স্যাটেলাইট নিয়ে বিদেশী কোম্পানিগুলোর দৌড়ঝাঁপ by কাজী সোহাগ

দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের কাজ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে বিদেশী কোম্পানিগুলো। এরই মধ্যে তারা সরকারের সর্বোচ্চ মহলে যোগাযোগ করেছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন তারা। সব মিলিয়ে কাজ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দরপত্র জমা দেয়া বিদেশী কোম্পানিগুলো। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকও হয়েছে। ওদিকে ২রা জুন দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন থাকলেও তা আবারও বাড়ানো হয়েছে। নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ই জুন। বিটিআরসি জানিয়েছে, এ সময়ের মধ্যে আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানি দরপত্র জমা দিতে পারে। কয়েকটি কোম্পানি এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চার দেশের ছয়টি কোম্পানি দরপত্র জমা দিয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কানাডা ও ফ্রান্স। এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির মুখপাত্র সারোয়ার আলম গতকাল মানবজমিনকে বলেন, টেন্ডার জমা দেয়ার সময় বাড়ানো হয়েছে। আসলে এত বড় কাজে শুরুতে যেন কোন ভুল না হয় সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। হয়তো আরও কিছু কেম্পানি এরই মধ্যে দরপত্র জমা দেবে। দরপত্র জমা দেয়া শেষ হলে সব দরপত্র মূল্যায়ন করে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হবে। দরপত্র আহ্বান করার পর থেকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা বিটিআরসির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিটিআরসি জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হলে দেশসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি দেশ টেলিযোগাযোগ ও সমপ্রচার সেবা দেয়ার জন্য জিয়োসিক্রোনাস স্যাটেলাইট সিস্টেমের (৪০টি ট্যান্সপন্ডার, ২৬ কেইউ ব্যান্ড, ১৪ সি ব্যান্ড) গ্রাউন্ড সিস্টেমসহ সব ধরনের সেবা দেবে। দরপত্রের আওতায় স্পেস সিগমেন্ট, লঞ্চ সার্ভিস, গ্রাউন্ড সিগমেন্ট ও উৎক্ষেপণের এক বছর পর্যন্ত বীমা সুবিধা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এ কাজে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে দরপত্র শর্তে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মহাকাশের বিভিন্ন রেখায় স্থাপন করা ৬৯টি দেশের শতাধিক স্যাটেলাইট যোগাযোগ ও সমপ্রচার এবং গোয়েন্দাগিরির কাজ করে যাচ্ছে। নিজেদের স্যাটেলাইট না থাকায় বাংলাদেশের ওপর বিদেশী ৫টি স্যাটেলাইট ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্বের ৪৫টি দেশের মহাকাশে নিজস্ব স্পেস রয়েছে। তাদের আকাশে অন্য কোন দেশের স্যাটেলাইট নেই। ৫০টি দেশ অন্য দেশের সহযোগিতায় স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। ১১টি দেশ নিজস্ব ব্যয়ে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। এসব দেশের শতাধিক স্যাটেলাইট বিষুবরেখা, মেরুবিন্দু বা ক্রান্তীয় অঞ্চল অথবা বিভিন্ন কৌণিক পথে পরিভ্রমণ করছে। যোগাযোগ মাধ্যমের স্যাটেলাইটগুলো সাধারণত বিষুবরেখার ওপর স্থাপন করা হয়। কক্ষপথের এ স্থানে স্যাটেলাইট স্থাপন করলে পরিচালন ব্যয় অনেক কম। তাই উন্নত দেশগুলো এ কক্ষে একটার পর একটা যোগাযোগ স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। এর আগে বিটিআরসি বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের জন্য অরবিটাল স্লট ইজারা নিতে চুক্তি করে। চুক্তির আওতায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপনে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্লটের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারস্পটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনসকে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা দেবে বিটিআরসি। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) দুই হাজার ৯৬৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। এর মধ্যে এক হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে। দাতা সংস্থা দেবে এক হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। বিডার্স ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে এ প্রকল্পের অর্থায়নের ব্যবস্থা করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) নিজস্ব জমিতে দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.