আড়াই বছরে হয়নি, আড়াই হাজার বছরেও হবে না

অধস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য আলাদা শৃঙ্খলা ও চাকুরিবিধির গেজেট জারির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ ফের সময় আবেদন করায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। সোমবার ১৬তম বারের মতো সময় আবেদন করলে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এখানে কোনো গেজেট দেখছি না। এটা কী? এটা তো সময় আবেদন।’ এ সময় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের উদ্দেশে বলেন, ‘সারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর কোনটি, নিউইয়র্ক না টোকিও? আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর ঢাকা। সুপ্রিম কোর্ট থেকে বঙ্গভবন ও গণভবনের দূরত্ব কয়েক লাখ কিলোমিটার। আড়াই বছরেও পাড়ি দেয়া হয়নি। আড়াই হাজার বছরেও সম্ভব হবে না? আড়াই বছর ফাইল চলাচলে সময় লাগে। আপনি কী বলতে চাচ্ছেন?’ এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘সময় চাচ্ছি।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, 'আড়াই বছরে এখান থেকে ওইখানে ফাইল চালাচালির সময় লেগেছে কিন্তু গেজেট জারি করা সম্ভব হয়নি। সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এ বিষয়ে আইন করার জন্য।' আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহাব মিয়া এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'বন্ধের আগে আপনাকে লম্বা সময় দেয়া হয়েছিল। তখন আপনি আমাদের কি বলেছিলেন? আবারও সময় চেয়ে আবেদন দাখিল করলেন?' পরে আদালত এক সপ্তাহ সময় দিলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আবার তাহলে সময় চাইতে হবে।’ এ সময় আদালত বলেন, ‘দুই সপ্তাহ, দুই মাস বা দুই বছর সবই আপনার কাছে এক।
শব্দও একই।’ সোমবার রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশে ফের দুই সপ্তাহ সময় আবেদন করেন। আবেদন মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এক সপ্তাহ সময় দেন। এ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ গেজেট জারির জন্য ১৬ দফা সময় নিল। গত বছরের ২৮ আগস্ট থেকে ৮ মে পর্যন্ত আদালতের কাছ থেকে এ সময় নেয়া হয়। এর আগে গত ৪ এপ্রিল শুনানির শুরুতে যথারীতি দুই সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন দাখিল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। পরে আদালত ৮ মে পর্যন্ত সময় দেন। ৪ এপ্রিল ১৫তম বার রাষ্ট্রপক্ষ সময় আবেদন করলে প্রধান বিচারপতি সে সময়ও বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, 'আমরা সব সময় আপনার হাসি মুখ দেখতে পাই। কিন্তু এই একটা মেটার আসলেই আপনি আদালতে মাথা নিচু করে থাকেন। কী কাগজপত্র দিলেন সেটাও বলেন না।' এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বারবার সময় চেয়ে আবেদন দেয়াতে আমার মধ্যেও 'অপরাধবোধ' কাজ করে। সে সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, 'আপনি অপরাধ বোধ করবেন কেন? রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্রপতি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তার দোহাই দিয়ে আপনারা বারবার সময় নিচ্ছেন। যখন তার মতো একজন ভদ্রলোকের দোহাই দেন তখন আমাদের কষ্ট লাগে। এরপর আদালত গেজেট প্রকাশে ৮ মে পর্যন্ত সময় দিয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.