সবার গন্তব্য ছিল তুরাগ নদের তীর

দুপুর সাড়ে ১২টার কিছু পরে আখেরি মোনাজাত। মোনাজাতে শরিক হতে আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল ঢাকাবাসীর। বাসে-ট্রেনে কিংবা গাড়িভাড়া করে শত শত মানুষ মোনাজাতে অংশ নিতে গতকাল রোববার পাড়ি জমান টঙ্গীর তুরাগতীরে। নানা কারণে যাঁরা টঙ্গীতে যেতে পারেননি, তাঁরা বাড়িতে বা কর্মস্থলে টেলিভিশনের সামনে বসে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছেন।


গতকাল রোববার সকাল থেকেই রাজধানীর ব্যস্ত এলাকাগুলো ছিল কিছুটা ফাঁকা। প্রতিদিন ভোরে ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর এলাকায় বহু মানুষ হাঁটতে আসেন। গতকাল সকালে পার্কে মানুষের উপস্থিতি ছিল কম। এখানে হাঁটাহাঁটি শেষে অনেকেই ‘বিহারি কাবাব ও স্যুপ’ নামের দোকানটিতে নাশতা করেন। গতকাল তা বন্ধ ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দোকানের মালিক-কর্মচারী সবাই ইজতেমায় অংশ নিতে গেছেন।
ঢাকা শহর বিকেল পর্যন্ত মোটামুটি ফাঁকা থাকলেও মহাখালী, উত্তরা ও আবদুল্লাহপুর এসব জায়গায় ছিল যানজট। প্রেসক্লাবের সামনে শাহবাগ-কলাবাগান-মোহাম্মদপুর রুটে চলাচলকারী একটি বাসের টিকিট কাউন্টারে কর্মরত আশরাফুল ইসলাম বলেন, গতকাল মহাখালী-উত্তরা-টঙ্গী রুটের গাড়িগুলোয় ভিড় ছিল। তাঁদের রুটে তেমন ভিড় ছিল না।
ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি) এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে ৫০টি বাস মুসল্লিদের পরিবহনে ব্যবহূত হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ২১টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করেছে।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক সারোয়ার আলম বলেন, আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে তিনি ভিড় ঠেলেই বন্ধুবান্ধবসহ টঙ্গী পৌঁছান। কলাবাগানের বাসিন্দা মাকসুদ আলম ফজরের আজানের পর ট্রেনে রওনা দেন। সচিবালয়ের কয়েকটি কক্ষে টেলিভিশনের সামনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দোয়ায় অংশ নেন।
পশ্চিম রাজাবাজারের বাসিন্দা শাহনাজ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ও তাঁর প্রতিবেশীরা টিভির সামনে বসে মোনাজাত করেছেন। শত-সহস্র মানুষের সঙ্গে হাত ওঠালে প্রার্থনা কবুল হবে—এমন বিশ্বাস থেকেই তাঁরা একসঙ্গে জমায়েত হয়েছিলেন।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের কর্মকর্তা বজলুল করিম আকন্দ বলেন, দেশের আনাচ-কানাচ থেকে অসংখ্য মানুষ ইজতেমায় অংশ নেন। বিদেশ থেকেও এসেছেন বহু অতিথি। এতে করে একের সঙ্গে অন্যের পরিচয় হয়, আত্মীয়তা হয়, ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও এর সামাজিক প্রভাব খুবই গভীর ও ব্যাপক।

No comments

Powered by Blogger.