বুড়িগঙ্গা খনন প্রকল্প চালু রাখতে স্থান পরিবর্তন হচ্ছে

বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পে খননের ধারাবাহিকতা রক্ষার লক্ষ্যে খনন স্থান পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে দরপত্রে অনুমোদিত ১০টি প্যাকেজের মধ্যে দুটির স্থান পরিবর্তন হবে। এ ক্রয় সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উঠছে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় পুংলী নদী খননের লক্ষ্যে ১৫টি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ১০টির। বাকি ৫টি প্যাকেজের এখনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। অনুমোদন না হওয়া ৫টি প্যাকেজের মধ্যে একটির অবস্থান পুংলী নদীর শেষ প্রান্তে। বাকি ৪টি প্যাকেজের অবস্থান প্রকল্পের মাঝে মাঝে। ফলে অনুমোদিত প্যাকেজগুলোর মধ্যে ৪টি গ্যাপের সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে গ্যাপ রেখে খনন করা হলে কারিগরি দিক থেকে গ্রহণযোগ্য হবে না। এছাড়া গ্যাপ রেখে খনন করা হলে পুরো ১৫টি প্যাকেজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পানি প্রবাহিত করা সম্ভব নয়। সে কারণে দুটি প্যাকেজের স্থান পরিবর্তন করা হচ্ছে। সূত্রমতে, টাঙ্গাইলের পুংলী নদীর ৬১ কিলোমিটার খননের জন্য ১৫টি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়। খনন কাজের জন্য ডব্লিউ-১৪ প্যাকেজের স্থান পরিবর্তন করে ডব্লিউ-৪ ও ডব্লিউ-১ প্যাকেজের স্থান পরিবর্তন করে ডব্লিউ-৮ প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হবে। দুটি প্যাকেজে প্রায় ৯ কিলোমিটার নদী খনন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৪৬ কোটি টাকা।
বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে (নতুন ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) ২২৬ কিলোমিটার নৌপথ খনন করে যমুনা থেকে পানি এনে দূষণ-দখলে মৃতপ্রায় বুড়িগঙ্গাকে বাঁচানোর লক্ষ্যে এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৯৪৪ কোটি টাকার বেশি।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, ঢাকা মহানগরের চারপাশে বহমান নদীগুলোতে বিশুদ্ধ পানিপ্রবাহ অব্যাহত রেখে পরিবেশ উন্নত করা, অবৈধ স্থাপনা অপসারণ, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে এনে নৌ চলাচল অব্যাহত রাখা এবং নদীগুলোকে স্ব-প্রশস্ততায় প্রবাহে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
প্রকল্পের আওতায় ৬৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নদী এস্কাভেটর (মাটি খননযন্ত্র) দিয়ে এবং ১৬২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নদী ড্রেজার (নদী খনন যন্ত্র) দিয়ে খনন করা হবে। এ জন্য চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
পানি সম্পদ সচিব শেখ আলতাফ আলীর নেতৃত্বাধীন স্টিয়ারিং কমিটির গত ৩০ অক্টোবরের সভায় বলা হয়, ১০টি দরপত্র প্যাকেজে নদীটির প্রায় ৪১ কিলোমিটার খননের জন্য দেয়া কার্যাদেশ অনুযায়ী খনন করা হলে সামান্য কিছু দৈর্ঘ্যরে মধ্যে মোট চারটি স্থান খননের বাইরে (গ্যাপ) থেকে যাবে। এভাবে করা খনন কাজ টেকসই হবে না। আবার ফাঁকা স্থানগুলোও একই সঙ্গে খননের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাও সময়সাপেক্ষ। এদিকে কাজের উপযুক্ত সময় শুষ্ক মৌসুম এসে গেছে। ওই সভায় আরও বলা হয়, নভেম্বর মাসে কাজ শুরু করা না হলে এ বছর আর কাজ এগুবে না। যে কারণে ফাঁকা স্থানগুলো পূরণ করে ধারাবাহিকভাবে কাজ করার জন্য প্রকল্পে প্যাকেজের স্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
সূত্রমতে, পুংলী নদীর খনন কাজ ১৫টি প্যাকেজের মাধ্যমে করার কথা। কিন্তু দরপত্রের মাধ্যমে যোগ্য প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায় ১০টির জন্য। এখন ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য কাজের স্থান পরিবর্তন করা হচ্ছে। তবে এতে ঠিকাদারদের বাড়তি টাকা দিতে হবে না।
জানা গেছে, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে। তবে এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি খুব বেশি হয়নি। অপরদিকে গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পভুক্ত ঢাকার তুরাগ নদের ২৩ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় সাত কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর টাকা খরচ হয়েছে প্রায় ২১ কোটি। পুংলী নদীর খনন কাজের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
সূত্রমতে, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার রক্ষার খনন স্থান পরিবর্তনের লক্ষ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শেখ আলতাফ আলী গত ৩ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠান।

No comments

Powered by Blogger.