অবৈধপথে ইতালি যাত্রা, মাদারীপুরের ৬ যুবক নিখোঁজ
সরজমিন ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সংসারের সচ্ছলতার জন্য ৭ মাস আগে অবৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া যান মিলন ও আল-আমিন মুন্সী। একইসঙ্গে ছিল একই গ্রামের শাহীন মাতুব্বর, শান্ত খান, মনির হোসেন ও জাফর মিয়াসহ ৬ জন। ৪ মাস ধরে দুই ভাই মিলন মুন্সী ও আল-আমিন মুন্সীর সঙ্গে তার পরিবারের সব যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যায়। কয়েক মাস আগে মিলন ও আল-আমিন মুন্সী লিবিয়ায় দালালদের অবরুদ্ধ ঘর থেকে বের হয়ে একটি নৌকাযোগে ভূমধ্য সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি রওনা দেন। মঙ্গলবার রাতে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন নৌকার তলা ফেটে সাগরে নৌকা ডুবে বেশকিছু লোকজনসহ মিলন ও আল-আমিন মুন্সী মারা যান। ভুক্তভোগী নিখোঁজ মিলন ও আল- আমিনের বাবা সিরাজ মুন্সী জানান, গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর আমার দুই ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য আমাদের কাছ থেকে মোট ৩০ লাখ টাকা নেয়। ৭ মাস ধরে আমার দুই ছেলেকে সে কোথায় পাঠিয়েছে তার কোনো খোঁজ-খবর সঠিকভাবে দিতে পারেননি। তার কাছে বারবার আমার দুই ছেলের খোঁজ-খবর জানতে চাইলে সে কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। ফরহাদ মাতুব্বর আমার দুই ছেলের কোনো খোঁজ না দিয়ে এই পর্যন্ত বিভিন্ন তালবাহানা করে আসছে। আমার দুই ছেলেকে মৃত অথবা জীবিত ফেরত চাই। আমার আর কিছু চাওয়া-পাওয়ার নাই।
নিখোঁজ মিলন ও আল-আমিনের মা মায়া বেগম বলেন, মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর ইতালি নেয়ার প্রলোভন দেয়। এতে ধারদেনা করে ৩০ লাখ টাকা দালালের হাতে দেই। এখন ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
নিখোঁজ দুই ভুক্তভোগীর খালাতো ভাই মানিক জানান, মিলন ও আল- আমিন লিবিয়া গেমস ঘর থেকে বের হয়ে একসঙ্গে ভূ-মধ্য সাগরে একই সঙ্গে তিনটি নৌকা পাড়ি দেয়। পথিমধ্যে তাদের নৌকার তলা ফেটে ডুবে গিয়ে নৌকায় থাকা সকলে নিঁখোজ হন। ওই নৌকায় আমার দুই খালাতো ভাইও ছিল। তাদের মৃত্যুর খবরটি মাদারীপুরের আরেক এক যুবক দেশে এসে আমাদের জানিয়েছে। সে অন্য নৌকায় ছিল। সেই নৌকার যাত্রীরা সবাই ধরা খেয়ে দেশে ফিরে এসেছে। সে দেশে ফিরে আমাদের জানিয়েছে মিলন আর আল-আমিন আর নেই। নিখোঁজ মিলন মুন্সীর স্ত্রী ফাতেমা আক্তার বলেন, আমার স্বামী ও দেবর একসঙ্গেই ছিল। রাতে একজন খবর দিয়েছে তারা মারা গেছে। শুধু তারা দু’জনেই নয়, একইসঙ্গে আরও ৪ জন ছিল। তারাও নিখোঁজ। এই একই এলাকার ৬জন নিখোঁজ। আমাদের সঙ্গে ৪ মাস ধরে কোনো যোগাযোগ নেই।
নিখোঁজ শান্ত খানের মা বলেন, আমার ছেলেকে ফরহাদ চেয়ারম্যান লোভ দেখিয়ে নিয়েছে। গত ৪ মাস তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। মঙ্গলবার থেকে শুনি আমার ছেলেসহ ৬ জন মারা গেছে। আমি এর বিচার চাই। তবে ঘটনার পর থেকে আদম দালাল ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর পলাতক রয়েছে। এ ব্যাপারে ডাসার থানার ওসি এসএম শফিকুল ইসলাম জানান, আমরা বিষটি জেনেছি। ভুক্তভোগীর বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছি। মিলন ও আল-আমিনের নিহতের খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডাসারের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, ডাসারে কয়েকজন নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
No comments