ধর্ষণ-হত্যা: মোমবাতি জ্বালিয়ে ওই নারী চিকিৎসককে স্মরণ, কলকাতার রাজপথে রাতেও প্রতিবাদ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদে এখনো উত্তাল রয়েছে পুরো রাজ্য। বুধবার রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে আলো নিভিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে মোমবাতি ও প্রদীপ জ্বালিয়ে ওই নারী চিকিৎসককে স্মরণ করেছে মানুষ। রাজ্যের জুনিয়র চিকিৎসকেরা এই কর্মসূচি ডেকেছিলেন।

নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় বিচারের দাবিতে আজ রাতভর কলকাতার রাজপথে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। এর আগে ১৪ আগস্ট রাতে একইভাবে রাজপথে আন্দোলন করেন নারীরা। আন্দোলনে সামিল হওয়া ব্যক্তিদের দাবি, হত্যাকারীদের শনাক্ত করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

বুধবার বিকেল থেকেই বাম ছাত্র ও যুব সংগঠন এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে আসছে। প্রকৃত খুনী শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচি থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে।

বালিগঞ্জ এলাকার সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা বিকেলে পথে নামেন। গড়িয়াহাটার মোড়ে মানববন্ধন করেন তারা। দাবি তোলেন, অবিলম্বে নিহত চিকিৎসকের হত্যাকারীদের শনাক্ত করে শাস্তি দিতে হবে। জাতীয় কংগ্রেসও কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিল করেছে।

বিজেপি আজও জেলায় জেলায় বিডিও অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি পালন করেছে। ওন্দা, বাঁকুরা, পাশকুড়ায় পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে আরজি করে নারী চিকিৎসকের হত্যাকান্ড নিয়ে যখন চলমান আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গের সীমানা ছাড়িয়ে পুরো ভারতে ছড়াতে শুরু করেছে; তখন সোনারপুর দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক অভিনেত্রী লাভলি মৈত্রের মন্তব্য আগুনে ঘি ঢেলেছে। তিনি হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা বদল চেয়েছি কিন্তু বদলা নেই। এবার বদলা নেব।’

লাভলী মৈত্র আন্দোলনরত চিকিৎসকদেরওষোদাগার করেছেন। তাঁর মন্তব্যের বিরুদ্ধে বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। আগামী শুক্রবার বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে শুনানি হতে পারে।

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ

আরজি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় মুখ খুলেছেন ওই চিকিৎসকের মা–বাবা আর স্বজনেরা। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ওই চিকিৎসকের মা–বাবা অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন তাদের মেয়েকে দেখতে দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষের রুমে নিয়ে গিয়ে পুলিশের মাধ্যমে সাদা কাগজে সই নিতে চেয়েছিল।

তারা বলেন, ওই দিন টাকা দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করতে চাওয়া হয়েছিল। এমনকি তাদের টালা থানায় বসিয়ে রেখে মৃতদেহের সৎকার করা হয়েছে। তাই তাদের প্রশ্ন, কারা দিয়েছিল সৎকারের টাকা?

পরিবারের পক্ষ থেকে আরও প্রশ্ন উঠেছে, হত্যাকান্ড নিয়ে পুলিশ কেন এত সক্রিয়তা দেখিয়েছিল? কী তারা লুকাতে চেয়েছিল? কার নির্দেশে এসব ঘটনা ঘটেছে? এর পেছনে কি রহস্য ছিল?

No comments

Powered by Blogger.