বিমা প্রতিনিধিদের বিষয়ে আইডিআরএর প্রজ্ঞাপন-আগে প্রিমিয়ামের অর্থ জমা পরে চেকে কমিশনের টাকা by ফখরুল ইসলাম

দেশের সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোতে ভুয়া প্রতিনিধিদের (এজেন্ট) নামে ব্যাপকভাবে আইন-কানুনের লঙ্ঘন চলছে।
ব্যাংক ব্যবস্থাপক ও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যৌথভাবেই এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত। বিষয়টি নজরে আসায় তা দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।


আইডিআরএ গতকাল রোববার দেশের ৪৩টি সাধারণ বিমা কোম্পানির উদ্দেশে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছে, দীর্ঘদিন থেকেই প্রতিনিধিদের নামে বিমা কোম্পানিগুলোতে অসাধু চর্চা চলছে।
বিমাশিল্পের স্বার্থে এখন থেকে আর বিমা প্রতিনিধিদের কমিশনের টাকা প্রিমিয়ামের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে না। আগে প্রিমিয়ামের অঙ্ক জমা দিতে হবে, তারপর প্রতিনিধিদের কমিশনের টাকা পরিশোধ করা হবে।
শুধু তাই নয়, কমিশনের টাকা এখন থেকে ব্যাংক হিসাবে দেয় (অ্যাকাউন্টপেয়ি) চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। বিষয়টি কার্যকর হবে আগামী ১ মার্চ থেকে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই বিমা কোম্পানির পলিসি অথবা কভারনোটের টাকা প্রিমিয়ামের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে না। আর, একটি পলিসি খোলা হলে প্রতিনিধিদের যে কমিশন দেওয়া হয়, তা তাঁদের দিতে হবে চেকের মাধ্যমে। আবার, আইডিআরএ থেকে নিবন্ধন নেওয়া প্রতিনিধি বা ব্রোকার ছাড়া কেউ এই কমিশন পাবেন না।
এতে বলা হয়, এখন থেকে বিমা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়, মুখ্য কার্যালয় ও শাখা কার্যালয়কে তাদের সব ব্যাংক হিসাবের তথ্য মাসিক ভিত্তিতে সংরক্ষণ করতে হবে। সংরক্ষণের পদ্ধতি এমন হতে হবে, যাতে কোনো পরিদর্শন দল বা নিরীক্ষা দলের কাছে তা সহজ ও বোধগম্য হয়।
এসব ব্যাংক হিসাবে কত টাকা প্রিমিয়াম এল (প্রিমিয়াম ইনফ্লো) বা কত টাকা কমিশন হিসেবে দেওয়া হলো (কমিশন আউটফ্লো), তারও উল্লেখ থাকতে হবে।
ব্যাংক হিসাব ছাড়াও প্রিমিয়াম, কভারনোট, পেটিক্যাশ, কমিশন ইত্যাদি তথ্যও স্পষ্টভাবে সংরক্ষণ করতে হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
আইডিআরএ ও বিমা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের ৪৩টি সাধারণ বিমা কোম্পানিতে প্রায় ৬০ হাজার প্রতিনিধি রয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগ ভুয়া। যেসব কোম্পানির ব্যবসার আওতা বড়, সেগুলোর ভুয়া প্রতিনিধির সংখ্যাও বেশি।
তবে প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার জন্য লাইসেন্স দেয় আইডিআরএ। কিন্তু কাগজে-কলমে নাম থাকলেও প্রতিনিধি হিসেবে বাস্তবে এদের বেশির ভাগেরই কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই প্রতিনিধিদের কমিশন বাবদ পুরো টাকাই হয় ভাগাভাগি হচ্ছে, নয় প্রিমিয়ামের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।
বিমা আইন, ২০১০ অনুমোদিত হলেও বিধিমালা তৈরি না হওয়ায় এখনো দেশের বিমা খাত পরিচালিত হচ্ছে ১৯৩৮ সালের বিমা আইন অনুযায়ী। এই আইনের ৪০(১) ধারা অনুযায়ী বিমা ব্যবসার কমিশন পাওয়ার কথা বিমা প্রতিনিধিদের।
যোগাযোগ করলে আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ ভূঁইয়া বিমা প্রতিনিধির অস্তিত্বের কথা স্বীকার করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত থাকার কারণে এত দিন বিমা খাতে অনেক বিধিবহির্ভূত কাজই হয়েছে। আইডিআরএর পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে খাতটিকে সুশৃঙ্খল করার।
সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বিমার কমিশন নিয়ন্ত্রণ করেন মূলত ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকেরা। এখন এটি দূর হবে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন যথেষ্ট সময় দিয়ে আইডিআরএ এই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বলে একে স্বাগত জানান। তিনিও মনে করেন, চেকের মাধ্যমেই বিমা প্রতিনিধিদের কমিশনের টাকা পরিশোধ করা উচিত, যা এত দিন ছিল না।

No comments

Powered by Blogger.