গ্যাস সঙ্কট

বিদু্যত ও পানি সঙ্কটে গত এক দশক ধরে জনজীবন চরম দুর্ভোগের মধ্যে কাটছে। সম্প্রতি এই দুর্ভোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্যাস সঙ্কট_ শীতকালে তা বৃদ্ধি পেয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
রাজধানীর কিছু এলাকাসহ আশপাশের নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, সাভার, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জ প্রভৃতি স্থানে গ্যাসের চুলা জ্বলছে টিমটিম করে। নারায়ণগঞ্জে দিনের বেলা চুলা জ্বলেই না, গ্যাস সরবরাহ শুরম্ন হয় রাত ন'টার পর। এতে রান্না শেষ হয় মাঝরাতে। চট্টগ্রাম নগরীর অবস্থাও নাজুক। স্বাভাবিক হারে গ্যাস পাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে মিটিং-মিছিল-সড়ক অবরোধের মতো ঘটনাও লৰ্য করা গেছে। সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে এ সপ্তাহ থেকে গ্যাস রেশনিং শুরম্ন করার কথা_ সেটাও যে কতটুকু কার্যকর ও ফলপ্রসূ হবে তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। জ্বালানি হিসেবে গ্যাস মানুষের জীবনে অপরিহার্য হওয়ায় তার সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হলে জনজীবন থমকে যাবে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্যাসের বিদ্যমান সঙ্কট নিরসনে শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য এলাকাভিত্তিক পৃথক ছুটির দিন নির্ধারণসহ (হলিডে স্ট্যাগারিং) গ্যাস রেশনিংয়ের সরকারী উদ্যোগ এ সপ্তাহ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। তাতেও যে গ্যাস সঙ্কটের সমাধান হবে তা জোর দিয়ে বলা যায় না। গত ১১ জানুয়ারি বিদু্যত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে এক সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানির পৰ থেকে পেট্রোবাংলার কাছে রেশনিংয়ের প্রসত্মাব পাঠালে পেট্রোবাংলা গ্যাস ব্যবহারকারী শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে। তারা রেশনিংয়ের প্রসত্মাবে রাজি হন। দেশে বর্তমানে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা প্রায় ২৩০ কোটি ঘনফুট, অর্থাৎ উৎপাদন হচ্ছে ১৯০ কোটি ঘনফুটের মতো। অর্থাৎ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় ৪০ কোটি ঘনফুটের মতো। শীতের সময় ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে এবং পাইপলাইনে গ্যাসের সঙ্গে থাকা তরল জ্বালানি জমে সরবরাহ সঙ্কট প্রকট হয়ে ওঠে। ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় গ্যাস সঙ্কট এখন প্রাত্যহিক বিড়ম্বনায় ফেলছে নগরবাসীকে তাদের গৃহস্থালি কাজে। কেরোসিনের চুলা, মাটির চুলা এবং কাঠ জ্বালিয়ে নগরবাসীর অনেককে রান্না করতে হচ্ছে। বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে কয়েকটি সিএনজি ফিলিং স্টেশন। শিল্পকারখানার উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। একই চিত্র চট্টগ্রামে। এখানে হলিডে স্ট্যাগারিং সিস্টেমে গ্যাস সরবরাহে ব্যবসায়ীরা সাড়া দিচ্ছে না। ফলে গৃহস্থালি জীবনে সঙ্কট দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
সবকিছু পর্যবেৰণের পর বিশেষজ্ঞরা মনত্মব্য করেছেন, গ্যাস সমস্যার সমাধানের একমাত্র উপায় উৎপাদন বৃদ্ধি করা। কিন্তু সেদিকে কোন কার্যকর পদৰেপ নেই বিধায় সঙ্কট বেড়েই চলেছে। গ্রাহকরা আগামী বছরেও যে এই সঙ্কট থেকে রেহাই পাবে তার কোন আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। সঙ্কট নিরসনে সরকার যদি দ্রম্নত পদৰেপ না নেয় তাহলে জনজীবন, শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নেমে আসবে বড় ধরনের বিপর্যয়।

No comments

Powered by Blogger.