেন। মঙ্গলবার তিনি তাঁর সাক্ষ্যে পিতা গোলাম আযমের পক্ষে বিভিন্ন নথিপত্রের কপি ও পত্রিকার কাটিং মিলিয়ে ৯৯টি এগজিবিট উপস্থাপন করেন বলে তাঁর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম জানান।
এর আগে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমানসহ প্রসিকিউশনের পক্ষে ১৭জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সাক্ষীরা হলেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গবেষক, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম ওরফে এসপি মাহাবুব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, মানবাধিকার কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বাংলা একাডেমীর সহকারী গ্রন্থাগারিক এজাব উদ্দিন মিঞা, সেলিনা আফরোজ, কাজী আইয়ুব, ডা. মুনিয়া ইসলাম চৌধুরী, ড. স্বপন কুমার বিশ্বাস, এসআই আমিনুল, জামিনুর শেখ, শাফিউদ্দিন আহম্মেদ, সোনা মিয়া, আনোয়ারা বেগম, বিশিষ্ট সুরকার ও গীতিকার মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল এবং শেখ ফরিদ আলম। আসামিপক্ষের আইনজীবী তাদের জেরার কার্যক্রমও শেষ করেছে।
এ ছাড়া প্রসিকিউশনের ১৬তম সাক্ষী হিসেবে আমেরিকা প্রবাসী মহসিন আলী খানের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দীকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল। মানবতাবিরোধী ৫ ধরনের অপরাধের ৬১টি অভিযোগে অভিযুক্ত করে গত ১৩ মে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। ১০ জুন তাঁর বিরুদ্ধে ওপেনিং স্টেটমেন্ট উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন। এরপর ১ জুলাই থেকে তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ।
কাদের মোল্লা ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন অব্যাহত রয়েছে। আজ আবার যুক্তিতর্ক শুরু হবে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার যুক্তিতর্ক শেষ হলেই রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করা হবে। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন কাদের মোল্লার পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। আজ আবার যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে সোমবার কাদের মোল্লার মামলা পুনর্বিচারে আসামিপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরুর মধ্য দিয়ে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) সম্পন্ন করেছে। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পরে আইন অনুসারে কাদের মোল্লার মামলার রায় প্রদানের তারিখ ঘোষণা করবে ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খান ও মনোয়ারা বেগমসহ প্রসিকিউশন পক্ষের মোট ১২ জন সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের জেরা শেষ করেছেন। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া প্রসিশিকউশন পক্ষের অন্য সাক্ষীরা হলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহম্মেদ খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মামা বাহিনীর প্রধান কমান্ডার শহিদুল হক খান মামা, কাদের মোল্লার হাতে ক্ষতিগ্রস্থ এক নারী সাক্ষী (ক্যামেরা ট্রায়াল), কবি কাজী রোজি, শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক ও আইনজীবী খন্দকার আবু তালেবের পুত্র সরকারী কর্মকর্তা খন্দকার আবুল আহসান, সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী সাফিউদ্দিন মোল্লা, আব্দুল মজিদ পালোয়ান, কেরাণীগঞ্জের ঘাটারচর গ্রামের শহীদ নবী হোসেন বুলুর স্ত্রী নূরজাহান বেগম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মোল্লা এবং সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম।
অন্যদিকে কাদের মোল্লা নিজেসহ ৬ জন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন তার পক্ষে। অন্য ৫ সাফাই সাক্ষী হচ্ছেন, সুশীল চন্দ্র ম-ল, মোসলেম উদ্দিন মাস্টার, সাহেরা খাতুন, আলতাফ উদ্দিন মোল্লা ও এআইএম লোকমান। রাষ্ট্রপক্ষ তাদের জেরা সম্পন্ন করেছে।
২৮ মে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, ষড়যন্ত্র ও উস্কানিসহ ছয়টি অভিযোগ এনে কাদের মোল্লার বিরদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-২। ২০ জুন তার বিরুদ্ধে ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উপস্থাপন করেন প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী ও সুলতান মাহমুদ।
মুক্তিযুদ্ধকালে গোলাম মোস্তফা নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলাটি করেছিলেন কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ খান। ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরও একটি মামলা হয় কাদের মোল্লাসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে। ওই মামলার অভিযোগে ২০১০ সালের ১৩ জুলাই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে গত বছরের ১ নবেম্বর জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যা, খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। ২৮ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।এ বছরের ১৬ এপ্রিল আব্দুল কাদের মোল্লার মামলাসহ তিনটি মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.