প্রশাসনের আপস প্রস্তাবে রাজি নয় লিমন

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসকের আপসের প্রস্তাবে রাজি নয় র‌্যাবের গুলিতে বাঁ পা হারানো কলেজছাত্র লিমন হোসেন। সে আবারও দোষী র‌্যাব সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছে। এদিকে গত বুধবার রাতে লিমনের মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে আপসের প্রস্তাবের বিষয়ে কথা বলেছেন র‌্যাবের এক কর্মকর্তা।


তবে লিমনের মা জানিয়ে দিয়েছেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের মতামত ছাড়া তিনি কিছুই বলতে পারবেন না।
লিমন গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে জানায়, ‘পা কেটে ফেলার পর আমি পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। তখন হাইকোর্ট আমার উন্নত চিকিৎসার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু সরকারের কেউ আমার খোঁজ নেননি। দেশের মানুষের সাহায্যে আমার চিকিৎসা চলে। এখন হঠাৎ র‌্যাবের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নেওয়ার বিনিময়ে আপসের প্রস্তাব কেন? আমি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দোষী র‌্যাব সদস্যদের বিচার চাই। কারণ, তাঁদের কারণেই সারা জীবন আমাকে পঙ্গু হয়ে বেঁচে থাকতে হবে।’
যোগাযোগ করা হলে আসকের পরিচালক (তদন্ত) নূর খান বলেন, লিমন একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে পা হারিয়েছে। গত দেড় বছরে মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে লিমনকে হয়রানিসহ নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সর্বশেষ ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক অশোক কুমার বিশ্বাস অন্য জেলার একটি উপজেলায় গিয়ে যে আপসের প্রস্তাব দিয়েছেন, তা আইন ও নীতিবহির্ভূত। তিনি বলেন, লিমন পা হারিয়ে দোষী র‌্যাব সদস্যদের বিচার দাবি করেছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব লিমনকে বিচার পেতে সহায়তা করা। কিন্তু জেলা প্রশাসক র‌্যাবের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে লিমন ও তার পরিবারকে রীতিমতো মানসিক চাপে ফেলেছেন।
লিমনের আইনজীবী মানিক আচার্য্য আশা প্রকাশ করেন, র‌্যাবের দায়ের করা দুটি মামলা থেকে সাক্ষী-প্রমাণের মাধ্যমে লিমন অবশ্যই খালাস পাবে। আর লিমনের মা ছয়জন র‌্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে যে নারাজি আবেদন করেছেন, তা আদালত গ্রহণ করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিলে লিমনকে হত্যাপ্রচেষ্টার অভিযোগ প্রমাণিত হবে।
র‌্যাব কর্মকর্তার ফোনের বিষয়ে লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাঁর মুঠোফোনে একটি কল আসে। ও পাশ থেকে পুরুষ কণ্ঠের ব্যক্তি জানতে চান, ‘পত্রিকায় দেখলাম ঝালকাঠির ডিসি আপনাকে আপসের প্রস্তাব দিয়েছেন, এটা সঠিক কি না। আপনি তাঁর প্রস্তাব নিয়ে কি ভেবেছেন?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের মতামত ছাড়া আমি কিছুই বলতে পারব না। যারা লিমনকে গুলি করেছে আমি তাদের বিচার চাই।’ এরপর ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনি এখনো তো লিমনকে নিয়ে কাউখালীতে ভাড়া বাসায় থাকেন, ভাড়ার টাকা কে দেয়, লিমনের পড়াশোনার খরচ কীভাবে চলে। কারা আপনাদের সহায়তা করে।’
হেনোয়ারা বেগম বলেন, ওই ব্যক্তি পাঁচ মিনিট কথা বলার পর তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে বলছি, র‌্যাবের লোক।’ এরপর তিনি লাইন কেটে দেন।
২০১১ সালের ২৩ মার্চ বাড়ির কাছে মাঠে গরু আনতে গিয়ে র‌্যাবের গুলিতে আহত হয় কলেজছাত্র লিমন। এ ঘটনায় র‌্যাবের উপসহকারী পরিচালক লিমনের সঙ্গে অপর সাত সন্ত্রাসীকে আসামি করে রাজাপুর থানায় দুটি মামলা করেন। এর একটি অস্ত্র আইনে, অপরটি সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে।
অপরদিকে লিমনকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে লিমনের মা ছয়জন র‌্যাব সদস্যকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন। গত ১৪ আগস্ট ছয় র‌্যাব সদস্যকে লিমন হত্যাপ্রচেষ্টার মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করে রাজাপুর থানার পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে লিমনের মা ৩০ আগস্ট ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নুসরাত জাহানের আদালতে নারাজি আবেদন করেন। ১৭ অক্টোবর নারাজি আবেদনের ওপর শুনানি হয়। আগামী ১২ ডিসেম্বর নারাজি আবেদনের ওপর আদেশ দেওয়া হবে।
লিমন বর্তমানে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা সদরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছে।

No comments

Powered by Blogger.