সাক্ষাৎকারে ক্রীড়া উপদেষ্টা: স্বপ্ন নয় দায়িত্ব by ইশতিয়াক পারভেজ

বয়সটা মাত্র ২৬ ছুঁয়েছে। এই বয়সে একজন তরুণ কী হওয়ার স্বপ্ন অন্তরে ধারণ করে? কেউ বড় কোনো চাকরির, কেউবা বিদেশে গিয়ে উন্নত জীবনের। আবার কারও স্বপ্ন ফুটবলার কিংবা ক্রিকেটার হওয়ার। ভিন্ন ভিন্ন ভাবনা তারুণ্যের মনে দোলা দেয়। কিন্তু একেবারে নতুন বাংলাদেশের জন্য আন্দোলন করে সরকারের পরিবর্তন। সেখান থেকে মন্ত্রীর মর্যাদায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা হয়ে যাওয়া তো স্বপ্নের মতোই! হ্যাঁ, বলছিলাম আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কথা! কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। সচিবালয়ের চেয়ারে তাকে দেখে একটিবারও মনে হয়নি তিনি বিচলিত। তার কথাতেই স্পষ্ট ছাব্বিশেই তিনি স্বপ্নকে কবর দিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন। ছোটবেলায় ফুটবল খেলার জন্য বাবা-মায়ের কাছে পিটুনি খাওয়া আসিফ অকপটে বলে দিলেন তার এই যাত্রা ‘স্বপ্ন নয়, দায়িত্ব’।  ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর শচীন টেন্ডুলকারভক্ত ক্রীড়া উপদেষ্টা জানালেন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কথা।

দৈনিক মানবজমিন-এর সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজের সঙ্গে সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-

ছোটবেলায় কোন খেলাটাকে বেশি প্রধান্য দিয়েছেন?
আসিফ মাহমুদ: আমি ফুটবলই বেশি খেলেছি। ক্রিকেট খুব একটা খেলতাম না। তবে দর্শক হিসেবে ক্রিকেটটাই বেশি দেখেছি।

ফুটবলে কোন প্লেয়ারের ভক্ত আপনি?
আসিফ মাহমুদ: অবশ্যই আমার প্রিয় ফুটবলার রোনালদো (ক্রিস্টিয়ানো)। আমার প্রোফাইলে গেলেই দেখবেন আমি তার কত বড় ভক্ত।

খেলতে যাওয়ার জন্য মার খেয়েছেন বা পরিবারের বাধার মুখে পড়েছেন- এমন কোনো স্মৃতি আছে?
আসিফ মাহমুদ: এটাতো ছোটবেলায় সবারই সঙ্গে হয়, আমার সঙ্গে মনে হয় একটু বেশিই হয়েছে। আমি একটু পড়াশোনার চেয়ে খেলার দিকেই মনোযোগ দিতাম আর ভীষণ দুরন্ত ছিলাম। এই কারণেই মারও খেয়েছি অনেক। একটি নির্দিষ্ট দিন আমার সঙ্গে এমন হয়েছে তা নয়, এটি আমার জীবনের নিত্যদিনের ঘটনাই ছিল।

হঠাৎ করেই বদলে গেল অনেক কিছু। বলতে পারেন অনেকটা স্বপ্নের মতোই, একেবারে ছাত্র থেকে ক্রীড়া উপদেষ্টা... বিষয়টা কতটা গর্বের?
আসিফ মাহমুদ: না, স্বপ্নের মতো নয়, আবার গর্বও করবো না। এটি এখন আমার কাছে দায়িত্ব। এটি একটি বড় দায়িত্বের বিষয়। কারণ দেশের মানুষ আমাদের ওপর ভরসা করেছে। একটি সফল অভ্যুত্থান করার পর সরকার পরিচালনার জন্য তারা আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে, ভরসা করেছে আমরা সেটি বাস্তবায়নে যতটা কাজ করতে পারি- সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি।

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রভাবে দেশের ফুটবল শুধু পিছিয়েছে। ক্রিকেট এগিয়ে গেলেও সঠিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। ফুটবল খেলাকে আবারো আগের জায়গাতে ফেরাতে আপনার পদক্ষেপ কী হবে?
আসিফ মাহমুদ: পূর্বের জায়গা নয়, কারণ সেটি বেঞ্চমার্ক হতে পারে না। ফুটবল হোক আর ক্রিকেট আমরা আগের জায়গা থেকে ভালোর দিকে  যেতে চাই। এইজন্য আমাদের কাঠামোগত সংস্কারগুলো করতে হবে। যেভাবে ক্রীড়াঙ্গনে নানা অনিয়ম চলে এসেছে এটি শুধু ১৬ বছর নয়, ৫০ বছর ধরে আমি মনে করি এখন প্রতিটি স্থানেই সংস্কার প্রয়োজন। শুধুমাত্র সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এমন নয়, বাইরে সভা-সেমিনারে বলা হচ্ছে সংবিধান পরিবর্তনের কথা। সংবিধান নিয়ে আলোচনাটা বেশি হচ্ছে। কিন্তু কাজ করতে এসে দেখছি যে, একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে একটি উপজেলার মাঠ থেকে শুরু করে আমার মন্ত্রণালয় পর্যন্ত প্রতিটি জায়গাতে কাঠামোগত এবং একই সঙ্গে ব্যক্তির পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রতিটি জায়গাতেই আমরা কাজ করবো।

সংস্কারে কি কি কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে?
আসিফ মাহমুদ: এরই মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা সার্চ কমিটি গঠন করে দিয়েছি ফেডারেশনগুলোকে সংস্কারের প্রস্তাবনা দেয়ার জন্য। এ ছাড়াও একটি স্পোর্টস ইনিস্টিটিউট গঠনের প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি যেন আমরা পিক পারফরম্যান্স ডেভেলপ করার জন্য যেন প্লেয়ারদের সহযোগিতা করতে পারি। আমরা ফেডারেশনগুলোকে নিয়ে কাজ করছি,  দেখতে পাচ্ছেন যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও (বিসিবি) পরিবর্তন শুরু হয়েছে। আরও হবে, বিশেষ করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পরিবর্তন নিয়ে আমরা পরিকল্পনা করছি।

ফুটবল ও ক্রিকেটে ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্লাবের সংখ্যা অনেক। অভিযোগ রয়েছে বিশেষ করে ক্রিকেটে এক ব্যক্তির অধীনেই রয়েছে ৪০টির মতো ক্লাব। তারা এখন নেই, সেখান থেকে এই ক্লাব ও ক্রিকেটারদের অভিষ্যৎ কী হবে?
আসিফ মাহমুদ: বিসিবি’র যারা নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের সঙ্গে আমার প্রথম কথাই ছিল যে, গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করা। আর গঠনতন্ত্র অনুসারে একটি গাইডলাইন তৈরি করে দেয়া যেন একক কোনো ব্যক্তি এখানে কর্তৃত্ব করতে না পারে। আমার কাজের জন্যই বিসিবি’র গঠনতন্ত্র পড়তে হয়েছে। দেখেছি সেখানে কীভাবে এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা অনিয়ম করা হয়েছে। ভোটের ক্ষেত্রে তো কিছু ক্লাবকে দু’টি করে ভোট দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। যে কারণে গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে গাইডলাইনও দিতে হবে যেন অন্য কোনো ব্যক্তি এসে এমন অনিয়ম করতে না পারে। কারও একক ক্ষমতা সেখানে না চলে। আর এমন নিয়ম করা হোক যেন বিসিবিতে কেউ দুইবারের বেশি সভাপতি হতে না পারেন।

বিসিবিতে দুর্নীতির বিষয়ে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে?
আসিফ মাহমুদ: আমি বিসিবি’র সভাপতি ফারুক আহমেদকে বলেছি যেখানে যেখানে দুর্নীতি হয়েছে তা খুঁজে বের করতে। বিশেষ করে বিসিবিতে আমরা বিভিন্ন সময় নানারকম দুর্নীতির কথা শুনি সেগুলোকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। ইতিমধ্যেই বিসিবি’র সভাপতি এ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছেন।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে কোথায় কোথায় সংস্কার প্রয়োজন?
আসিফ মাহমুদ: সব জায়গাতে সংস্কার করতে হবে। বিশেষ করে সবার আগে গঠনতন্ত্রে বড় পরিবর্তনটাই আনা দরকার।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের কোন জয়টি স্মৃতিতে আছে?
আসিফ মাহমুদ: জয়ের চেয়ে একটি পরাজয়ই আমার স্মৃতিতে বেশি গেঁথে আছে। ২০১৫তে যে ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপে হেরে গেলাম সেই ম্যাচটা আমি কখনো ভুলতে পারবো না। আর দারুণ জয়তো গতকালই (পাকিস্তানের বিপক্ষে) আরও একটি পেলো।

No comments

Powered by Blogger.