নোয়াখালীতে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী- কথা দিচ্ছি, আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। কোনো ধরনের বাধাবিঘ্ন ছাড়া মানুষ তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নোয়াখালীর মাইজদী হাউজিং এস্টেট মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এ প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভার নির্বাচন এবং উপনির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।’
প্রধানমন্ত্রী জনগণকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা ভোটের মালিক, নির্বাচনে যাঁকে খুশি ভোট দেবেন। ভোট শান্তিপূর্ণ হবে। কেউ ভোট কেড়ে নেবে, সিল মারবে; ওই অবস্থা আর হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী আগের মেয়াদে দেশে শিক্ষার হার বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা এবার ক্ষমতায় এসে দেখলাম, সাক্ষরতার হার ৫০ ভাগে নেমে এসেছে। আসলে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া চান না, আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করুক। বিএনপির নেত্রী দুই ছেলেকে পড়ালেখা শেখানোর জন্য সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। কী ডিগ্রি এনেছেন, আপনারা জিজ্ঞেস করেন—মানি লন্ডারিংয়ের ডিগ্রি? দুর্নীতির ডিগ্রি? উনি এই ডিগ্রি এনে দিয়েছেন ছেলেদের।’
শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘উনার কষ্টটা আমরা বুঝি। উনি ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উর্দু, অঙ্ক আর বাংলা—কেবল এই তিন বিষয়ে পাস করেছেন। ম্যাট্রিকে নিজে ফেল করে উনি বোধ হয় চিন্তা করেন, আমি যেহেতু পাস করিনি, বাংলার ছেলেমেয়েরা কীভাবে পাস করবে? সে জন্যই ছেলেমেয়েরা পাস করুক, উনি চান না।’
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনামের জনসভায় সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরী, দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একাত্তরে যারা মানুষ হত্যা করেছে, নারী ধর্ষণ, লুটতরাজ, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, তাদের বিচার শুরু হয়েছে। আজ জনসভায় আপনারা হাত তুলে সেই বিচারের প্রতি যে সমর্থন দিয়েছেন, সে জন্য ধন্যবাদ।’
আগামী নির্বাচনে ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবকিছুই করে দেব। আপনাদের কাছে আমার একটাই আবেদন, আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আরেকবার আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।’
জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নোয়াখালীতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমি জেলা প্রশাসককে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জায়গা ঠিক করার নির্দেশ দিয়েছি। নোয়াখালীর জলাবদ্ধতাসহ সব সমস্যা আমরা পর্যায়ক্রমে সমাধান করব।’
জনসভা করার আগে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী জেলার কোম্পানীগঞ্জের সিরাজপুর ইউনিয়নের সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রের গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রের গ্যাস নোয়াখালী অঞ্চলে শিল্প-কারখানার উন্নয়নে এবং সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য অগ্রাধিকার পাবে।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের নতুন ভবন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ তলা ভবন, কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুরে ক্লোজার নির্মাণকাজ, কবিরহাট ও সোনাইমুড়ী উপজেলা পরিষদ ভবন, চৌমুহনীতে চার লেন সড়কে উন্নীতকরণসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজের উদ্বোধন ও ভিস্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

No comments

Powered by Blogger.