অপরাধকর্মে পুলিশ-শর্ষেতেই যখন ভূত

খবরগুলো একই সঙ্গে শঙ্কা ও উদ্বেগের। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার গুরুদায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অবৈধ অস্ত্র ও শত শত রাউন্ড গুলি। ২৪ অক্টোবর রাজধানীর কাফরুল থানা এলাকা থেকে ৫০০ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করা হয় দুই পুলিশ সদস্যকে।


অভিযোগ, এ দু'জন পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি বিরোধীদের কাছে অস্ত্র ও গুলি সরবরাহ করতেন। এ দু'জনের সম্পর্ক-সূত্রে গ্রেফতার হন আরেক পুলিশ সদস্য। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মঙ্গলবার খোদ রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র ও ১ হাজার ১০০ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার হয়েছেন আরও দুই পুলিশ সদস্য। ঘটনাক্রম ও পুলিশ সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক থেকে ধারণা করা হচ্ছে, অস্ত্র ও গুলিসহ আটক পুলিশ সদস্যরা অবৈধ অস্ত্র ও গুলি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসী, সন্ত্রাসবাদী ও গুরুতর অপরাধীদের সম্পর্ক আছে, এমন ধারণাও কষ্টকল্পিত হবে না। দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কাছে অবৈধ অস্ত্র ও গুলি থাকতে পারে না। সঙ্গত কারণেই এসব খবর উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এন্তার_ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব অনেক সময়ই তারা সঠিকভাবে পালন করেন না। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন না করে উল্টো কাজও তারা করেন। উৎকোচ, অনিয়ম ইত্যাদি তো সাধারণ অপরাধের পর্যায়ে গণ্য। দুঃখজনক হলেও সত্য, পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের বহু অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতির মতো অভিযোগ থেকেও তারা মুক্ত নন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও গুলি ব্যবসার অভিযোগ অতীতের সব অপরাধকে ম্লান করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে স্খলন ঘটলেও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে এমন অপরাধকে তারা প্রশ্রয় দেন না, এটাই সাধারণ ধারণা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, খোদ পুলিশ লাইন্সে বসেই কেউ কেউ অস্ত্র ও গুলি ব্যবসা করে চলেছেন। হতে পারে, গুরুতর এ ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন। কিন্তু এ ঘটনাটি বলে দেয়, পুলিশের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা ছড়িয়েছে এবং তার মাত্রা যে সীমিত গণ্ডি ছাড়ায়নি, তা নিশ্চিত করে বলা চলে না। দেশের সুশৃঙ্খল একটি বাহিনীর মধ্যে এমন অপরাধ প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা কোনোভাবে প্রত্যাশিত হতে পারে না। শর্ষেতে ভূত থাকলে কঠিন হলেও সেটা তাড়াবার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পুলিশ বাহিনীতে অতিদ্রুত একটি শুদ্ধি ও সংস্কার অভিযান পরিচালিত হওয়া দরকার। যেসব পুলিশ সদস্য অপরাধ, দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তাদের দ্রুত চিহ্নিত করা দরকার। দেশের স্বার্থে তো বটেই, পুলিশের ভাবমূর্তি আর শৃঙ্খলার স্বার্থেও এটি জরুরি। আর এটি করতে হলে সাধারণ থেকে গুরুতর কোনো অপরাধকেই ছাড় দেওয়া চলবে না। রাস্তায় যিনি উৎকোচ নিচ্ছেন, তিনিই যে গুরুতর অপরাধীকে ছাড় দিচ্ছেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? আবার গুরুতর অপরাধীদের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক, তাদেরই গুলি সরবরাহের ব্যবসায় নেমে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। এক্ষেত্রে সরকারের কঠোর হওয়ার সময় এসেছে। গুরু অপরাধে লঘুদণ্ডের যে রীতি চলে আসছে, তা অপরাধে জড়িতদের আরও উৎসাহী করবে, যা আইনেরও শিথিলতা। আর এই শিথিলতার সুযোগে তারা গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় লাগাম টেনে পুলিশ বাহিনীকে রক্ষার উদ্যোগ এখনই নিতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.