নোয়াখালীর জনসভায় সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর-আরেকবার আ. লীগকে ভোট দিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের মডেল। ২০০১ সালে বিএনপি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসে দেশকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আর দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য বানিয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে গত চার বছরে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি।
জনমনে শান্তি ও স্বস্তি এনে দিয়েছি।' দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে আরেকবার আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কথা দিয়ে গেলাম আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।
নোয়াখালী জেলা শহরের মাইজদী হাউজিং মাঠে গতকাল মঙ্গলবার এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি বলেন, খালি খালি নয়, এখন থেকে নোয়াখালীবাসীকে ভরা ভরা বলব। ইনশাআল্লাহ নোয়াখালীতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে। শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। হাজার হাজার মানুষের চাকরির ব্যবস্থা হবে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে নোয়াখালীতে বাস্তবায়িত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। বিগত জাতীয় নির্বাচনে নোয়াখালী থেকে দুজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত করায় জেলাবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষ শান্তিতে থাকে। আমরা খাদ্যের নিরাপত্তা দিয়েছি, সামাজিক নিরাপত্তা দিয়েছি। বর্তমানে দেশে ৪০ হাজার টন চাল মজুত আছে।
বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর ছেলে দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ে ডিগ্রি এনেছে। তিনি তাঁর ছেলেদের বিদেশে লেখাপড়া শিখিয়ে এই ডিগ্রি এনেছেন। আমরা শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দিয়েছি। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করেছি। বিনা পয়সায় শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়েছি। এখন ৯০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পাস করে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আর দরিদ্র থাকব না। আমরা ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। দেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত করে মর্যাদার আসনে বসাতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসে সীমাহীন নির্যাতন করেছে। নোয়াখালীতে তাদের নির্যাতন থেকে কেউ রেহাই পায়নি। সুবর্ণচর ও হাতিয়াসহ পুরো নোয়াখালীতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী তাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কেন নৌকায় ভোট দিল এ জন্য হাতিয়ায় একজন পঙ্গু মানুষের হাত-পা কেটে দেওয়া হয়েছিল। তারা ক্ষমতায় এসে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ক্ষমতায় থাকাকালে চালের দাম ১০ টাকা রেখে গিয়েছিলাম। তারা ক্ষমতায় এসে তা ৩৮ টাকায় নিয়ে যায়। বর্তমানে আমরা চাল ২৫ থেকে ২৮ টাকায় নিয়ে এসেছি। সার ও বীজের দাম কৃষকের নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। ১০ টাকায় কৃষকের ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করেছি। কারণ কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই আমরা কৃষিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে অনেক পাটকল বন্ধ করে লাখ লাখ শ্রমিককে বেকার করে দেয়। আমরা ক্ষমতায় আসার পর নতুন নতুন পাটকল চালু করেছি। মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছি। বিশ্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে সেট করে নিয়েছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষের জন্য কাজ করে। তিনি বলেন, '৭৪ সালে জাতির পিতা পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করেছেন। আমরা এবার এসে এক লাখ ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমা জয় করেছি। অর্থনীতিকে মজবুত করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নৌকায় ভোট দিয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলা পেয়েছি। নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। নৌকায় ভোট দিয়ে দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। মানুষ নৌকায় ভোট দিলে সুখে-শান্তিতে থাকবে। আর ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি মানিলন্ডারিংসহ টাকা-পয়সা লুটপাটের ব্যবস্থা করেছিল।
নোয়াখালীবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের যে ভালোবাসা পেয়েছি তা কখনোই ভোলার নয়। মা-বাবাকে হারিয়ে দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে আপনাদের যে জোরালো সমর্থন দেখেছি, তা আমাকে অভিভূত করেছে। যত বাধাই আসুক, আমরা তাদের বিচার সম্পন্ন করব ইনশাআল্লাহ। সবশেষে তিনি বলেন, 'রিক্ত আমি, নিঃস্ব আমি দেবার কিছু নেই, আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই।'
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম সেলিমের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. আ ফ ম রুহুল হক, রেলমন্ত্রী মজিবুল হক মুজিব, পানিসম্পদমন্ত্রী সতীশ চন্দ্র রায়, মহিলাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী, ফরিদুন্নাহার লাইলী এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, জেলা প্রশাসক ড. মো. জাফর উল্যা, চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র মামুনুর রশিদ কিরন, শিহাব উদ্দিন শাহীন, ওমর ফারুক, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকি নাজমুল আলম প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে দুপুর ১২টায় হেলিকপ্টারযোগে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে নেমে উপজেলার শাহজাদপুরে সুন্দলপুর গ্যাসফিল্ডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সেখান থেকে মোটর শোভাযাত্রাসহকারে নোয়াখালী জেলা শহর সার্কিট হাউসে আসেন। পরে তিনি কবিরহাট উপজেলা পরিষদ ভবন, সোনাইমুড়ী উপজেলা পরিষদ ভবন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ তলা একাডেমিক ভবন ও মুছাপুর রেগুলেটরির উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি সদর উপজেলা ভবন ও নোয়াখালী পৌরসভা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং সোনাইমুড়ী ফায়ার সার্ভিস ও চাটখিল ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স উদ্বোধন করেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে গতকাল নোয়াখালীতে ছিল উৎসবের আমেজ। সকাল থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে জনসভাস্থলে মিছিল আসতে থাকে। দুপুর ১২টার মধ্যেই জনসভাস্থল কানায় কানায় ভরে যায়। জেলা শহরের প্রধান সড়কও ছিল লোকারণ্য।

No comments

Powered by Blogger.