গাজীপুর-আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভ, অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ

বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল দিনভর গাজীপুর ও আশুলিয়ায় সড়ক অবরোধ করে  বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা। এতে সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও শিল্প পুলিশ সদস্যরা যৌথভাবে কাজ করেন। আশুলিয়ার ছোট-বড় অন্তত ৬০টি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, আশুলিয়ায় বিভিন্ন দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে  পোশাক শ্রমিকরা। শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে প্রায় অর্ধশতাধিক তৈরি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও শিল্প পুলিশ সদস্যরা যৌথভাবে কাজ করেছেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো পর্যন্ত সড়কের উভয়পাশে অবস্থিত এসব কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।

শিল্প পুলিশ জানায়, সকালে যথানিয়মে কারখানায় যায় শ্রমিকরা। কিন্তু কাজ না করে বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ শুরু করলে কর্তৃপক্ষ একের পর এক কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। পরে শ্রমিকরা বেরিয়ে চালু কারখানাগুলোর সামনে গিয়ে বিক্ষোভ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে সেসব কারখানাতেও ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ।

সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অন্তত শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার ছোট-বড় অন্তত ৬০টি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জিরাবো এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হলেও বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন শ্রমিকরা। এতে করে সড়কটিতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে শিল্প পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা। শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের জিরাবো এলাকা পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে হামীম, শারমীনসহ অন্তত ৬০টি কারখানা কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শ্রমিকরা উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। পরে কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে জানান, গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পোশাক কারখানার চাকরিচ্যুত ও চাকরি প্রত্যাশীরা। এতে ঘণ্টাখানেকের জন্য ওই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। সকালে গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস ও সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় কয়েকটি গার্মেন্টসের চাকরিচ্যুত শ্রমিক ও বেকার যুবকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয় এবং দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। পরে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। ভোগড়া বাইপাস এলাকায় সড়ক অবরোধ ও আন্দোলনের জের ধরে আশপাশের কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে গাজীপুরের রাজন্দ্রেপুর এলাকায় ইউনি হেলথ্‌ ফার্মাসিউটিক্যালস ওষুধ উৎপানদকারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা ২১ দফা দাবিতে আন্দোলন করেছেন। এ সময় তারা বেতন বৈষম্য দূর করাসহ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে জানায়।

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছেন আরএকে সিরামিক কারখানার শ্রমিকরা। বুধবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর বাজার এলাকায় এ বিক্ষোভ করেন তারা। প্রতি বছর ইনক্রিমেন্ট প্রদান ও ভারতীয় কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিতে সকাল ৬টায় শ্রীপুর উপজেলার ধনুয়া এলাকায় আন্দোলন শুরু হয়। পরে সকাল ৭টায় তারা কারখানার সামনে  মহাসড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনরত শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দাবি পূরণে আশ্বস্ত করলে বেলা ১১টায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার সকাল থেকে শ্রীপুর উপজেলার ধনুয়া এলাকায় আরএকে সিরামিক বিডি লিমিটেডের শ্রমিকরা ১১টি দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে। ভারতীয় কর্মকর্তাদের অপসারণ, শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সঠিক কর্মচারী নিয়োগ, প্রতি বছর ইনক্রিমেন্ট নিশ্চিত করাসহ ১১টি দাবি জানানো হয়েছে।

শ্রমিকরা জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে একাধিকবার কোম্পানি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সমাধানে আসেননি। গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর শ্রীপুর ক্যাম্পের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আজিজুল হক জানান, বুধবার সকাল থেকেই কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন করছিল শ্রমিকরা। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে তারা মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান।

No comments

Powered by Blogger.