একটি অধ্যায়ের অবসান

এ বছর ১ জানুয়ারি রাজনীতিতে জ্যোতি বসুর ৭০ বছর পূর্ণ হতো। কিন্তু ঐ দিনই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হলেন_ আর ফিরলেন না। জ্যোতি বসুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সোমবার সরকারী ছুটি ঘোষণা করেছে।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার রাজ্যে ৩ দিনের শোক ঘোষণা করেছেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট সোনিয়া গান্ধীসহ দলমত নির্বিশেষে ভারতীয় নেতৃবৃন্দ জ্যোতি বসুর মৃতু্যতে গভীর শোক জানিয়েছেন। ভারতের রাজনীতিতে সুদীর্ঘকাল যাঁরা সক্রিয় ছিলেন জ্যোতি বসু তাঁদের অন্যতম। ভূমি সংস্কার আন্দোলন, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন ও ভারতের সমৃদ্ধ গণতন্ত্রে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। জ্যোতি বসুর মৃতু্যতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি অধ্যায় শেষ হয়ে গেল। দীর্ঘ ২৩ বছর তিনি একটানা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, যা গণতান্ত্রিক বিশ্বে এক বিরল ঘটনা। তাঁর মৃতু্যতে সিপিএম রাজনীতিতে সুরজিৎ-বসু অধ্যায়ের শেষ হলো। সিপিএমের প্রথম পলিটবু্যরো সদস্য হিসেবে কার্যত জ্যোতি বসুই ছিলেন জীবিত শেষ সদস্য।
২০০৯ সালের জুলাইয়ে ৯৫তম জন্মদিনে জ্যোতি বসুকে শেষবার জনসমৰে দেখা যায়। এরপর তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিলেও তাঁর দল সিপিএমের কর্মকা-ের তিনিই ছিলেন মধ্যমণি।
সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি জ্যোতি বসুর আদর্শ, ঐতিহ্য ও অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন, জ্যোতি বসুর মৃতু্যতে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটল। চিদম্বরম বলেছেন, বহু দশক ধরে তিনি ভারতের রাজনীতিতে দাপটের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ছিলেন এক মহান দেশপ্রেমিক, মহান গণতন্ত্রী, মহান সাংসদ এবং প্রেরণার এক অননত্ম উৎস। তাঁর সমসত্ম যোগ্যতা ও দৰতা দিয়ে তিনি ভারতের জনগণের সেবা করে গেছেন। প্রণব মুখাজর্ী বলেছেন, জ্যোতি বসুর ছিল বিশাল ব্যক্তিত্ব। প্রথম ইউপিএ সরকারের তিনিই ছিলেন স্থপতি। এসএম কৃষ্ণা বলেছেন, বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের জন্য জ্যোতি বসু ছিলেন এক অকুতোভয় যোদ্ধা। সোমনাথ চ্যাটাজর্ী বলেছেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি দ্বিতীয়বার আমার বাবাকে হারালাম। দীর্ঘকাল তিনি পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম দুর্গ আগলে রেখেছেন। বিজেপি নেতা এলকে আদভানি বলেছেন, জ্যোতি বসু ছিলেন এক বিশাল মানুষ, মহান নেতা। তিনি ইএমএস নাম্বুদ্রিপাদ বুরিদিপাদ, ভূপেস গুপ্ত ও ইন্দ্রজিৎ গুপ্তের মতো উঁচু মানের নেতা ছিলেন। আমাদের আদর্শের ভিন্নতা ছিল। কিন্তু তাঁর বিশালত্বের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। শীলা দীৰিত বলেছেন, একটা অধ্যায় যেন শেষ হয়ে গেল। তিনি ছিলেন খুবই মর্যাদাসম্পন্ন নেতা। তিনি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছেন। কিন্তু কোনদিনই তাঁকে নিয়ে কোন বিতর্ক ওঠেনি। মমতা ব্যানাজর্ী বলেছেন, দেশে তিনি ছিলেন এক বিশাল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বামফ্রন্ট সরকার ও বাম রাজনীতির তিনি ছিলেন প্রথম ও শেষ অধ্যায়। কে করম্নণানিধি বলেছেন, আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু জ্যোতি বসুর মৃতু্যতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের তিনি ছিলেন অন্যতম পুরোধা। তিনি যা সঠিক মনে করতেন তা বলতে কখনও দ্বিধা করতেন না। রাম বিলাস পাসওয়ান বলেছেন, আমরা এক মহান নেতাকে হারালাম। তাঁর ছিল 'নিয়ত' ও 'নীতি'। অরম্নণ জেটলি বলেছেন সমসাময়িক নেতৃবৃন্দের মধ্যে অন্যতম বিশাল ব্যক্তিত্ব জ্যোতি বসু তাঁর আদর্শের প্রতি আমৃতু্য ছিলেন অবিচল। ভারতীয় রাজনৈতিক জীবনে তাঁর ছিল অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী ইনিংস। সুষমা স্বরাজ বলেছেন, তিনি ছিলেন বিশাল অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক নেতা। ভারতের মানুষ তাঁকে এত বেশি শ্রদ্ধা করত, ভালবাসত যে, মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পরও তাঁর জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। সূত্র : এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

No comments

Powered by Blogger.