নুরুন্নাহার শিরীন

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি পোশাক শিল্প এখন বড় ধরনের হুমকির মুখে। যুক্তরাষ্ট্র এখানকার শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ ও শ্রম অধিকার নিয়ে তৈরি পোশাক রফতানিতে জিএসপি (জেনেরালাইজড স্কিম অফ প্রেফারেন্স)
‘অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার’ সুবিধা বাতিল হতে পারে। জিএসপি সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যে বিশেষ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পায় তা যদিবাতিল হয়ে যায়, তবে আমাদের বিকাশমান অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ রফতানি আয়ের একটি বড় অংশ আসে পোশাক শিল্প থেকে। দেশে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। কয়েক লাখ শ্রমিক এসব কারখানায় কাজ করছে; এদের বেশিরভাগ নারীশ্রমিক, পোশাক শিল্পের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। সুতরাং পোশাকশিল্প খাতে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল হলে দেশের আর্থ-সামাজিক কাঠামো মুখথুবড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রন ক্লার্ক বাংলাদেশের সরকারকে একটি চিঠিতে জিএসপি বাতিলের প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়ে দিয়েছেন। জানা গেছে, এ ধরনের আশঙ্কা অনেক আগে থেকেই করা হচ্ছিল। দেশে গত দুই দশক ধরে পোশাক শিল্প ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছে; কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই কারখানায় কাজের পরিবেশ ও শ্রমিকের সুযোগ সুবিধার প্রতি তেমন একটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম বড় ক্রেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো সর্বদাই চেয়েছে এখানকার গার্মেন্টস শ্রমিকরা যেন খোলামেলা স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে কাজ করতে পারে। কারখানার প্রতিটি ফ্লোরে যেন পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা থাকে; এছাড়া অগ্নিকা- হলে শ্রমিকদের জন্য যেন যথাযথ বহির্গমন ব্যবস্থা থাকে। শ্রমিকদের এসব ন্যূনতম দাবি দাওয়া নিয়ে ইতোপূর্বে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখা হয়েছে।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, পোশাক শিল্পের মালিকপক্ষের কেউ কেউ শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধার দিকে দৃষ্টি দেয়নি। এসব কারণে এখানে গত কয়েক বছর ধরে পোশাকশিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ বিরাজ করছে। প্রতিবছরই পোশাক শিল্পে একাধিক অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। অনেক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তবে কয়েক মাস আগে আশুলিয়ার তাজরিন পোশাক কারখানায় অগ্নিকা-ের ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ খবরটি সারাবিশ্বের মিডিয়ায় বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়েছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের অনেকেই বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে পরিবেশ, শ্রমিকদের অবস্থা ও সুুযোগ সুবিধার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব পরিবর্তনের জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়া দরকার। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট মার্কিন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্তের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে। সবার প্রত্যাশা, পোশাক খাতে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বজায় রাখার জন্য সরকার সম্ভাব্য সবকিছুই করবে।

No comments

Powered by Blogger.