এবার হাতির মুখে কথা! আসিফ আজিজ

হাতি কথা বলে একথা শুনে নিশ্চয়ই আকাশ থেকে পড়বেন। বিজ্ঞান যখন অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলছে, পশুরাই বা পিছিয়ে থাকবে কেন। পাখির কথা বলা, বাঘ-সিংহের মতো হিংস্র জন্তুর পোষমানা এখন স্বভাবিক ব্যাপার। কিন্তু হাতির কথা বলা! সে সত্যিই বিস্ময়কর বটে।

কিন্তু এই অসম্ভবকেও সম্ভব করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি হাতি। তাও আবার কোরিয়ান ভাষায় কথা বলে। যে ভাষা ভাষাশিক্ষার্থীদের কাছে বিশ্বের কঠিনতম ভাষা হিসেবে স্বীকৃত।
সেই কঠিন ভাষা শেখার কাজটি সহজ করে ফেলেছে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের কাছে অবস্থিত এভারল্যান্ড চিড়িয়াখানার কোশিক নামের একটি এশিয়ান হাতি। মানুষের উচ্চারিত কিছু শব্দ হুবহু নকল করে তার পরিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সে। কোশিক কোরিয়ান ভাষায় ‘বসো’, ‘না’, ‘শুয়ে পড়ো’ এবং ‘ভালো’ শব্দগুলো বলতে পারে। তার প্রশিক্ষক কিম জঙ গ্যাপ প্রথম কয়েক বছর আগে বুঝতে পারেন যে কোশিক তার কণ্ঠ হুবহু নকল করছে।

২০০৪-০৫ সালের কিম জানতেন না, তিনি যে মানুষের কণ্ঠ চিড়িয়াখানাতে শুনছেন তা কোশিক নামক হাতিটির। ২০০৬ সালে তিনি অনুধাবন করতে থাকেন যে কোশিক তার প্রশিক্ষক ও পরিচারকের কণ্ঠ নকল করছে। তার প্রশিক্ষক কিম তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ‘ক্রেজি’ নাম দেন।

ড. এনজেলা স্টোয়েজার-হরওয়াথ নামক একজন গবেষক বলেন, ‘‘ইউটিউবে কোশিকের একটি ভিডিও দেখার পর আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে সেটা বানানো না সত্যি।’’ তিনি একজন ফেলো এক্সপার্ট ড. ড্যানিয়েল মিটচেইন-কে সঙ্গে নিয়ে ২০১০ সালে হাতিটির সত্যিকারের কথা বলার ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় যান। তারা কোশিকের পরিচারকের সঙ্গে সঙ্গে কিছু শব্দের অনুকরণ রেকর্ডও করেন।
“কিছু শব্দ যা সে আয়ত্ত করেছে, তার মিল বিস্মিত করে।” জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব জেনার গবেষক মিটচেইন এ কথা বলেন। ‘‘উদাহরণস্বরূপ ‘চোয়া’(অর্থ ভালো) শব্দটি যদি তার পরিচারকের কণ্ঠে শোনার পর কোশিকের কণ্ঠে শোনেন তাহলে তা একই মনে হবে।”

কোশিক ১৯৯০ সালে কেপটিভিটিতে জন্ম নেয় এবং কিছুকাল পর তাকে এভারল্যান্ড চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পাঁচ থেকে বারো বছর বয়স পর্যন্ত কোশিকের সংস্পর্শে কোনো হাতি ছিল না। তার পরিচয় ছিল শুধু মানুষের সঙ্গে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে কোশিক কোনো আবশ্যকতা ছাড়াই কতগুলি শব্দ শিখেছে। সব জেনে বিস্ময় মানা ছাড়া আর কি করার আছে। তবে কোশিককে নিজে চোখে দেখা কিংবা তার কথা সরাসরি শুনতে না পারার দুঃখ আমাদের আপাতত মেনে নিতে হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.