চট্টগ্রামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়- নিয়ম না মেনেই চলছে আটটি শাখা ক্যাম্পাস by নিজাম সিদ্দিকী

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই চট্টগ্রামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি শাখা ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। ক্যাম্পাসগুলো হচ্ছে: আইইউবি (ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ)


চট্টগ্রাম, ইউআইটিএস (ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস) চট্টগ্রাম ক্যাম্পাস, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটি ক্যাম্পাস, সার্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি এবং দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ক্যাম্পাস। এর মধ্যে আইইউবি ও ইউআইটিএস ছাড়া বাকি ছয়টিতে ভর্তি কার্যক্রম বহাল রয়েছে। তারা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য মঞ্জুরি কমিশনে আবেদন করেছে বলে জানা গেছে।
আইইউবি ও ইউআইটিএসের আবেদনের বিষয়টি স্বীকার করে শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’
সরকার ২০০৭ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস চালুর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপর ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আইনেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস স্থাপনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে ইউজিসির অনুমোদন পাওয়া ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো হচ্ছে: বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি (ইডিইউ), আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি), প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং (ইউএসটিসি)।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস চট্টগ্রামের চন্দনাইশের বিজিসি বিদ্যানগরে। কিন্তু নগরের নাসিরাবাদের বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় বিজিসি বিদ্যানিকেতনে গড়ে তোলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ক্যাম্পাস। এখানেও মূল ক্যাম্পাসের মতো এলএলবি, বিবিএ ও ফামের্সি বিষয়ে ভর্তি ও শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
এ বিষয়ে বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. নুরুল হুদা শিকদার বলেন, এটা আউটার ক্যাম্পাস নয়। এর অনুমোদন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।
নগরের জামালখান এলাকায় রয়েছে আইইউবি চট্টগ্রাম ক্যাম্পাস। ২০১০ সালে ইউজিসি শাখা ক্যাম্পাস বন্ধের নির্দেশনা জারির পর এখানে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হলেও নিয়মিত পাঠদান চলছে। কিন্তু এর পর থেকে শিক্ষার্থীরা ঢাকা মূল ক্যাম্পাস থেকে সনদ পাওয়া নিয়ে সংশয় এবং সেখানে বদলি নিয়ে ভোগান্তির অভিযোগ করেন বিভিন্ন সময়ে। এমনকি গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আইইউবি চট্টগ্রামের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এস এম আল হোসাইনী বলেন, ‘সরকারি অধ্যাদেশ জারির পর থেকে আমরা ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। আইইউবি চট্টগ্রাম নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মঞ্জুরি কমিশনে আবেদন করেছি।’ শিক্ষার্থীদের মূল ক্যাম্পাসের সনদ পেতে কোনো সমস্যা হবে না বলে নিশ্চয়তা দেন তিনি।
নগরের খুলশী এলাকায় গড়ে ওঠা ইউআইটিএস শাখা ক্যাম্পাসে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে এখানেও কাছাকাছি দুটি ভবনে পাঠদান কার্যক্রম চলছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম ক্যাম্পাসে নতুন করে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছি না। ইতিমধ্যে যাঁরা ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের পাঠদানের ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এঁরা সবাই মূল ক্যাম্পাসের সনদ পাবেন।’ ইউআইটিএস চট্টগ্রাম নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ২০১০ সালের ৩ নভেম্বর মঞ্জুরি কমিশনে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তাদের কোথাও কোনো শাখা, কেন্দ্র, ক্যাম্পাস, ইউনিট অথবা তথ্যকেন্দ্র নেই। বর্তমানে তাদের মূল ক্যাম্পাস রয়েছে শুধু মেহেদীবাগে। কিন্তু নগরের হালিশহর, জিইসি মোড় ও এম এম আলী রোডে শিল্পকলা একাডেমীর সামনে এর তিনটি শাখা ক্যাম্পাসের খোঁজ পাওয়া গেছে।
সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় হালিশহর, জিইসি মোড় ও এম এম আলী রোড শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনাকারী সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় মেহেদীবাগ মূল ক্যাম্পাসের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে আমরা ক্যাম্পাস চালাচ্ছি। পরে তারা আমাদের ক্যাম্পাস পরিচালনার ব্যাপারে বাধা দিলে আমরা আদালতের শরণাপন্ন হই। বর্তমানে এ ব্যাপারে মামলা চলছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে মেহেদীবাগ ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছি।’
সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের (মেহেদীবাগ মূল ক্যাম্পাস) প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রেজারার সারোয়ার জাহান চুক্তির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘চুক্তিতে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বলা হয়েছিল। আমরা ২০০৮ সালে তাদের আউটার ক্যাম্পাস গুটিয়ে নেওয়ার জন্য তাগিদ দিতে থাকি। পরে এ নিয়ে মামলা হলে প্রথমবার রায় আমাদের পক্ষে যায়। দ্বিতীয়বার তারা আদালতের রায়কে তাদের পক্ষে আনার চেষ্টা চালায়। এ অবস্থায় আমরা উচ্চ আদালতের মাধ্যমে এ ব্যাপারে স্থগিতাদেশ জারি করিয়েছি।’
শাখা ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়ার ব্যাপারে সরোয়ার জাহান বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সঠিক নয়, বরং আমরা বলেছি, ২০১০ সালের আগে যাদের ভর্তির তালিকা আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে, আমরা শুধু তাদেরই সনদ দেব।’
এদিকে, নগরের পূর্ব নাসিরাবাদ ২ নম্বর গেট ও বাকলিয়া এলাকায় দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ক্যাম্পাস গড়ে উঠেছে। বাকলিয়া ক্যাম্পাসে ইসলামিক স্টাডিজ, বিএড ও এমএড এবং নাসিরাবাদ ক্যাম্পাসে বিবিএ, এমবিএ, ডিপ্লোমা ইন লাইব্রেরি সায়েন্স, এমএ ইংরেজি, এলএলবি, এলএলএম পড়ানো হয়।
দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি পূর্ব নাসিরাবাদ ও বাকলিয়া ক্যাম্পাসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেলাল নূর বলেন, ‘দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আলী আশরাফ সাহেবের ভাই আলী নকী আউটার ক্যাম্পাস চালানোর জন্য আদালতে রিট করেছেন। আমরা সেই হিসেবে আমাদের দুটি ক্যাম্পাসের কার্যক্রম চালু রেখেছি।’

No comments

Powered by Blogger.