নোয়াখালীতে বিএনপির হামলায় আওয়ামী কর্মী হত

শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার ঘটনা নিয়ে শনিবার গভীর রাতে নোয়াখালীতে বিএনপি সন্ত্রাসীদের হামলায় আওয়ামী লীগের এক কর্মী নিহত হয়েছে। তার নাম শাহ্ আলম।
এ সময় উভয় পৰের মধ্যে গুলিবিনিময়, দোকানপাট ভাংচুর, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। ধাওয়া পাল্টাধাওয়ায় কমপৰে ১০ জন আহত হয়েছে। রাতভর উভয় পক্ষ থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। এ সময় পুলিশ ছিল অনেকটা নীরব।
এদিকে, লালমনিরহাটে রাতের অাঁধারে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও ইসলামী ছাত্রশিবির ক্যাডাররা ভেঙ্গে ফেলেছে শহীদ মিনার। এ ঘটনায় এলাকার মানুষ বিৰুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে বিৰোভে ফেটে পড়ে, সমাবেশ করে।
অন্যদিকে, কুমিলস্নার মুরাদনগর ও দেবীদ্বারে একুশের অনুষ্ঠান প- হয়ে যায় অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে। এ ছাড়া, তিতাস উপজেলায় এক প্রধান শিৰকের নির্দেশে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে শহীদ মিনার। মাদারীপুরেও দু'গ্রামের সংঘর্ষে ভাঙ্গা হয়েছে শহীদ মিনার। বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ছাত্রলীগকমর্ীদের হামলায় বিএনপির ১৫ নেতাকমর্ী আহত হয়েছে। শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শহীদ মিনারে এক ছাত্রীর ছবি তোলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু'গ্রামের মানুষের মধ্যে সংঘর্ষে কমপৰে ১০ জন আহত হয়। খবর নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতাদের পাঠানো।
শনিবার রাতে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার আমিশাপাড়া বাজারে বিএনপি ক্যাডারদের হামলায় শাহআলম (৪২) নামের এক আওয়ামী লীগ কমর্ী নিহত হয়েছে। সে ঐ বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী। এ সময় উভয় পরে মধ্যে সংঘর্ষে অনত্মত ১০ দোকান ভাংচুর, একটি দোকান লুট ও একটি দোকানে অগি্ন সংযোগ করা হয়। উভয়পরে মধ্যে গোলাগুলি, সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়ায় আহত হয়েছে কমপ ে১০ জন। রাতভর সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ ছিল অনেকটাই দর্শকের ভূমিকায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে র্যাব মোতায়েন করা হয়।
এদিকে রবিবার বিকেলে নিহত শাহ আলমের লাশের ময়নাতদনত্ম শেষে গ্রামের বাড়ি আমিশাপাড়া ইউনিয়নের ভদ্রগাঁও পেঁৗছলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অপরদিকে দোকানপাট ভাংচুর ও ব্যবসায়ী হত্যাকা-ের প্রতিবাদে সকাল থেকেই দোকানপাট বন্ধ ছিল এবং বিকেলে ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে আমিশাপাড়া মধ্যবাজারে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়ে আমিশাপাড়া বাজারে উত্তেজনা দেখা দেয়। রবিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যনত্ম কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি। সন্ধ্যার পর শাহ আলমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শহীদ মিনারে ফুল দিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ আমিশাপাড়া বাজারে জড়ো হতে থাকে। ১১টার পরে উভয়পরে মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। উভয়পরে মধ্যে ইটপাটকেল ও কাঁচের বোতল নিপে চলে। এ সময় আমিশাপাড়া কলেজে অবস্থানকারী পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় এবং পুলিশ পূর্বদিকে সরে যায়। উভয় পরে মধ্যে সংঘর্ষ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। এ সময় তিনটি সিএনজি অটোরিকশা করে অজ্ঞাত পরিচয় সশস্ত্র যুবক আমিশাপাড়া আসার পর পরই পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপি ক্যাডারদের হামলার শিকার হন আওয়ামী লীগ কর্মী শাহ্ আলম (৪২)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সোনাইমুড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নেয়ার পথে তাঁর মৃতু্য হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ নেতাকমর্ীরা মারমুখী হয়ে ওঠে। এ সময় স্টীল ওয়ার্কশপ, ওষুধের দোকান, মুদিদোকানসহ অনত্মত ১০টি দোকান ভাংচুর করা হয় এবং একটি দোকানে অগি্ন সংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা সুমনের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বিএনপি কমর্ীরা। একপর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
রাতে পরিস্থিতি কিছুটা শানত্ম হলে কে বা কারা আমিশাপাড়া মধ্যবাজারের মোবাইল কর্নারে শাটার ভেঙ্গে লুটতরাজ চালিয়ে ৬ লাধিক টাকার মোবাইল সামগ্রী নিয়ে যায়। রাতেই সোনাইমুড়ী থানা ও জেলা হেডকোয়ার্টার থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ আমিশাপাড়া বাজারে গেলে ভোরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। খবর পেয়ে ছুটে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক, সহকারী পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) আলী হোসেন। এ সময় বিএনপির নেতাকমর্ীরা এলাকাছাড়া হয়ে গেলেও রবিবার ভোর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ আওয়ামী লীগের নেতাকমর্ীরা একে একে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ১১টায় উপজেলা চেয়ারম্যান আ ফ ম বাবু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমিনুল ইসলাম বাকের, সহসভাপতি মাহফুজুর রহমান বাহার, আওয়ামী লীগ নেতা ভিপি নুরম্নল হকসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ নিহত শাহ্ আলমের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানান এবং উপযুক্ত বিচারের আশ্বাস দেন। পরবতর্ীতে তাঁরা আমিশাপাড়া বাজারে বিােভ মিছিল করেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাবু বলেন, শাহ আলম আওয়ামী লীগের সক্রিয় কমর্ী তাঁর হোটেলে একুশের কর্মসূচী শেষ করে আওয়ামী লীগ নেতাকমর্ীদের খাওয়ার কথা ছিল এ কারণেই বিএনপির সন্ত্রাসীরা তাঁকে হত্যা করেছে।
অপরদিকে আমিশাপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম নিহত শাহ আলমকে তাঁদের কমর্ী দাবি করেন।
দোকান ভাংচুরের প্রতিবাদে ব্যবসায়ী নেতা দুলাল মিয়ার সভাপতিত্বে বিকেলে আমিশাপাড়া মধ্যবাজারে প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার হারম্নন উর রশীদ হাযারী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ হানিফসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ হানিফ জানান, শাহ আলম আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিতপ্রাণ কমর্ী। বিএনপির সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। সন্ধ্যা ৭টায় জানান শাহআলম নিহত হবার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল।

No comments

Powered by Blogger.