হাসপাতালের শয্যা ও ওষুধ-মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই

চিকিৎসাব্যবস্থায় যেকোনো ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম অসুস্থ মানুষের জীবনকে বিপন্ন করতে পারে। তার পরও আমাদের এখানে স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসাব্যবস্থায় অনিয়ম-দুর্নীতি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।


অনাকাঙ্ক্ষিত এসব অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ, রোগীর শয্যা ও ভর্তি ছাড়াও চিকিৎসকের বদলি ও পদোন্নতির মতো কিছু প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও। এর মাত্রা কখনো কখনো বৃদ্ধি পেয়ে গোটা স্বাস্থ্য খাতকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়। দেশের সাধারণ মানুষের উপার্জন ক্ষমতা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না পৌঁছার কারণে সরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর তাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নির্ভর করতে হয়। অথচ সরকারি হাসপাতালগুলোয় বিদ্যমান অব্যবস্থা ও দুর্নীতির কারণে রোগীর চিকিৎসা হওয়ার চেয়ে দুর্ভোগই হয় বেশি। তবে তদন্তে চিহ্নিত হওয়ার পরও অজানা কারণে দুর্নীতি ও অব্যবস্থা নিরোধ করতে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায় না।
এটা ঠিক, আগের তুলনায় দেশে চিকিৎসা-সুবিধা যথেষ্ট বেড়েছে। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু এখনো রোগীর তুলনায় সেগুলো অপ্রতুল। বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোয় বিত্তবানদের যেতে দেখা গেলেও অধিকাংশ মানুষ নির্ভর করে সরকারি হাসপাতালের ওপর। কিন্তু সেখানে উপযুক্ত চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া দুরূহ। শয্যাসংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় এর বরাদ্দ নিয়ে দুর্নীতি চলছে। সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, হাসপাতালগুলোয় প্রতি এক হাজার ৫৭৪ জন মানুষের জন্য একটি শয্যা রয়েছে। আর ১৬ কোটি জনসংখ্যার এ দেশে সরকারি হাসপাতাল মাত্র ৫৮৩টি। অথচ দেশের নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষকে নির্ভর করতে হয় সরকারি হাসপাতালের ওপর। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মতো বৃহৎ চিকিৎসাকেন্দ্রে রোগীকে মেঝের পাশাপাশি করিডরেও শুয়ে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। এতেই বোঝা যায় চিকিৎসাব্যবস্থার হাল।
কিন্তু এর সঙ্গে যখন সরকার বরাদ্দ ওষুদের দুষ্প্রাপ্যতা জড়িত হয়, তখন বোঝা যায় আসল অবস্থাটা কী। সরকারি হাসপাতালগুলোয় ওষুধ ক্রয়ের নামে পুকুরচুরি বহুদিনের পুরনো খবর। প্রশাসনের দুর্নীতির কারণে অধিক মূল্যে নিম্নমানের ওষুধ ক্রয় করতে হচ্ছে। সম্প্রতি এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ১৬ জন সিভিল সার্জনের চাকরিচ্যুতি থেকে প্রমাণ হয় প্রকৃত অবস্থা কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। সরকারি হাসপাতালগুলোর ওষুধের ৮০ শতাংশই এখন কেন্দ্রীয়ভাবে ক্রয় করা হচ্ছে। ২০ শতাংশ ওষুধ সিভিল সার্জনরা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করছেন। কিন্তু দুই পদ্ধতিতেই ক্রয়কালীন স্বচ্ছতার অভাবের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। সরকারি ওষুধ বাইরে বিক্রি করে দেওয়ার প্রবণতা কিছুটা কমলেও ক্রয়কালের দুর্নীতির প্রবণতা কমেনি। তাই চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হলে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবায় দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে সরকারকে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেও এই খাতে পরিবর্তন আসতে পারে। চিকিৎসা-সুবিধা পাওয়া যে মানুষের মৌলিক অধিকার তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।

No comments

Powered by Blogger.