পিঙ্কি বান্ধবী ঝরণাকে দাদির হাতের আচার খাওয়াতে চেয়েছিল- দায়ীদের শাসত্মি দাবি করেছে পরিবার

ফজলে নোমানী স্কুল খুললেই পিঙ্কি তার সহপাঠী এবং প্রিয় বান্ধবী ঝরনাকে দাদির হাতের বানানো আচার খাওয়াবে বলে রেখেছিল। ঝরনা জানায়, তার উপস্থিতিতেই একদিন মুরাদের ডাকে সাড়া না দেয়ায় স্কুল থেকে ফেরার পথে মুরাদ তার গায়ে পানি ছুড়ে মারে।
পিঙ্কিদের এলাকাতেই তাদের বাড়ির পাশের গলিতে কথা হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রীর সঙ্গে। মুরাদ তাকেও প্রেমের প্রসত্মাব দেয়া থেকে শুরম্ন করে রাসত্মায় বেরম্নলেই অশস্নীল মনত্মব্য করায় তার বাবা-চাচারা মিলে মুরাদকে একদিন ডেকে শাঁসিয়ে দেয় বলে জানা গেছে। শ্যামলী ২ নং রোডে একটি ছাপড়া ঘরে স্বপরিবারে বসবাসকারী বখাটে এবং মাদকাসক্ত যুবক মুরাদকে গ্রেফতার করে পুলিশী রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিন দিনের পুলিশী রিমান্ডে পিঙ্কিকে থাপ্পড় মারার কথা সে নিজেই স্বীকার করেছে। আজ বৃহস্পতিবার তার তিনদিনের রিমান্ড শেষে তাকে পুনরায় আদালতে উপস্থিত করা হবে।
এদিকে বুধবার ঢাকা ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে পিঙ্কির পরিবার শ্যামলী আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী পিঙ্কির আত্মহননের জন্য দায়ীদের বিরম্নদ্ধে দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মির দাবি করেছে। পিঙ্কির পরিবার কৌশলে মুরাদের সঙ্গে তার পলাতক থাকাকালীন সময়ে মোবাইলে আলাপ করে মামলার জন্য গুরম্নত্বপূর্ণ কিছু আলামত উদ্ধার করেছে, যা সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপন করা হয়।
এক সময় মুরাদের কারণে প্রায় গৃহবন্দী জীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছিল পিঙ্কি। ঘর থেকে বের হওয়াই এক রকম বন্ধ করে দিয়েছিল। পিঙ্কিকে দিনের পর দিন উত্ত্যক্ত করায় মুরাদকে ডেকে এনে গালমন্দ করার পরও সে নিবৃত্ত হয়নি। ২০ জানুয়ারি স্কুল খুললে পিঙ্কিকে আবার ঐ বখাটে বিরক্ত করতে পারে চিনত্মা করে পিঙ্কির দাদি ছোটবেলায় মা-মরা এই মেয়েটির নিরাপত্তার কথা ভেবে এ বাড়ি ছেড়ে দেয়ারও স্থির নিয়েছিলেন বলে পিঙ্কির চাচাত বোন ইডেন কলেজ অনার্স ৪র্থ বর্ষে অধ্যয়নরতা ছাত্রী লাবনী জানিয়েছে। কিন্তুু তার স্কুল খোলার একদিন আগেই ১৯ তারিখ পাশের ফার্মেসিতে যাবার পথে রাসত্মায় একা পেয়ে অশালীন মনত্মব্য ছুড়ে দেয়া থেকে শুরম্ন করে ওড়না ধরে টান দেয়া এবং সবশেষে চড় মারার অপমান আর সহ্য করতে না পারায় সে বেছে নেয় আত্মহননের পথ। ১৯ জানুয়ারি দুপুরে শেরেবাংলা নগর থানাধীন শ্যামলী ২ নং রোডের ১৫২/ক/সি (চাকলাদার ভিলা)'র বাসার দোতলাতে পিঙ্কিকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলনত্ম অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে মুরাদ অপমান করাতেই সে সকলের মান সম্মানের কথা চিনত্মা করে আত্মহত্যা করেছে এবং এ জন্য তার পরিবারের কেউ দায়ী নয় বলে একটি চিরকুটও লিখে রেখে যায়।
চারম্নকলার ছাত্রী সিমি, রিমি, তৃষা, ইন্দ্রানী, মহিমাসহ আরও নাম না জানা অনেকে আগেই যে এই পথের পথিক হতে বাধ্য হয়েছে, পিঙ্কিকেও সেই পথেই যেতে হলো। এদের মধ্যে এক জায়গাতেই মিল এবং দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এরা সকলেই ইভটিজিংয়ের স্বীকার হয়ে আত্মাহুতি দিয়েছে। এরা সকলেই অভিমানে অকালে ঝরে যাওয়া ফুলের কলি। এসব হতভাগ্যদের মৃতু্যর জন্য অভিযুক্তদের অধিকাংশের বেলাতেই সাজা তো দূরে থাক, পুলিশ চার্জশীট পর্যনত্ম দেয়া হয়নি। অধিকাংশ ৰেত্রেই এ সকল মামলায় আত্মহত্যার কারণ হিসেবে অভিযুক্তদের বিরম্নদ্ধে সাৰ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা দুরূহ হয়ে পড়ে বলে অনেক ৰেত্রেই পুলিশের পৰ থেকে চার্জশীট পর্যনত্ম দেয়া সম্ভব হয় না। আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরম্নদ্ধে নানা অভিযোগ থাকা ও এসব অভিযোগ প্রমাণ না হবার পেছনে দায়ী বলেও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের অভিযোগ। তবে পিঙ্কির আত্মহত্যার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত ড্রাইভার মুরাদ এবং তার সহযোগী বলে অভিযুক্ত তথাকথিত চাচা পিঙ্কিদের বাসার দারোয়ান কালামের বিরম্নদ্ধে মামলা হয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯-এর 'ক' ধারায়। এটি একটি অজামিনযোগ্য মামলা। যার সর্বনিম্ন শাসত্মি ৫ বছরের সশ্রম কারাদ- এবং সর্বোচ্চ শাসত্মির বিধান রয়েছে যাবজ্জীবন কারাদ-। যে কারণে এখানে অপরাধীর পার পাবার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন জনৈক আইন বিশেষজ্ঞ। মামলার তদনত্ম কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই সায়েদ জানান, আসামি তো নিজ মুখেই চড় মারার কথা স্বীকার করেছে।

সংবাদ সম্মেলন
পিঙ্কির চাচা আলী আশরাফ আখন্দ পিঙ্কি হত্যাকা-ে আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের ভূমিকার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বিষয়টির নিয়মিত মনিটরিং হওয়াতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। প্রেমিক দাবি করা বখাটে মুরাদ তার প্রেমের স্বপৰে রিমান্ডে থাকাকালীন পুলিশকে যেমন কোন রকম প্রমাণ দেয়ায় ব্যর্থ হয়, তেমনি তার এক ঘনিষ্ঠজন পিঙ্কিকে চড় দিয়ে বিরাট ভুল করে ফেলেছে বলে স্বীকারও করেছে। সে যে বাড়ির ড্রাইভার সে বাড়ির কাজের মেয়ে শিউলীর নাম ব্যবহার করে তাকে ফোন দেয়াতেই সে সমসত্ম ঘটনা সবিসত্মারে শিউলীকে জানায় এবং তার অবস্থান খুলনাতে বলেও জানায়। যার প্রেৰিতেই খুলনা থেকে মুরাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মুরাদের সেইসব কথোপকথন মোবাইল রেকর্ড করে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের শোনানো হয়। মুরাদ সংশিস্নষ্ট থানা কতর্ৃপৰ থেকে শুরম্ন করে ৰমতাসীনদের অনেকের সঙ্গেই তার যোগাযোগ থাকায় তার কিছু হবে না বলেও মোবাইলে শিউলীকে অভয় দেয়। অথচ টেলিফোনে কথা বলা মহিলাটি যে শিউলী নয় তার কথা শুনে মুরাদ তা বুঝে উঠতে পারেনি। এতে করে শিউলীর সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা থাকারও সাৰ্য বহন করে। সংবাদ সম্মেলনে এই মামলায় গ্রেফতারকৃত সে বাড়ির দারোয়ান, মুরাদের তথাকথিত চাচা এবং বিভিন্ন সময়ে মুরাদকে সাহায্যকারী দারোয়ান কালামসহ উভয়ের দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মির দাবি করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.