এনজিওর সাফল্যের মূলে মুক্তিযুদ্ধ ও মৌলবাদের সঙ্গী এনজিওরা- স্বদেশ রায়

আমরা এই যে দায়িত্ব নিতে শিখেছি। নিজের দায়িত্ব নিজে নেই। সরকারকে সহযোগিতা করার জন্যে আমরা কাজ করি। আমাদের এই চরিত্র অর্জনের মূলে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের দায়িত্ব নিতে শিখিয়েছে। বিদেশে গেলে তারা অবাক হয়।
তারা আমাদের প্রশ্ন করে, তোমরা এনজিও সেক্টরে এত ভাল করছ কীভাবে? সেখানেও কিন্তু আমাদের একই উত্তর। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শিখিয়েছে। _ঠিক এমনই ছিল কথাগুলো। তীব্র শীতের সন্ধ্যায়, অনাড়ম্বর এক সংবর্ধনা সভায় কথাগুলো বলেছিলেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংবর্ধনা সভাটি ছিল ফজলে হাসান আবেদকে ঘিরে। ফজলে হাসান আবেদের আত্মস্মৃতি যাঁরা পড়েছেন, তাঁকে যাঁরা জানেন সবারই জানা আছে, ফজলে হাসান আবেদের এনজিও সেক্টরে আসা আমাদের মুক্তি সংগ্রামের ভেতর দিয়ে। আর ব্র্যাকের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসসত্মূপের ওপর দাঁড়িয়ে।
ফজলে হাসান আবেদের নাইট প্রাপ্তি উপল েআয়োজিত এই সংবর্ধনা সভায় প্রফেসর রেহমান সোবহান, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সবার বক্তব্যে ফজলে হাসান আবেদ ও এনজিও যেমন সমার্থক হয়ে ওঠে তেমনি স্পষ্ট হয় আমাদের দেশের প্রকৃত এনজিওগুলোর প্রাণশক্তি মুক্তিযুদ্ধ। দায়িত্ব নিয়ে মানুষের জন্যে, সমাজের জন্যে কাজ করার মূলশক্তি এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এর থেকে বিচু্যত হলেই তখনই আমরা শক্তি হারিয়ে ফেলি। যেমন আমাদের সংবিধান দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক ধরে দেশকে, দেশের মানুষকে সত্যিকার গাইডলাইন দিতে পারছে না। এরও মূল কিন্তু ওই মুক্তিযুদ্ধ। মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে যে সংবিধান অর্জন করেছিল, সামরিক শাসকরা বন্দুকের জোরে সে সংবিধানকে বদলে দিয়েছে। এর পরে গত সাড়ে তিন দশকেও দেশের মানুষ ওই সংবিধান পুনরম্নদ্ধার করতে পারেনি। এমনিভাবে আমাদের প্রশাসনসহ সবখানে যে ব্যর্থতা এই ব্যর্থতার মূলেও কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে আসা। কারণ আর যাই হোক দেশ তো শুধু ভূখ- নয়, দেশ মানুষের আকাঙ্ার ও চেতনার প্রকাশ। মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে তার চূড়ানত্ম প্রকাশ ঘটেছিল। এমন প্রকাশ হাজার বছরেও ঘটে না। তাই ওখান থেকে সরে আসার কোন পথ নেই। ওই পথ বেয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের এনজিও সেক্টর যেটুকু এগিয়েছে সেটা ওই পথ বেয়েই। ওই পথ থেকে বিচু্যত হয়ে তার এগিয়ে যাবার কোন পথ নেই।
কিন্তু এ দেশের মানুষ জামায়াত-বিএনপির পাঁচ বছরে দেখেছে এনজিও সেক্টরকে ওই পথ থেকে সরিয়ে নেয়ার এক অবিরাম চেষ্টা। এই চেষ্টা অবশ্য শুরম্ন হয় আরও আগে থেকে। যেমন ২০০১-এর নির্বাচনের আগে নির্বাচন পর্যবেণের নামে এক শ্রেণীর এনজিও দেখা যায়, যারা মূলত মৌলবাদের প েকাজ করে, তারা নির্বাচনে মৌলবাদীদের পরে কর্মী হয়েও কাজ করে। ড. ইউনূস, ফজলে হাসান আবেদ এঁরা এনজিওর প্রাণশক্তি হিসেবে যে মুক্তিযুদ্ধের শক্তির কথা বলছেন, যে চেনতার কথা বলছেন তার সঙ্গে কিন্তু ওই এনজিওদের কোন কাজের মিল দেখা যায় না। এমনকি ২০০১-এর পরে অল্প কয়েকটি এনজিও ছাড়া বাদ-বাকিদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে আপস করতে দেখা যায়। এনজিওদের যে সংগঠনটি আছে সেটা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ কেউ কেউ যেমন বলেন গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব, আবার কেউ কেউ বলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে আপস। ফজলে হাসান আবেদ অবশ্য তাঁর সংবর্ধনা সভায় তাদের দ্বিধাবিভক্ত সংগঠন আবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। তাঁর আহ্বানকে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানান অনেকে। তার থেকে বোঝা যায়, এই সময়টাকে সকলে ঘরে ফেরার সময় মনে করছে। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের কাছে ফেরার সময় মনে করছে। বাসত্মবে আমাদের অন্যান্য সেক্টরের মতো এনজিও সেক্টরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কাছে ফেরা বড় জরম্নরী হয়ে পড়েছে। কারণ জামায়াত-বিএনপির পাঁচ বছরে আমাদের বিচার বিভাগ, শিাপ্রতিষ্ঠান, প্রশাসন সবই যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে প্রতিমুহূর্তে দূরে নিয়ে যাওয়ার জন্যে কাজ করা হয়েছে তেমনি কাজ করা হয়েছে এনজিও সেক্টরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দূরে নিয়ে যাওয়ার। শুধু এখানেই শেষ করেনি তারা, তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, মৌলবাদের প,ে জঙ্গীবাদের প েগড়ে তুলেছে শত শত নয়, হাজার হাজার এনজিও। জামায়াত-বিএনপি আমলে সরকারে এই এনজিও সেক্টরের নিয়ন্ত্রণে বিএনপিও মূল কারিগর ছিল না। এটা ছিল সম্পূর্ণ জামায়াতে ইসলামীর নিয়ন্ত্রণে। তাদের নিয়ন্ত্রণে ওই সময়ে দেশে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার এনজিও। যেগুলোর মূল উদ্দেশ্য দেশকে পেছনে টেনে নিয়ে যাওয়া। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে মুক্তির পথে এ জনগোষ্ঠী এগিয়ে যাওয়ার জন্যে যাত্রা শুরম্ন করেছিল সেখান থেকে তারা পেছনে টেনে ধরে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠা এনজিওর সঙ্গে জামায়াতের চেতনার রয়েছে ভয়ঙ্কর রকম বিরোধ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠা যে কোন এনজিও তাই সে যদি সম্পূর্ণ আর্থিকভাবে স্বচ্ছও না হয়, তারপরেও দেখা যায় সে নারী মতায়নে, আধুনিক শিা বিসত্মারে কাজ করছে। বাংলাদেশ কেন, পৃথিবীর যে কোন পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে জেগে উঠতে হলে, এগিয়ে যেতে হলে তার নারীর মতায়ন প্রয়োজন সব থেকে আগে। যে কোন সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীী নারী। এই নারীর মতায়ন ছাড়া, নারীকে সব কাজ করার জন্যে যোগ্য করে তোলা_সর্বোপরি নারী যেসব কাজ করতে পারে এই আত্মবিশ্বাস তার জাগিয়ে তোলা ছাড়া একটি সমাজ মুক্তি পেতে পারে না। মুক্ত সমাজ ছাড়া ওই সমাজ কোনমতে এগিয়ে যেতে পারে না। দেশের সমগ্র নারী সমাজকে মুক্ত না করে অর্থনীতি হয়তো অনেক দূর এগিয়ে নেয়া যায়, কিন্তু সে এগিয়ে নেয়াকে প্রকাশ করতে গেলে রবীন্দ্রনাথের প্রকাশ থেকে ধার নিয়ে বলতে হয়, ট্রেনের কামরায় আলো জ্বেলে অন্ধকার দেশের ভিতর দিয়ে এগিয়ে যাওয়া। এ মুহূর্তে আমাদের প্রতিবেশী দুটি দেশ ভারত ও চীন এগিয়ে যাচ্ছে। এদের জিডিপিও অনেকটা কাছাকাছি। তারপরেও চীন এগুচ্ছে সারাদেশে আলো জ্বেলে আর ভারত এগুচ্ছে অনেক ট্রেনের কামরায় আলো জ্বেলে অন্ধকার দেশের ভেতর দিয়ে। ভারতের একটি বড় বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ইনফোসিস সে দেশের হতভাগ্য বা পিছিয়ে-পড়াদের জন্যে অনেক কাজ করে। সুধা মূর্তি পত্রপত্রিকায় তার কাজকে ঘিরে নানান ঘটনা নিয়ে কলাম লেখেন। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবুল কালামের মতো ঋষিতুল্য মানুষও সুধা মূর্তির ভক্ত। সুধা মূর্তির ওই সব লেখা প্রমাণ করে ভারতে কী বিপুলসংখ্যক নারী কত পিছে পড়ে আছে। আর এই নারী পিছে পড়ে আছে বলেই ষাট বছর পার হয়ে গেলেও এখন ভারত পরিপূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছে না। বিপুল এক দরিদ্র ও অশিার ভারে ভারাক্রানত্ম জনগোষ্ঠী নিয়ে তাকে চলতে হচ্ছে। বাংলাদেশেও গত আটত্রিশ বছরে যে নারী উন্নয়ন, সব েেত্র যেভাবে নারীদের এগিয়ে আসার কথা ছিল সেটা ঘটেনি। অথচ বাংলাদেশ যেমন এই উপমহাদেশের ভেতর সব থেকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নিতে পেরেছিল তেমনি নারী উন্নয়ন ও আধুনিকতার পথে এগিয়ে যাওয়া এখানেই সব থেকে সহজ ছিল। বাংলাদেশের শুরম্ন সেভাবেই হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরে যে এনজিওগুলোর শুরম্ন হয় তারাও নারীমুক্তি বা সব েেত্র আত্মবিশ্বাসী হয়ে নারীকে এগিয়ে আসার পথে সহায়ক হয়। স্বাধীনতার পরে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে জামায়াতে ইসলামীর মতো মৌলবাদী সংগঠনগুলো এনজিওদের এই নারীকে এগিয়ে নেয়ার কাজে বাধা দিতে থাকে পদে পদে। তারা ধর্মের নামে, ধমর্ীয় কুসংস্কার ব্যবহার করে এ কাজে বাধা দিতে থাকে। এরপরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় যখন এই দলগুলো আরও শক্তি সঞ্চয় করে তখন তারা হামলা করতে থাকে বিভিন্ন স্থানে এসব এনজিও অফিসে বা নানান স্থাপনায়। তাদের এ হামলার মুখে বিভিন্ন স্থানে দেশের প্রগতিশীল মানুষ, প্রগতিশীল সংগঠনের কর্মীরা গিয়ে ওই সব এনজিওর পাশে দাঁড়ায়। অথচ আশ্চর্যভাবে ল্য করা গেল, এই এনজিওদের একটি বড় অংশ ২০০১-এর নির্বাচনের আগে মৌলবাদীদের সঙ্গে হাত মেলায়। ১৯৯৬-এ তারা মৌলবাদবিরোধী গণতন্ত্রের প েযেভাবে অবস্থান নিয়েছিল সেখান থেকে সরে যায়। আর যারা নির্বাচন পর্যবেণে অংশ গ্রহণ করে তাদের দুই একটি সংস্থা ছাড়া সকলে মৌলবাদের প েঅবস্থান নেয়। তখন তারা কী বুঝে এ অবস্থান নিয়েছিল_ আর কোন লাভের আশায় ২০০১-এর নির্বাচনের পরে তারা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে সে হিসেব তারা হয়তো আজ না হোক আগামীতে করবে। কিন্তু তাদের এই সমর্থন পাওয়ার ফলে জামায়াতে ইসলামী নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে সরকারের এনজিও পর্যবেণের। সেখানে ওই এনজিওদের তখন আর এতটুকুও জোর ছিল না যে, তারা বিএনপিকে বলবে, তোমাদের ভেতর যিনি উদার বা আধুনিক আছেন তার হাতে এর নিয়ন্ত্রণ দাও। তার বদলে সেদিন মুক্তিযুদ্ধের বিপরে সদস্য বদর বাহিনীর কমান্ডার আলী আহসান মুজাহিদের হাতেই পড়ে দেশের এনজিও সেক্টরের দেখভালের ভার। মুজাহিদ এখানে যথেষ্ট সফল হয়। তারা পাঁচ বছরে শুধু এ এনজিওগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে না, নিজেদের জঙ্গী সমর্থক হাজার হাজার ছোট এনজিও গড়ে তোলে। এখানেই শেষ নয়, ২০০৬-এ এসে নির্বাচনের আগে দেখা গেল নির্বাচন পর্যবেকের নামে এনজিওদের বড় একটি জোট তারা তৈরি করেছে_যারা জামায়াত- বিএনপির নির্বাচনী কারচুপির সহযোগী হিসেবে কাজ করতে সব কিছু করছে। মানুষ তাদেরকে প্রতিরোধ করতে চাচ্ছে। অর্থাৎ যে বেসকারী প্রতিষ্ঠানের কাজ মানুষের হয়ে কাজ করা তারা তখন মানুষের প্রতিরোধের মুখে পড়তে যাচ্ছে। যে কারণে মুক্তিযুদ্ধের পরে রাজনৈতিক দলগুলোকে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হয় ওই সব এনজিওর বিপ।ে এর থেকে স্পষ্ট হয়, জামায়াত-বিএনপির পাঁচ বছরে এনজিওর নামে অনেক আগাছা এ দেশে জন্মে যায়। এ গুলো দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যে নয়।
বিভিন্ন গণমাধ্যম ও নানা সূত্রের খবর থেকে এটা জানা যাচ্ছে, সরকার এখন এনজিও সেক্টরের এই আগাছা দূর করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জামায়াত-বিএনপি আমলে জমে ওঠা এমন কয়েক হাজার এনজিওর রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সিদ্ধানত্ম নেবার প্রস্তুতি নিয়েছে। সরকারের এই প্রস্তুতির বা কাজের অনেক বড় সহায়ক শক্তি হলো ড. ইউনূস, ফজলে হাসান আবেদের এই অবস্থান। আসলে এনজিও যদি মনে করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রকৃত নারী মতায়ন এনজিওর প্রাণশক্তি তাহলেই কিন্তু অনেক আগাছা সহজে ঝরে যায়। তেমনি ফজলে হাসান আবেদ যে আহ্বান জানিয়েছেন এনজিও সংগঠন এক করার, সেখানে যদি মূল ভিত্তি হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তাহলেও কিন্তু মৌলবাদের কারণে এনজিওর নামে ও এনজিওর চেতনায় যে আগছা জন্মেছে সেগুলো সহজে ঝরে যায়। তবে যত সহজে এই কথাগুলো বলা হচ্ছে বাসত্মবে বিষয় কি অতটা সহজ? অতীতের অভিজ্ঞতা কিন্তু বলে না বিষয়টি অতটা সহজ! কারণ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ অবধি মুক্তিযুদ্ধের পরে শক্তি মতায় থাকা অবস্থাতেই কিন্তু এনজিও সেক্টরে অনেক বড় পরিবর্তন দেখা যায়। দেখা যায় একটি বা দুটি বড় এনজিও ছাড়া বাদবাকি অনেকেই প্রত্য বা পরোভাবে সেদিন মৌলবাদী জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহয়োগী বিএনপি শুধু নয়, ইসলামী ঐক্যজোটের মতো কট্টর মৌলবাদী, নারী মতায়ন বিরোধী ফতোয়াবাজদের প নিয়েছে। কোন অদৃশ্য কারণে তারা সেদিন এ কাজ করেছিল সেটা খতিয়ে দেখা এখনও হয়নি। এ সরকারও পারবে না এটা খতিয়ে দেখতে। তবে এ দেশের রাজনীতি পর্যবেণের সাধারণ অভিজ্ঞতা বলবে, পাকিসত্মানী সামরিক শাসনের ধারাবাহিকতা এখানে সরকারের ভেতর আরেক সরকার থাকার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। তা যদি না থাকে তাহলে আওয়ামী লীগ আমলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠা এনজিও গণসাহায্য সংস্থা ধ্বংস হয়ে যায় কীভাবে? কেন এখন গণ সাহায্য সংস্থার মত আরেকটি এনজিও হাবুডুবু খাচ্ছে? আওয়ামী লীগ আমলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠা একটি এনজিও গণসাহায্য সংস্থা ধ্বংস হয়ে যাবার কোন কারণ যেমন এখনও এদেশে পাওয়া যায় না তেমনি পাওয়া যায় না কেন এখনও এই সরকারের আমলে ছাত্রলীগের নামে সহিংসতা ঘটে। আওয়ামী লীগ আমলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠা সংগঠন ধ্বংস হওয়া, ছাত্রলীগের মতো সংগঠনের ইমেজ নষ্ট হওয়া এগুলো নতুন কোন ঘটনা নয়। ১৯৭৫-এর পনেরো আগস্টের পর থেকে সামরিক শাসকের আমলের জটিল খেলাধুলা ল্য করলে এর কারণ অনেক সহজে বোঝা যায়। আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যবহার করে যেমন আওয়ামী লীগকে ভাঙ্গা হতো, কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের ব্যবহার করে যেমন কমিউনিস্ট পার্টি ভাঙ্গা হতো এও তেমনি। এবং এসব কাজের ভিতর দিয়ে দেখা যেত শেষ পর্যনত্ম লাভবান হতো স্বাধীনতাবিরোধী ও সামরিক শাসকের পরে শক্তিগুলো।
ছাত্রলীগে ছাত্রলীগে যখন সংহিসতা হচ্ছিল তখনও এই কলামে লিখেছি ওই বীর পুঙ্গবদের মূল শক্তি কোথায়? তারা কাদেরকে শক্তিশালী করার জন্যে এ কাজ করছে? এগুলো খুঁজে দেখা দরকার। খুঁজলে দেখা যাবে ওরা নতুন মুখ। কোথা থেকে যেন উদয় হয়েছে। তেমনি মুক্তিযুদ্ধের পরে সংগঠনগুলো যখন ভাঙ্গে সেখানে দেখা যায় নতুন মুখ উদয় হয়। এই সব নতুন মুখের শিকড়ে হাত দিলে দেখা যাবে, এদের শিকড় একটি বিশেষ জায়গায়। সরকারের ভেতরে বসে থাকলেও সরকার এই জায়গাটি চিনতে পারে না। তাই সরকার যে কেবল ভুয়া এনজিও, মৌলবাদী এনজিও চিহ্নিত করে তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে এনজিও সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবে, পারবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শক্তিশালী করতে_ সে আশা করা ভুল।
এখানে ওই যে এনজিওকর্মী ও নেতারা শীতের সন্ধ্যায় ফজলে হাসান আবেদের বক্তব্যকে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন তাঁদের ভূমিকা অনেক বেশি। তাঁদের বিশ্বাসের অনেক গভীরে নিতে হবে এই সত্য যে, তারা তখনই সফল হবে যখন কেবল মুক্তিযুদ্ধের বিশ্বাসে ভর করতে পারবে। মুক্তিযুদ্ধের বিশ্বাসে ভর করা ছাড়া কখনই নারী মতায়ন সম্ভব নয়। আর যে কোন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার মূল ল্য তো সামাজিক মুক্তি। রাষ্ট্র অনেক সময় সমাজের অনেক রন্ধ্রে হাত দিতে পারে না। তাদের হাত অতটা সূক্ষ্মভাবে সেখানে পেঁৗছে না। তাই রাষ্ট্রের সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা, সামাজিক সংস্থা সব দেশে উন্নয়নের পথে চলে। বাংলাদেশের মতো দেশে এই পথ চলার সব থেকে বড় শক্তি নারীকে উন্নয়নের কাজে যোগ্য করে তোলা। মূল চালিকাশক্তি করে তোলা। আর এই নারীকে আধুনিক চালিকাশক্তি করা মানেই কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী হওয়া। কিন্তু এর বিপরীতে জামায়াত-বিএনপির পাঁচ বছরে দেখা গেছে, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার নামে নারীকে দিয়ে নারীকে আরও বেশি বন্দী করার এক চেষ্টা। ধর্মের নামে, মিথ্যে কালচারের নামে সেখানে নারীকে বন্দিত্বের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। জামায়াত-বিএনপির পাঁচ বছরে বাংলাদেশে নারীকে মানসিকভাবে বন্দী করার জন্যে অনেক কাজ করা হয়েছে। গ্রামে-গ্রামে, শহরে, মহলস্নায়-মহলস্নায় এর শক্ত পায়ের ছাপ গেঁথে গেছে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হলে, বাংলাদেশের বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার সুনাম ফিরিয়ে আনতে হলে এখনই সজাগ হবার সময়। মনে করার কোন কারণ নেই, সরকার থেকে মৌলবাদ চলে গেছে বলে খুব সহজে এখন মুক্তভাবে কাজ করা যাবে। কারণ এখনও নাগিনীরা নানা েেত্র বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলছে। নানাভাবে তিগ্রসত্ম হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অবশ্য এ নিয়ে হতাশ হবার কিছু নেই। কারণ মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ যখন সৃষ্টি হয়েছে তখন এর বিপরীতে গিয়ে কোন কিছুই শেষ বিচারে টিকবে না। দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছর পরে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের যখন ফাঁসির রজ্জু গলায় নিতে হচ্ছে তখন এ বাংলাদেশে এটা সত্য যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরম্নদ্ধে গিয়ে এখানে শেষ বিচারে কেউ টিকবে না। তাই বেসরকারী উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়নের মূল শক্তি বা প্রাণশক্তি মুক্তিযুদ্ধ। তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। সেখানেই সকলকে এক হতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা নেই।
ংধিফবংযৎড়ু@মসধরষ.পড়স

No comments

Powered by Blogger.